ট্রাম্পের শুল্ক এখনো টেনে চলেছে ইইউ

প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০৯:২৮:৫৪

ট্রাম্পের শুল্ক এখনো টেনে চলেছে ইইউ

প্রজন্মনিউজ ডেস্ক:-ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য লড়াইয়ের অবসান ঘটার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হওয়ার আট মাস পরও অবস্থার কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা ফার্স্ট নীতি যেন এখনো বহাল আছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কের বোঝা টেনে চলেছে ইউরোপ। আটলান্টিকের দুপারের মধ্যে সম্পর্ক আগের অবস্থায় ফেরেনি।

ইউরোপিয়ানরা আশা করেছিল তাদের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ট্রাম্পের আরোপ করা আমদানি শুল্ক বাইডেন প্রত্যাহার করবেন। ‘জাতীয় নিরাপত্তার’ কারণ দেখিয়ে ট্রাম্প ২০১৮ সালে ঐ শুল্ক আরোপ করেন। যদিও এটি জাতীয় নিরাপত্তার মধ্যে পড়ে কি না, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই বিতর্ক ছিল। বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জন্য যথেষ্ট সংবেদনশীল। তাই বাইডেন সম্ভবত ধীরে চলার নীতি অনুসরণ করছেন।

ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম কারখানায় কাজ করা কম্যুনিটির একটি বড় অংশের বাস ওহাইও ও পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যে। শুল্ক প্রত্যাহার করলে তাদের সমর্থন হারাবেন বাইডেন। ট্রাম্পের সময় ইইউর অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের জন্য শুল্কের বিষয়ে তারা কিছু করতে পারেনি। ট্রাম্পের সময় ইইউ শুল্ক আরোপের তীব্র বিরোধিতা করলেও এখন মনে হচ্ছে অনিচ্ছার সঙ্গেই তাদের এ ব্যবস্থা মেনে নিতে হচ্ছে।

মার্কিন-ইইউ কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে এখন বিবাদের পরিবর্তে মানিয়ে নেওয়ার একটি প্রবণতা কাজ করছে, ইইউর একজন বাণিজ্য কূটনীতিক সম্প্রতি এ মন্তব্য করেছেন। আটলান্টিকের উভয় পাড়ে সহযোগিতার লক্ষ্যে গঠিত ট্রেড অ্যান্ড টেক কাউন্সিলের প্রথম সম্মেলন ২৯ সেপ্টেম্বর ব্রাসেলসে হয়।

ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের কর্মকর্তারা ট্রাম্প যুগে সৃষ্ট ক্ষত সারানোর পরিবর্তে যেমন রোবোটিক্স, মাইক্রোচিপ ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের মতো ইস্যুর দিকে দৃষ্টি দেন। ট্রাম্পের সময় ইইউর বক্তব্য ছিল, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ২৭ জাতি জোটটি সন্তুষ্ট হবে না। ইইউর সাবেক প্রধান বাণিজ্য কর্মকর্তা সিসিলিয়া ম্যালস্ট্রম ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ‘এই শুল্ক মিত্রদের মুখে এক চপেটাঘাত। ইইউর উচিত সম্মিলিতভাবে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো’। তার উত্তরসূরি ভালডিস দমব্রোভস্কি এক্ষেত্রে অইেশ নমনীয় দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন।

তিনি মনে করেন আটলান্টিকের দুই পাড়ের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কিছু করা উচিত নয়। বাইডেন যে তার দলের একটি অংশের পক্ষ থেকে শুল্ক বিষয়ে কোনো ছাড় না দেওয়ার জন্য চাপের মুখে আছেন ব্রাসেলস সেটি উপলব্ধি করে। বিশেষ করে, মধ্যবর্তী নির্বাচনের আগে তার পক্ষে এ বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়।

ইউরোপিয়ান কমিশনের বাণিজ্য বিভাগের ইইউ-মার্কিন সম্পর্ক বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছেন রুপার্ট শ্লেগেলমিচ। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘স্পষ্টতই এগুলো কিছু কঠিন ইস্যু, আমার প্রশ্ন এ বিষয়ে আপনি আসলে ঠিক কী করতে পারেন। একজন মার্কিনির দৃষ্টিতে দেখলে আপনাকে আপনার ইস্পাত বা গৃহ নির্মাণ শিল্প টিকিয়ে রাখতে হয় বিদ্যমান উত্সগুলো বেশি করে ব্যবহার করতে হবে অথবা এমন কিছু করতে হবে, যা ইউরোপিয়ানদের স্বার্থের প্রতিকূলে যাবে। চীনের ইস্পাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে উভয় পক্ষ একটি চুক্তি করতে পারে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যে সম্পর্ক যেমন উন্নত হবে তেমনি চীনও একতরফাভাবে ইস্পাতের দাম নির্ধারণ করতে পারবে না।

তা ছাড়া এটি আটলান্টিকের উভয় পাড়ে পরিবেশ সম্মত ইস্পাতশিল্পের সূচনা করতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য দমব্রোভস্কি সম্প্রতি ওয়াশিংটন সফর করেছেন। সফর শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডাকে নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা আমরা করছি। চুক্তিটি ইউরোপেরও কাজে আসবে। বাস্তবতা হলো, প্রত্যেক পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান থেকে চুক্তির বিষয়বস্তু ঠিক করতে চাইছে।

কানাডা ও মেক্সিকোর কথা যদি ধরি, আমদানির পরিমাণ পর্যবেক্ষণে রাখার শর্তে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সালে ঐ দেশ দুটোর ওপর থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমাদনি শুল্ক স্থগিত করে। তাত্ত্বিকভাবে এটি কোনো রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বা কোটা আরোপ নয়। বরং যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদার দেশ দুটোকে নিজেদের আমদানির পরিমাণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় ধরে রাখতে হবে।
প্রজন্মনিউজ২৪/কে.জামান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ