কোম্পানির কমিশনে অসন্তোষ রাইডাররা

অ্যাপে নয় চুক্তিতে রাইড শেয়ারে আগ্রহী রাইডাররা

প্রকাশিত: ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০৩:১৭:৪৫ || পরিবর্তিত: ১৫ অক্টোবর, ২০২১ ০৩:১৭:৪৫

অ্যাপে নয় চুক্তিতে রাইড শেয়ারে আগ্রহী রাইডাররা

মোঃ নজরুল ইসলাম রাজন, নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অ্যাপ-ভিত্তিক সেবা হিসাবে রাজধানীতে ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়। যানজটে নাকাল রাজধানীতে অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠে অ্যাপ-ভিত্তিক সেবাটি। ২০১৮ এর  মার্চ মাস পর্যন্ত শুধু পাঠাওয়ের ব্যবহারকারী সংখ্যা ১ মিলিয়ন অতিক্রম করে। এছাড়া আমার রাইড, উবার এবং বাহনসহ কয়েকটি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান রাজধানীতে সেবা দিয়ে আসছে। 

যাত্রী সংখ্যার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রাইডারের সংখ্যা। প্রতিষ্ঠানগুলোও যাত্রী আকর্ষণে দিতে থাকে নানা অফার। কিন্ত অ্যাপ সেবাকে পাশ কাটিয়ে রাইডাররা শুরু করেন‘চুক্তিতে’রাইড শেয়ারিং। তাই অ্যাপ ব্যবহার করে সেবা নিতে পারছেন না যাত্রীরা। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের রাইডাররা চুক্তিভিত্তিক  রাইড শেয়ারিং করেন ।
যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারে যেতে চাইলেও রাইডাররা রাজি নন। এর কারণে প্রতিষ্ঠিত রাইড শেয়ারিং কোম্পানির অ্যাপ ব্যবহারে যাত্রীরা আর আগ্রহ পাচ্ছেন না।  
  
 এদিকে চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ার করতে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে মোটরসাইকেল রাইডারদের জটলা দেখা যায়। তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথচারীকে ‘ভাই যাবেন নাকি’বলে ডাকেন।


অ্যাপের মাধ্যমে রাইড শেয়ারিং সেবা নিরাপদ ও সাশ্রয়ী ছিল। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবা হওয়ায় তা অনিরাপদ এবং ব্যায়বহুল হয়েছে।

তারা আরও জানান, অ্যাপে কল দিলে রাইডাররা তা রিসিভ করে ঠিকই কিন্তু তারা বলে কল কেটে দিয়ে চুক্তিভিত্তিক যাবে। তারা অ্যাপের কলে যাবে না। যাত্রী রাজি না হলে তারা যাবেন না বলে জানিয়ে দেন।  কোনো যাত্রী অতি জরুরি প্রয়োজনে রাজি হলে তাকে অ্যাপে যা ভাড়া তার চেয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে হয়।
  
রাজধানীর মগবাজারে পাঠাওয়ের অ্যাপে কল দিয়ে  রাইডারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রী মোঃ রাজিব।  তিনি বলেন, আমি শাহাবাগ যাব। একজন রাইডারকে অ্যাপের মাধ্যমে কল দিয়েছিলাম, তখন অ্যাপে ভাড়া ৬০ টাকা দেখিয়ে ছিল। রাইডার কল রিসিভ করে আমাকে বলেন যে তিনি অ্যাপের মাধ্যমে যেতে পারবেন না, চুক্তিভিত্তিক ভাড়ার মাধ্যমে যাবেন। এজন্য তাকে ১০০ টাকা দিতে হবে। ভাড়া বেশির কারন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজি হলে চলেন, না হলে রাস্তা মাপেন। 

তিনি বলেন, পরে আমি মগবাজারে দাঁড়িয়ে থাকা চুক্তিভিত্তিক রাইডারদের কাছে গিয়ে বললাম শাহাবাগ যাব। তারা ১৫০ টাকা ভাড়া চায়।
 

রাজধানীর মৌচাক এলাকায় চুক্তিভিত্তিক মোটরসাইকেল রাইডারদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে তর্কে জড়িয়ে পড়েন অফিসগামী যাত্রী মো. নুর হোসেন। তিনি বলেন, অফিসের একটা জরুরি কাজে দ্রুত যেতে চেয়েছিলাম। অ্যাপে কল দিলে রাইডার আসতে দেরি হবে বলায় চুক্তিভিত্তিক যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু এরা অ্যাপের থেকে অনেক বেশি টাকা ভাড়া  চাইছে। অ্যাপে যেখানে ভাড়া আসে দেড়শ, তারা চাইছে আড়াইশ টাকা। আর অফিস টাইম হলে তা “মরার উপর খাঁড়ার ঘা''। 

মোটরসাইকেল রাইডাররা বলছেন, অ্যাপের মাধ্যমে গেলে তাদের লাভ হয় না। যাত্রী কল পেতেও দেরি হয়। ঘণ্টা বা ২-৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যাত্রী পান না। তাই চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করছেন।

রাইডার রুবেল বলেন, অ্যাপে অনেক কম ভাড়া আসে। এ ভাড়া থেকে ২৫ শতাংশ নিয়ে নেয় কোম্পানি, এছাড়া কল না ধরতে পারলে জরিমানা করা হয় । প্রায় ৪০ শতাংশ নেওয়ার পর আর বাকি যে টাকা থাকে তা অনেক কম। এভাবে মোটরসাইকেল চালালে ঢাকায় সংসার নিয়ে আমাদের থাকা সম্ভব নয়। তাই চুক্তিভিত্তিক যাত্রী পরিবহন করি। কোম্পানির কমিশন কমিয়ে ১০ শতাংশ করলে ভালো হয় । 

আরেক রাইডার নয়ন আহমেদ বলেন, রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ার সময় রাইডার কম ছিল। অল্প ভাড়া হলেও বেশি রাইড দেওয়া যেত, দিন শেষ ভালো টাকা আয় হতো। এখন রাইডার অনেক। গ্রাম থেকে অনেক রাইডার ঢাকায় এসেছেন। ফলে একটা অ্যাপের কলের জন্য ২০-২৫ জন অপেক্ষা করে থাকে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে চুক্তিতে যাই। না হলে সারাদিনে ১ হাজার টাকা আসে এর থেকে কোম্পানিকে ৩৫০/৪০০ দিতে হয়। চুক্তিভিত্তিকে ১৮০০- ২৫০০ পর্যন্ত আয় হয়।

অন্যদিকে যাত্রী ও সচেতন নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চুক্তিভিত্তিক রাইড শেয়ারিং সেবার কারণে রাজধানীতে ঘটছে অনেক দুর্ঘটনা। ঘটছে ছিনতাই, নানারকম হয়রানির সাথে থাকছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। অ্যাপ এ নিবন্ধন না থাকায়  কোনো নির্জন স্থানে নিয়ে চালক যেমন যাত্রীর ক্ষতি করতে পারে, তেমনি চালকও যাত্রীর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে । 

প্রজন্মনিউজ২৪/নজরুল
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ