ইসলামের দৃষ্টিতে শরীরে উল্কি আঁকার বিধান

প্রকাশিত: ০৩ অক্টোবর, ২০২১ ০১:০৯:১৭

ইসলামের দৃষ্টিতে শরীরে উল্কি আঁকার বিধান

প্রজন্মনিউজ ডেস্ক:-বর্তমান যুগের উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে শরীরে উল্কি আঁকার প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার জন্য ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে, তাদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া পছন্দের বিভিন্ন তারকাকে অনুসরণ করতে গিয়ে অনেকেই শরীরে উল্কি আঁকছে।

মানুষের শরীরের চামড়ায় মোট সাতটি স্তর থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় স্তরের চামড়ায় সুই বা এজাতীয় কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত করে তাতে বাহারি রং দিয়ে নকশা করাকে উল্কি বা ট্যাটু বলে। শরীরের বিভিন্ন স্থানের পাশাপাশি মুখ, কানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানেও ট্যাটু করতে দ্বিধা বোধ করে না অনেকে।

শরীরে উল্কি বা ট্যাটু আঁকার মতো এই উদ্ভট কাজটি ১৯৭০-এর দশকে পশ্চিমা বিশ্বে জনপ্রিয়তা পেলেও এর প্রচলন শুরু হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩৭০-এর দিকে। সম্প্রতি জার্মানির একটি জরিপে উঠে এসেছে, ৩৫ বছরের কম বয়সী প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের গায়ে ট্যাটু আঁকা আছে। এটি তো অমুসলিমদের অবস্থা। মুসলমানদের মধ্যেও কিছু অবুঝ লোক পবিত্র কলেমাসহ কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন বাণী ট্যাটু আকারে নিজেদের শরীরে আঁকছে! তারা হয়তো ধারণা করছে যে তারা হালাল ট্যাটু আঁকার মাধ্যমে ইসলামী পদ্ধতিতে নিজেদের শখ পূরণ করছে। নিজেদের সুন্দর দেহটিকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে নিচ্ছে। অথচ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম কাঠামো দিয়ে।’ (সুরা ত্বিন, আয়াত : ৪)

মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক সৌন্দর্য নষ্ট করে কৃত্রিমভাবে এ ধরনের বিকৃত সৌন্দর্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা ইসলামে নিষিদ্ধ ও গর্হিত। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে শরীরে ট্যাটু বা উল্কি আঁকা বেশির ভাগ ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞের দৃষ্টিতে হারাম। তাঁরা বলেছেন, যেসব উপায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সৃষ্ট অঙ্গে পরিবর্তন আনা হয়, তার সবই নিষিদ্ধ। আলাদা চুল লাগানো, ভ্রু প্লাক করা, চোখে আলাদা পালক লাগানো ইত্যাদি ইসলাম অনুমোদন করে না।

আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) এমন সব নারীর ওপর অভিসম্পাত করেছেন, যারা অঙ্গে উল্কি আঁকে ও অন্যকে দিয়ে উল্কি আঁকায় এবং সৌন্দর্যের জন্য ভ্রুর চুল উপড়িয়ে আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৮২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যেসব নারী নকল চুল ব্যবহার করে, যারা অন্য নারীকে নকল চুল এনে দেয় এবং যেসব নারী উল্কি অঙ্কন করে ও যাদের জন্য করে, রাসুল (সা.) তাদের অভিশাপ দিয়েছেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৫৯)

হাদিস শরিফে নারীদের নির্দিষ্ট করে বলার কারণ হলো, আগেকার যুগে নারীরাই বেশি উল্কি অঙ্কন করাত। বর্তমান বিশ্বেও উল্কি অঙ্কনে নারীদের হার বেশি। সমীক্ষায় পাওয়া যায়, বিশ্বের ৫৮ শতাংশ নারীর শরীরে অন্তত একটি ট্যাটু বিদ্যমান, সে তুলনায় পুরুষের শতাংশ ৪১।

মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজ করা থেকে সবাইকে বিরত রাখুক, যার ওপর প্রিয় নবী (সা.) অভিসম্পাত করেছেন। যারা এই কাজকে পেশা হিসেবে নিয়েছে, তাদের উচিত ভিন্ন পেশা অবলম্বন করা। কারণ রাসুল (সা.) এ কাজের সহযোগীদেরও অভিশাপ দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইবনে উমর (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) যে নারী কাউকে পরচুলা লাগিয়ে দেয়, যে লাগাতে বলে, যে উল্কি আঁকায় এবং যে এঁকে দেয়, তার প্রতি অভিসম্পাত করেছেন।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৫২৫১)

নাউজুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ সবাইকে এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন।
সূত্র:কালেরকণ্ঠ
প্রজন্মনিউজ২৪/কে.জামান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ