তালেবান প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১১:২৫:২০

তালেবান প্রধানমন্ত্রীর সাথে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক

প্রজন্মনিউজ ডেস্কঃ আফগানিস্তান সফররত কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল-সানি আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন প্রধানমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দের সাথে বৈঠক করেছেন।


রোববার রাজধানী কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।


এর আগে তালেবানের পুরো আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর রোববার বিদেশী সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম কোনো প্রতিনিধি হিসেবে কাবুল আসেন কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মাদ নাঈম এক টুইটার বার্তায় জানান, কাতারের প্রতিনিধি দলের সাথে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজউদ্দিন হাক্কানি উপস্থিত ছিলেন।


নাঈম জানান, সাক্ষাতে দুই পক্ষ মানবিক সাহায্য, আফগানিস্তানের উন্নয়ন কার্যক্রমের ভবিষ্যত এবং ইসলামি আমিরাত আফগানিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন।


বৈঠকে দুঃসময়ে আফগান জনগণের পাশে থাকার জন্য কাতারের সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান আফগান প্রধানমন্ত্রী।


২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আফগানিস্তানে আশ্রয়ে থাকা আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।


তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।


বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।


তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে।


এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।


২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়।


তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে।


দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।


মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুসারে ৩১ আগস্ট আফগানিস্তান থেকে বহুজাতিক বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের ডেডলাইন থাকলেও ৩০ আগস্ট সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহার সম্পন্ন হয়।


মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।


এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।


৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে পৌঁছে যায় তালেবান যোদ্ধারা। তালেবানের অগ্রসরে আশরাফ গনির কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার জেরে আফগান প্রশাসন ভেঙে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা।


তবে কাবুলের উত্তরের দুর্গম পাঞ্জশির প্রদেশ শুধু তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গিয়েছিলো। আফগানিস্তানে রুশ আগ্রাসন প্রতিরোধ যুদ্ধের কিংবদন্তি যোদ্ধা আহমদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমদ মাসুদের নেতৃত্বে তালেবানবিরোধী বিদ্রোহী যোদ্ধারা এই উপত্যকায় অবস্থান নিয়েছিলো।


৬ সেপ্টেম্বর পাঞ্জশির নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো আফগানিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে তালেবান। এর পর ৭ সেপ্টেম্বর নতুন আফগান সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয় দলটি।

সূত্র : পার্স টুডে
প্রজন্মনিউজ২৪/ইমরান হোসাইন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ