চিকিৎসক কাজী সাবিরা হত্যার রহস্য এখনো অন্ধকার

প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১০:৩৩:০৮

চিকিৎসক কাজী সাবিরা হত্যার রহস্য এখনো অন্ধকার

প্রজন্মনিউজ ডেস্কঃ রাজধানীর কলাবাগানে নিজের শয়নকক্ষে খুন হন চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান (লিপি)। কিন্তু তিন মাসেও চাঞ্চল্যকর সেই খুনের কোনো রহস্যই উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। কারা, কী কারণে চিকিৎসককে খুন করে লাশ পুড়িয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছে, সে ব্যপারেও কোনো ক্লু পায়নি পুলিশ।


কলাবাগান থানার ওসি জানান, ডা: সাবিরা হত্যাকাণ্ডের মামলাটি এখন তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তিনি বলেন, এর আগে দায়িত্ব ছিল কলাবাগান থানা পুলিশের। তবে বলার মতো তদন্তে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। তার পরও তদন্তের অংশ হিসেবে অনেক কিছু পাওয়া গেলেও এখনই বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমানের স্বজনদের একাধিকবার থানায় ডেকে এনে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তারা কেউই সুনির্দিষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি।


 
এ ব্যাপারে পিবিআই হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু ইউসুফ বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলার বর্তমানে তদন্ত করছে পিবিআই। এরই মধ্যে মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে। হত্যার মূল রহস্য উদঘাটনে বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে।


গত ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানে ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সনোলজিস্ট) ডা: কাজী সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করা হয়। তবে নিহতের শরীরের একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন মেলায় পুলিশ এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে জানায়। পোস্টমর্টেমেও হত্যাকাণ্ডের আলামত মেলে। খুনিরা পরিকল্পিতভাবে ডা: সাবিরাকে ঘাড়ে ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। একই সাথে খুনিরা হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করতে ও ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ডা: সাবিরার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।


ডা: সাবিরা রহমান লিপি ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। স্বামী শামসুর আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। থাকেন শান্তিনগরে। তার মায়ের বাসা পাশেই। সাবিরার দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। ছেলেমেয়ে দু’টি ওই (নানীর) বাসাতেই থাকত। ছেলের বয়স ২১। ছেলেটি কানাডা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর মেয়ের বয়স ১০ বছর। মেয়েটি কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। সাবিরা রহমান লিপির দুই ভাই রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। চট্টগ্রাম থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন লিপি। সবশেষ গ্রিন লাইফ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।


এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডা: সাবিরার পরিবারের কেউ প্রথমে মামলার বাদি হতে ইচ্ছুক ছিলেন না। পরে ১ জুন রাত ১২টার দিকে নিহতের মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল কলাবাগান থানায় হত্যা ও হত্যার আলামত নষ্টের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর ১/৯৪)। মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা হয়নি।


 
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমার বোনের লাশ দেখে ঘটনার বিষয় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, গত ৩০ মে রাত আনুমানিক ১০টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে অজ্ঞাতনামা আসামিরা আমার বোন ডাক্তার সাবিরা রহমান লিপিকে কলাবাগান থানার ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নম্বর বাসার তিনতলার ফ্ল্যাটে শয়নকক্ষে ঢুকে ছুরিকাঘাত ও গলা কেটে হত্যা করে। হত্যা ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য ও হত্যার আলামত নষ্ট করতে শরীরে ও বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ঘটনার পর নিহতের স্বজনরা সন্দেহ করেছিলেন সাবিরার সাবলেটে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মডেল কানিজ সুবর্ণা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। তার ফ্ল্যাটে অনেকেই যাতায়াত করতেন। তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানি দারাজের অনলাইনের ব্যবসাও করতেন। ঘটনার আগে ওই বাসা থেকে হাঁটতে সুবর্ণা বেরিয়ে যান। পাশাপাশি বাসায় ফিরে এসে ডা: সাবিরার কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে স্বজনদের খবর দেন সুবর্ণাই। তবে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সুবর্ণার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানায় তদন্তকারী পুলিশ। ওই বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যাকাণ্ডের বিষয় কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।

প্রজন্মনিউজ২৪/ইমরান হোসাইন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ