শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ১৭ মাস

প্রকাশিত: ১০ অগাস্ট, ২০২১ ০৫:১৯:০০

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ১৭ মাস

আগামীকাল বুধবার থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন ও মার্কেটগুলো খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ, করোনার সংক্রমণের হার যা-ই হোক, সরকার জনগণের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে আগ্রহী। কেননা লকডাউন, কঠোর কিংবা শিথিল বিধিনিষেধ—যে নামই দেওয়া হোক না কেন, কার্যকর করতে পারেনি সরকার; বরং বিধিনিষেধের কারণে অনেক সময় সড়কে, ফেরিতে, লঞ্চে ভিড়ের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

এই প্রেক্ষাপটে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, আগস্ট মাসে কতসংখ্যক শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া যাবে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কেমন থাকবে, তার ওপর নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি। এর মাধ্যমে তিনি এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিরোধী নয়। তবে সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন প্রয়োজনীয় টিকা পাওয়া যাবে এবং সংক্রমণের হার কমবে। সংক্রমণের হার না কমার পরও যখন সরকার সবকিছু খুলে দিচ্ছে, তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকি থাকবে কেন? গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, যার মেয়াদ ১৭ মাস হতে চলেছে। লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় আছেন।

শিক্ষা উপমন্ত্রী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, শ্রেণিকক্ষ বা পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আগে নির্বিকার থাকলেও অতিসম্প্রতি কিছু কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করা যাচ্ছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ১৮ বছরের ঊর্ধ্ব শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র দিয়ে টিকার আবেদন করতে পারবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭২ হাজার ২৫৭ জন এবং চিকিৎসাশিক্ষার ৩ হাজার ৬৬২ জন শিক্ষার্থীকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখনো টিকার বাইরে আছেন; যাঁদের অবিলম্বে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রায় ৯০ লাখ ডোজ (প্রায় ৪৫ লাখ শিক্ষার্থী) টিকা দেওয়া গেলে সবাইকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে জানানো হয়েছে।

পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া উচিত। তবে এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হোক। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক। সবশেষে প্রাথমিক। ৩১ আগস্টের পর যদি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে থাকে, এখনই প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রায় দেড় বছর সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সেগুলো ‘প্রায় পরিত্যক্ত’ অবস্থায় আছে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় সময় লাগবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদ, দেয়াল ও আসবাব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে মেরামতের কাজটিও সময়সাপেক্ষ।

সরকার যদি টিকা দেওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে চায়, দ্রুত টিকা সংগ্রহ করতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকা দিতে হবে। যাঁরা ইতিমধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে এক মাসের মধ্যে। যাঁরা এখনো পাননি, তাঁদের আরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। সরকার যদি বিশেষ ব্যবস্থায় রপ্তানিমুখী কারখানার শ্রমিকদের টিকা দিতে পারে, শিক্ষার্থীদের নয় কেন?

প্রজন্মনিউজ২৪/আ.আমিন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ