কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কি হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়!!

প্রকাশিত: ০৬ অগাস্ট, ২০২১ ০৬:৪১:২৫

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে কি হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়!!

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি; পৃথিবীর যত বড় বড় সভ্যতা গড়ে উঠেছে নদী তীরবর্তী অঞ্চলে এ কথাটা যেমন ঠিক তেমনি এটাও ঠিক যে সেই সভ্যতাকে বিকশিত করছে পিচঢালা রাজপথ ও আকাশ পথ। প্রকৃতিকে পরোক্ষ ভাবে হঠাৎ করে দেখলে সব জায়গায়-ই অনেক সুন্দর মনে হয়। কিন্তু প্রত্যক্ষ ভাবে দেখলে সে জায়গার মাটি, আবহাওয়া, ফসল উৎপাদন, নিরাপদ বাস, যোগ্য পরিবেশ, অপরাপর অঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয় যদি মিলে যায় তবে সেই জায়গাটিকে আমরা আদর্শ বলতে পারি।

কুড়িগ্রাম শিক্ষা বঞ্চিত অবহেলিত একটি নগরী। দেশ স্বাধীনের পর বিভিন্ন জেলার যতটুকু উন্নতি হয়েছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে কুড়িগ্রামে তার ছিটেফোঁটাও পড়েনি। কি আশ্চর্য! অথচ বেশ কিছু বড় বড় মনিষীর জন্ম হয়েছে এই কুড়িগ্রাম জেলায়।

আজ বহুকাল পর বর্তমান সরকার কুড়িগ্রামে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়।
কিন্তু প্রশ্ন, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি কোথায় হবে?? থানা ৯ টি। রাজারহাট দিয়ে শুরু কচাঁকাটা, রৌমারি দিয়ে শেষ। এর মধ্যে বর্ডার এলাকা ফুলবাড়ি,নাগেশ্বরী, ভুরুঙ্গামারী,কচাঁকাটা,রৌমারী রাজিবপুর। রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী বর্ডার লেস এই চারটি থানা রাজারহাট থেকে শুরু এবং চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র পাড়ে গিয়ে শেষ। নদীর ওপার রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলা। কিন্তু কুড়িগ্রাম জেলার সবচেয়ে ভালো কৃষি উৎপাদনশীল এলাকা রাজারহাট উপজেলা।  
বিশেষ করে ছিনাই ইউনিয়ন। এখানে ঘটেছে কৃষি বিপ্লব। সকল প্রকার কৃষি পণ্য এখানে উৎপাদন হয়। কুড়িগ্রাম জেলার সবজি চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে দেশের অন্যান্য জায়গায়। এমন কি এখানকার সবজি বিদেশেও রপ্তানি হয়। এখানকার বেলে দোআঁশ মাটিতে যে কোন বীজ ফেলে দিলেই চারায় রুপান্তরিত হয়। অত্যান্ত উর্বর এই এলাকাটি ভৌগলিক দিক থেকে লালমনিরহাট ও রংপুর থেকে কুড়িগ্রামে ঢুকার প্রবেশ পথ। এমন একটি জায়গা যা চারটি জেলার মধ্যেবর্তী অঞ্চল কচাঁকাটা থেকে যত দূর রৌমারী গাইবান্ধা, রংপুরের দূরবর্তী থানা গুলো থেকেও তত দূরে অবস্থিত। ঐতিহাসিক কালে তাই এখানে গড়ে উঠেছিল রাজবাড়ী। রাজকীয় এই
পাঙ্গা রাজবাড়ী হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের একটা আদর্শ স্থান। পৃথিবীর বড় বড় উন্নত রাষ্ট্র যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড,আমেরিকা,জার্মানি ও ফ্রান্সের মত দেশ গুলো তাদের ঐতিহ্যে বাঁচানো ও  রক্ষা করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে আমাদের দেশে ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
আপনারা নিশ্চয়ই পাহাড়পুরের নাম শুনেছেন। কেউ জানতোই না এই মাটির ঢিপির নিচে কত বড় একটা সভ্যতা লুকিয়ে আছে। ফ্রান্স থেকে সাত সমুদ্রর তের নদী পাড় হয়ে এসে উদ্ধার করলো সেই সভ্যতা। তেমনি একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল পাঙ্গাঁ রাজার রাজত্বে। এটা কুড়িগ্রামের একটা গর্ব। তাই এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমরা যদি একটা বিশ্ববিদ্যালয় এখানে গড়তে পারতাম তাহলে এই সভ্যতাটা প্রাণ ফিরে পেত। মৃত প্রায় এই নগরীটা আবার সভ্যতার আলোয় আলোকিত হতো যা খুবই জরুরি। এই জায়গার অনুকূল পরিবেশ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আদর্শ জায়গা। এখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে কয়েকবার এসেছেন। ইউনিয়নটি ধরলা নদীর তীরে অবস্থিত। কুড়িগ্রাম জেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার
লালমনিরহাট সদর থেকে১৬ কিলোমিটার এবং রংপর সদর থেকে ৩৮ কিমিঃ, বঙ্গ-সোনাহাট স্থল বন্দর থেকে ২৫ কিমি.
দূরে অবস্থিত ছিনাই ইউনিয়ন। বুড়িমারী নৌ ঘাট যেটা ভবিষ্যতে নৌ বন্দর হতে পারে তা মাত্র ৫/৬ কি.মি.। লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হলে বিমান থেকে নেমে মাত্র ১২/১৩ কি.মি. পথ পিচরাস্তা পেরিয়ে ছিনাই। ভৌগলিক, সামাজিক, কৃষি অর্থনৈতি সব দিক থেকে জায়গাটি অনন্য।  এখান থেকে খুব কাছে ছিনাইয়ের আরো একটা জায়গার নাম আসে শুধু এর পরিবেশের কারণে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ পূর্ণ ও আদর্শ জায়গা। মহিধর তথা এলজিডি নামে পরিচিত। জায়গাটি একদম আর.কে রোডের উপরে। সবচেয়ে আদর্শ সব দিক থেকে। এই দুই জায়গায় সরকারের খাস জমি আছে। তবে পাঙ্গায় তুলনা মুলক একটু বেশি।এবং এখানে রয়েছে আবহাওয়া ও পর্যবেক্ষণাগার।যা একটি মাইলফলক।
শুধু খাস জমি দেখলে তো হবে না। সব দিক থেকে আদর্শ হতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অথচ অনুর্বর ভুমি,শুষ্ক, রুক্ষ মাটি, যেখানে গবেষণার জন্য অনুকূল পরিবেশ নেই, নব সৃষ্টির সম্ভবনা যেখানে সামান্য সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে বরং সরকারের আর্থিক ক্ষতি সহ শিক্ষার মান সেটাও যথাযথ হবে না। অন্য দিকে টোগরাইহাটে রয়েছে প্রচুর খাস জমি। এটি কুড়িগ্রাম শহর থেকে মাত্র ৪/৫ কি.মি রাজারহাট রোডে। এখানে আছে একটি ছোট রেলস্টেশন। আরো একটি উন্নত জায়গা হতে পারে ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের তিস্তা রাজারহাট হাইওয়ে রোডের পাশে। অর্থাৎ সিংগারডাবরি ও রাজারহাটের মধ্যেবর্তী অঞ্চল। যার দুপাশে বিস্তির্ণ এলাকা ফাঁকা। পরিবেশ সম্মত উন্নত যোগাযোগ। এই স্থান চারটি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। বিবেচনায়ও আছে। এছাড়া বিবেচনায় আছে উলিপুর উপজেলার হালা বটের তল। এখানে প্রচুর খাস জমি। কিন্তু আমারা চাই কুড়িগ্রামের প্রবেশ দ্বারে হউক বিশ্ববিদ্যালয়টি। যেন কুড়িগ্রামে ঢুকতেই দেশের লোকজনকে কুড়িগ্রাম জেলায় স্বাগত জানায় বিশ্ববিদ্যালয়। যেমনটা রয়েছে কিশোরগঞ্জে। করিমগঞ্জ থানায় ঢুকার আগে প্রবেশ করতেই রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান চক্ষু হাসপাতাল।এমন শত উদাহরণ আছে। এছাড়াও চিলমারী অঞ্চলের লোকজন রাস্তায় নেমেছে সেখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার দাবি নিয়ে। জানিনা তাদের দাবিটা কতটুকু যৌক্তিক। স্বাধীনতার পর থেকে কুড়িগ্রামের সব অঞ্চল বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা লাভ করেছে। যে সকল সুযোগ-সুবিধা রাজারহাট পায়নি।
এখানে একটা পৌরসভা নেই এমন কি একটা সরকারি বালক বিদ্যালয়ও নেই। সারা বিশ্ব যখন এগিয়ে চলছে দেশের বাজেটে যেখানে শিক্ষা খাতে ব্যায় সর্বাধিক তখন কুড়িগ্রাম তথা রাজারহাট অনেক পিছিয়ে। এককথায় আমরা বঞ্চিত অবহেলিত এখানে একটা শিক্ষার আলোকবর্তিকা গড়ে উঠা নিতান্তই প্রয়োজন। সময়ের দাবি।

আমি দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে নীতিনির্ধারণ কারী মহোদয়দের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি রাজনৈতিক আধিপত্যের পাশ কাটিয়ে আপনারা আসুন, দেখুন, ভাবুন সব দিক থেকে পারফেক্ট একটা স্থান যে জায়গাটা প্রকৃতই আদর্শ, বিশ্ববিদ্যালয়টি সেখানেই নির্মাণ করুণ। আমরা এতেই তৃপ্ত যে আমাদের কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি হতে যাচ্ছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/আ.আমিন

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ