দহগ্রামে রাতে লুট হওয়া চাল উদ্ধার করলেন চেয়ারম্যানঃ প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন

প্রকাশিত: ০৪ অগাস্ট, ২০২১ ১১:০০:০৬

দহগ্রামে রাতে লুট হওয়া চাল উদ্ধার করলেন চেয়ারম্যানঃ প্রশ্নবিদ্ধ প্রশাসন

এসডি দোহা, পাটগ্রাম(লালমনিরহাট) প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বহুল আলোচিত দহগ্রাম - আংগারপোতা এলাকায় কাস্টমসের ট্রলি গতিরোধ করে ২১ বস্তা চাল ১ বস্তা চিনি লুটপাটের ঘটনায় চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন পুলিশ-বিজিবি ও কাস্টমস। রোববার রাত ৮ টার এ ঘটনায় ২৪ ঘন্টা সময় বেঁধে দিয়ে চাল উদ্ধারের নির্দেশ দেন উপরমহল। পরদিন কাস্টমস কর্মকর্তা আবু সাইদ বাদী হয়ে পাটগ্রাম থানায় চাল ছিনতাইয়ের একটি অভিযোগ দিলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পাটগ্রাম থানা ওসি' ওমর ফারুকের নির্দেশে তদন্ত শুরু করেন দহগ্রাম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর নির্মল চন্দ্র মোহন্ত। যেখান থেকে হোক যেভাবে হোক চাল উদ্ধার করা চাই। লুটের চাল ফেরত পেলে কাস্টমসও আপোষ করতে রাজি এমন আশ্বাস পেয়ে সেই অভিযুক্তরা ২৪ ঘন্টার মধ্যে সোমবার রাতে লোক সমাজের অগোচরে দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের বারান্দায় চাল ও চিনি রেখে গা ঢাকা দেন।গতকাল মঙ্গলবার সকালে দহগ্রাম চেয়ারম্যান কামাল হোসেন (প্রধান) পুলিশ ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের উদ্ধারকৃত ২১ বস্তা চাল ১ বস্তা চিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন বলে এ প্রতিনিধিকে তিনি জানান।

এ ঘটনায় আরেক নতুন রহস্য দেখা দিয়েছে বলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে প্রশাসনঃ
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, প্রায় সপ্তাহ খানেক আগে আংগারপোতা বিজিবি'র হাতে আটক হয় ভারতীয় ১০০ বস্তা চাল।প্রতিটি বস্তার ওজন ২৫ কেজি। ভারতীয় সীমান্ত হয়ে চোরাপথে আসা এসব চালের সাথে ১ বস্তা চিনিও আটক হয় বলে জানা গেছে।অন্যদিকে,দহগ্রাম বিজিবি'র হাতে আটক হয় ভারতীয় ৪৩ বস্তা চাল। বিধি অনুযায়ী এসব মাল জমা হবে পাটগ্রামের ইসলামপুর কাস্টমস শুল্ক গুদামে। বিজিবি'র দেয়া তথ্য মতে, রোববার সন্ধ্যার পর পাটগ্রাম থেকে ট্রলি ভাড়া করে শুল্ক গুদাম কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আবু সাইদ একজন সিপাহী ও মাস্টার রোল কর্মচারী রবিউল আংগারপোতা বিজিবি' বিওপি কমান্ডার বাবুল হোসেনের কাছে চাল ও চিনি বুঝিয়া লইয়া ট্রলি লোড করে আংগারপোতা বিওপি ত্যাগ করেন।বিওপি থেকে বের হতেই কিছু যুবক ও কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় নেতারা বলেন, ভারতীয় গরু ধরলে এখানে নিলাম দেন। সামান্য এক দেড়শ বস্তা চাল গুদামে নিয়ে যাবেন কেন? সে সময় আংগারপোতামোড়ে হট্রগোল বাকবিতণ্ডা হয় বলে স্থানীয় লোকজনসহ কাস্টমস বিজিবি'র সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান।

এরপর চালের ট্রলিটি প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে আরাজি খড়িবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে নির্জন এলাকায় গেলে কাস্টমস কর্মকর্তা গাড়ী থামিয়ে অন্ধকারে দু'চারজন যুবকের সাথে চাল দরদাম নিয়ে কথা বলেন। এ সময় সেখানে ২১ বস্তা চাল ও ১ বস্তা চিনি গাড়ী থেকে নামানো হয়। পুলিশ বিজিবি'র প্রটেকশন না নিয়ে সীমান্ত এলাকা থেকে রাতে চাল নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি।চেয়ারম্যানকে বলারও প্রয়োজন মনে করেননি।নিজের ভুলের মাসুল হিসেবে খোয়া যাওয়া চাল পূরণে কাস্টমস কর্মকর্তা নিজে জরিমানা দেয়ার কথা বলে রেহাই পেতে চাইলেও পারেন নি। তিনবিঘা করিডোর চেকপোস্টে বিজিবি'র গণনায় ধরা পড়েন তিনি। চালের বস্তা ১০০ টা'র স্থলে ৭৮ টা থাকার কারণে পরে নিতে অনুমতি দেননি বিজিবি। এরপর বাধ্য হয়ে দহগ্রাম বিজিবি বিওপিতে চালের ট্রলিটি রেখে পাটগ্রামে ফিরেন কাস্টমসের কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

এ ঘটনায় গত সোমবার পাটগ্রাম থানায় হাতে লেখা অভিযোগ দাখিল করেন কাস্টমস কর্মকর্তা। সেখানে নামধারী কোন আসামী ছিল না।কাস্টমসের বিরুদ্ধে কালোবাজারে চাল বেচার অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে কাস্টমস অফিস থেকে বলা হয় রাতের অন্ধকারে চালের গাড়ী গতিরোধ করে ৪/৫ টা মোটরসাইকেলে আসা মাস্ক পড়া যুবকরা চাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। ট্রলি চালককে এ সময় হুমকি দিয়ে বলা হয়, আমাদেরটা আমরা নিয়ে গেলাম। এখন সোজা চলে যা। কোথাও দাঁড়াবি না।

থানা পুলিশের সহযোগিতায় আপোষ মীমাংসা করতে রাজি কাস্টমস কর্মকর্তা এ আশ্বাসে দহগ্রাম চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের সহযোগিতায় রাতারাতি চাল উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন কারা তা গোপন থাকায় নামগুলো জানা গেল না।

পুলিশ ও গোয়েন্দার তদন্তে আংগারপোতা ও দহগ্রাম বিজিবি'র তথা কথিত সোর্সম্যান /লাইনম্যান দু'জনসহ ১০/১২ জনের একটি অপরাধ চক্রের নাম তালিকা করেছেন পুলিশ। কাস্টমস কর্মকর্তা আবু সাইদ এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে চান না। তিনি আপোষ করতে চান বলে অফিস সুত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে তাঁর কোন বক্তব্য মিলেনি।

প্রজন্মনিউজ২৪/শামসুদ দোহা/সি এইচ খালেকুজ্জামান
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ