প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হচ্ছে, দেখার কেউ নেই!

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই, ২০২১ ১০:৩৬:৪২

প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস স্তূপে পরিণত হচ্ছে, দেখার কেউ নেই!

মো: জাহিদুল ইসলাম, ঝিনাইদহঃ ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার নামক গ্রামে আবিষ্কৃত হয়েছে মধ্যযুগের সুলতানী শাসনামলের ইতিহাসের বিখ্যাত বন্দর শহর মোহাম্মদবাদ। অনিন্দ্য সুন্দর শহরটি ছিল সুলতানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক শহর। যে শহর থেকে তৎকালীন সময়ের খ্যাতনামা সকল সুলতানদের নামে মুদ্রা জারী করা হয়েছিল।

ইতিহাসে শহর মোহাম্মদবাদের নাম খুঁজে পাওয়া যায় মুঘল শাসনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে লিখিত গ্রন্থ আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে শহর মোহাম্মদবাদের নাম পাওয়া যায়। এরপর আর ইতিহাসের পাতায় শহর মোহাম্মদবাদের নাম নেই। ব্রিটিশ আমলে শহর মোহাম্মদবাদের স্থলে নাম পাওয়া যায় আজকের এই বারোবাজারের।

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজারে ১৯৯২-৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ খনন কার্য চালালে আবিষ্কৃত হয় শহর মোহাম্মদবাদের পুরো কাঠামো। প্রায় ৪/৫ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত শহর মোহাম্মদবাদের বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আবিষ্কারের পাশাপাশি ঐতিহাসিকদের মধ্যে চলমান মতভেদের অবসান হয়। শহর মোহাম্মদবাদের অবস্থান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের মতভেদ ছিল। একেক জন একেক স্থানে শহর মোহাম্মদবাদের অবস্থানের অনুমান করেছিলেন। বারোবাজারে খনন কার্য চালানোর সময়ে আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু থেকে ঐতিহাসিকরা একমত হন আজকের এই বারোবাজার ইতিহাসের বিখ্যাত শহর মোহাম্মদবাদ।

বিলুপ্ত নগরী শহর মোহাম্মদবাদের ধ্বংস স্তূপের বুকে জন্ম নেওয়া বারোবাজারের বিভিন্ন ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময়ে মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংস করেছেন। যা এখনো পর্যন্ত চলমান আছে। শহর মোহাম্মদবাদের রাজকীয় স্থাপনা বাদশা শাহ্ সেকেন্দারের বাড়ী খ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি বর্তমানে কেফায়তউল্লা ও তাঁর ছয় ভাই সহ বেশ কিছু ব্যাক্তির দখলে আছে। এছাড়া সওদাগর মসজিদটি বেলাট দৌলতপুর গ্রামের প্রভাবশালী বিএনপি নেতা মোহন বিশ্বাসের দখলে আছে। মোহন বিশ্বাসের রড সিমেন্টের দোকানটি মসজিদের উপর অবস্থিত। এভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে সানাইদার দীঘি ও সানাইদার মসজিদ।

বিলুপ্তির পথে রয়েছে মনোহর মসজিদ নামের বৃহৎ আকৃতির মসজিদটির কাঠামো। বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ খনন কার্য চালিয়ে মসজিদটি আবিষ্কারের পর থেকে বছরের পর বছর ধরে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে আছে। অন্যদিকে মসজিদটি প্রবেশে নেই কোন পথ। শহর মোহাম্মদবাদের দিঘী সহ সকল সম্পত্তি স্থানীয় ব্যক্তিদের সম্পত্তি হিসেবে থাকার কারণে তাঁরা ব্যক্তিগত স্বার্থে মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ ধ্বংসের কাজে লিপ্ত আছে। যার কারণে এই মনোহর মসজিদে প্রবেশের নেই কোন পথ। সকল সম্পত্তি স্থানীয় ব্যক্তিরা ভোগ দখল করছেন।

সরকারের উদাসীনতা আর স্থানীয় কিছু স্বার্থনেশী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে একদিকে যেমন শহর মোহাম্মদবাদের বিভিন্ন ধরণের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ধ্বংস প্রাপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে এই মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি পাচ্ছে না তাঁর সঠিক মূল্যায়ন। অথচ এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন বারোবাজারে যদি একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় তাহলে একদিকে যেমন মহামূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ রক্ষা পাবে অন্যদিকে এলাকার সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধিত হবে।#

প্রজন্মনিউজ২৪/এফএম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ