লকডাউন শিথিল: স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ মানছে না সরকার!

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই, ২০২১ ১২:২২:১৭

লকডাউন শিথিল: স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরামর্শ মানছে না সরকার!


চলতি জুলাই মাসকে ‘কঠিন’ বলে আখ্যায়িত করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতর বলছে, জুনে যত রোগী শনাক্ত হয়েছিল, সে পরিমাণ শনাক্ত হয়েছে জুলাইয়ের ১৪ দিনে। সংক্রমণ ও মৃত্যুর এ গতি আরও বাড়বে যদি সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া না হয়। এ অবস্থায় পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল অধিদফতর। কিন্তু শনিবার (১৭ জুলাই) থেকে রাজধানীতে বসছে হাট। 

দেশে করোনার সংক্রমণ গত ডিসেম্বরে কমে এলেও এ বছরের মার্চে ঊর্ধ্বমুখী হয়। গত প্রায় এক মাস ধরে পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক অবস্থায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সবচেয়ে বেশি রোগী যেসব দেশে শনাক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম। মৃত্যুর তালিকাতেও তাই। গত ২৪ ঘণ্টায় (১৪ জুলাই) দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২১০ জন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো দেশে একদিনে মৃত্যু ২০০-এর বেশি। গতকাল (১৩ জুলাই) ২০৩ জন, ১২ জুলাই ২২০ জন ও ১১ জুলাই ২৩০ জনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত এক সপ্তাহের মধ্যে শেষের চারদিন বাদ দিলেও মৃত্যুর সংখ্যা কম নয়। ১০ জুলাই মারা যান ১৮৫ জন, ৯ জুলাই ২১২ জন ও ৮ জুলাই ১৯৯ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছে অধিদফতর। ১৪ জুলাইসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ছাড়িয়েছে ১৭ হাজার।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার গত ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক লকডাউন ঘোষণা করে। কিন্তু আগামীকাল ১৫ জুলাই ভোর থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত আটদিন বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই শিথিল বিধিনিষেধ নিয়ে খোদ শঙ্কা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতর জানাচ্ছে, এতে দেশব্যাপী সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

অধিদফতরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর মনে করে বিধিনিষেধ শিথিল করায় সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। জুনে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। জুলাইয়ের ১৪ দিনে আমরা এত রোগী পেয়ে গেছি। এই মাসের আরও ১৬ দিন বাকি আছে। স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরও দুই সপ্তাহ এমন মৃত্যু চলতে পারে। এমনকি এ প্রবণতা টানা তিন সপ্তাহও গড়াতে পারে।’ বলেন অধ্যাপক রোবেদ আমিন।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে এবার রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ১৯টি অস্থায়ী পশুর হাট বসছে। এ ধরনের হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশিদ আলম গত ৫ জুলাই বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর সুপারিশ করছে কোরবানির হাট ফিজিক্যাল না করে অনলাইনে করতে। গতবছর পশুর হাট বসায় সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল বলে মনে করিয়ে দেন তিনি। সেটার কারণে পরে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে বেশ সময় লেগেছিল।  গতবছরও ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছিল কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অন্য ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে বেশি আগ্রাসী। তারপরও মানুষ লকডাউন মানতে চায় না। এ কারণেই সংক্রমণ বাড়ে। তার প্রমাণ হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা। প্রায় সব হাসপাতালে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী, আইসিইউ বেডও কম। স্বাস্থ্য বিভাগ সবসময় বলে এসেছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে হাসপাতালে জায়গা দেওয়া যাবে না। সরকার ঈদের অনুভূতির কথা মেনে এমনটা করেছে। সকলেই জানে দেশে করোনার পরিস্থিতি কেমন। কিন্তু মানুষের দাবিতে, দোকানদারের দাবিতে সরকার লকডাউন খুলে দিলো। এখন মানুষের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। লকডাউন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা দেয় না। আরও ১০টা মন্ত্রণালয় আছে। সবারটা মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্ত সরকার জানিয়ে দেয়। আর সরকারকে তো আমরাই কেবল পরামর্শ দিচ্ছি না, অন্য মন্ত্রণালয়ও দিচ্ছে।’

প্রজন্মনিউজ২৪/এফএম

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ