চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম এবার হংকংয়ে। প্রথমবারে মতো আম রপ্তানীর দ্বার উম্মোচন

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই, ২০২১ ০৬:৪৮:৪৩

চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম এবার হংকংয়ে। প্রথমবারে মতো আম রপ্তানীর দ্বার উম্মোচন

স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম আম রপ্তানী হলো হংকংয়ে। এতে করে আম রপ্তানীর নতুন দ্বার উম্মোচন হলো। হংকংয়ে আমের প্রথম চালানটি পৌছে সোমবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬ টায়। সোমবার দুপুরে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বি জি ০৭৮ বিমানে বাংলাদেশের রপ্তানীকারক এমটিবি অ্যাগ্রো এ্যান্ড গার্ডেন এর স্বত্ত¡ধীকারী মোঃ মাহতাব আলী হংকং এর এক্সিয়াম রিসোর্স লিমিটেড এর কাছে আমগুলি প্রেরণ করেন।

আমদানী ও রপ্তানীকারকরা জানান এর আগে হংকংয়ে কখনই আম রপ্তানী হয়নি,তবে হংকং হয়ে চলে গেছে অন্যদশে। এবারই প্রথম সরাসরি হংকংয়ে ১২ জুলাই সোমবার আম রপ্তানী হয়েছে।

বাংলাদেশ ফল সবজি এ্যালাইড প্রোডাক্টক এক্সপোটার্স এ্যাসোসিয়েশসের সদস্য ও হংকং য়ে আম রপ্তানীকারক মাহতাব আলী জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কন্টাক্ট ফার্মার আহসান হাবিবের ম্যাংগো প্রজেক্টের আম্রপালি,ফজলি ও বারী ফোর আম নিয়ে সরবরাহ করি হংকংয়ে। এর আাগে দেশী কয়েকটি স্বনামে খ্যাত সপিং মল, প্রতিষ্ঠিত ও উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিদের কাছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত আম নিয়ে প্রতিটি আমে আমার প্রতিষ্ঠানের স্টিকার দিয়ে নতুন নিজস্ব প্যাকিং করে সরবরাহ করি। আমকে ব্রান্ডিং,আকর্ষনীয় ও উপহার প্রদানের উপযোগী বক্স করে সবচেয়ে উন্নত ও দৃস্টিনন্দন প্যাকিং করছি। 

এ মৌসুমে দেশে ও বিদেশে আরো আম সরবরাহের জন্য বুকিং দেয়া আছে। এম.টি.বি এ্য্যাগ্রো এ্যান্ড গার্ডেন এর স্বত্ত¡াধীকারী মোঃ মাহতাব আলী আরো জানান,আম রপ্তানীতে দেশে তেমন নীতিমালা না থাকায় নিজেই হংকং য়ে সরকারের সংশিল্টস্টদের সাথে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে সহায়তা করে। এরপর রপ্তানীর বিষয়ে যে নিয়মাবলী পায় তা দেশে পেতে একমাস সময় চলে গেছে। তিনি আরো জানান, এটি একটা বড় সমস্যা দেশে নীতিমালা স্পস্টভাবে একজায়গায় না থাকা ও কার্গো বিমানে লোডারদের স্মোথলি লোড না করার জন্য আম নস্টের ঝুকি থাকে। আপাতত এ দুটি বড় সমস্যা বলে মনে হয়েছে । 

তিনি আরো জানান হংকং এর আম রপ্তানী নীতিমাল অনুযায়ী বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিল (বিএআরসি ) এর পেস্টিসাইড এ্যানালাইটিক্যাল ল্যাবরেটরী কীটতত্ব বিভাগে আম পরীক্ষা করিয়ে হংকং এ সোমবার আম সরবরাহ করি। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী পচনশীল ফ্রেশ সবজী ফল মুল রপ্তানী কারক দেশ এই সনদ পত্র দিয়ে থাকে । 

রপ্তানী কৃত পন্যে ক্ষতিকারক কিছু নাই তার জন্য এই সনদ। এই জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল ও ব্যায়বহুল  গজখ ( গধীরসঁস জবংরফঁব খবাবষ ) পরীক্ষা করতে হয়।  এই পরীক্ষা করে বোঝা যায় যে ব্যাবহৃত কীট নাশক বা সারের কোন প্রভাব ফসলে আছে কিনা এবং তা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক কিনা।
আমচাষী,কন্টাক্ট ফার্মার ও গণমাধ্যমকর্মী আহসান হাবিব জানান, আমার প্রজেক্টের আম নিয়ে গত মাসে সুইডেনে জিআই পন্য ক্ষিরসাপাত,ল্যাংড়া ও আম্রপালি  আমের তিনটি বড় চালান আরেক রপ্তানীকারক নিয়ে সরবরাহ করেছে। এবার হংকংয়ে পাঠানোর জন্য বিমান বাহীনির সাবেক কর্মকর্তা মাহতাব আলী কয়েক দফায় আম নিয়েছেন এবং এ মৌসুমে ব্যানানা ও গৌড়মতি,বারী ফোর,ফজলি ও আম্রাপালি আরো আম নিবেন। 

১৩ জুলাই মঙ্গলবার তিনি আরো বারী ফোর ব্যাগিং ৪ মন ও আম্রপালি ব্রাগিং আম ার্ডার দিয়েছেন দেশে ও বিদেশে সরবরাহের জন্য। আহসান হাবিব আরো জানান শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান কন্টাক্ট ফার্মার আহসান হাবিব কয়েক দফায় বিদেশে রপ্তানীর জন্য আম সরবরাহ করেছেন।

ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের আহŸায়ক ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কুদ্দুস জানান আম রপ্তানীতে কার্গোভাড়া কমানো এবং রপ্তানীকারকদের প্রনোদোনা প্রদানসহ উৎপাদনকারীদে বীমার ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রোনোদোনা প্রদান করতে হবে সরকারকে। তিনি আরো জানান রপ্তানীসহ আমের নায্য দাম ও সরবরাহে সমস্যা না থাকলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব । 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে। নায্য মূল্য আম বিক্রি হলে, যার বাজার মূল্য প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। 

বৃহত্তর রাজশাহী সমিতি,ঢাকা এর সভাপতি প্রকৌশলী ও আওয়ামীলীগ নেতা মাহতাব উদ্দিন জানান বাংলাদেশের সরকার প্রধান সারা বিশ্বে রাস্ট্র ও সরকার প্রধানদের ৪ টন করে আম উপহার দিবেন বলে অসমর্থিত সুত্র থেকে  শুনেছি, মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কাছে দাবী জানায় যদি এমন হয় তবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম সরবরাহের।

তিনি আরো জানান ,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরা, মেঘালয়,মিজোরামসহ প্রতিবেশী রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীদের আম উপহার দিয়েছেন। আমরা আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসী খুব খুশি হয়েছি। আরো খুশি হতাম যদি আমাদের অন্য জাতের আম উপহার সামগ্রীর সাথে অন্তর্ভুক্ত হতো।

তিনি বলেন আম রপ্তানীতে আরো বেশি সরকারি সহযোগিতার প্রয়োজন। রপ্তানি বাজার ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে আশির দশকে গার্মেন্টস শিল্পে যেমনভাবে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল ঠিক তেমনি আম রপ্তানিতে প্রণোদনা দেওয়া জরুরি। চাঁপাইনবগঞ্জের আম রপ্তানিযোগ্য প্যাকিং নিশ্চিতকরণ, সহানীয়ভাবে সঙ্গনিরোধ সনদের ব্যবস্থা,সহানীয় ভাবে ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের সুযোগ তৈরি করা,আধুনিক পদ্ধতিতে উৎপাদনে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করতে হবে।

আম সংশ্লিস্ট ও উদ্বানত্বত্ত¡বিদরা জানান,বিদেশে বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বাজার অনুসন্ধান করা,বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তাদের আমের মৌসুমে আম উৎপাদনকারী জেলাগুলো পরিদর্শন করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা,বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে দেশীয় আম বাগান পরিদর্শন করানো,আম রপ্তানি করার জন্য প্যাকেজিং সামগ্রির ওপর ভর্তুকি প্রদান করা,পরিবহন বিমানের ব্যবস্থা ও ভাড়ার হার সহনীয় রাখা,বিদেশে রপ্তানির জন্য শুল্ক না নেয়া,আমকে বিদেশে স¤প্রসারণ করার জন্য সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা এবং  আম রপ্তানির জন্য একটি নীতিমালা তৈরি প্রথম কাজ।

 

প্রজন্মনিউজ২৪/সিফাতুল্লাহ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ