আমাদের আর কেউ রইল না

প্রকাশিত: ১০ জুলাই, ২০২১ ০৪:২৯:০৩ || পরিবর্তিত: ১০ জুলাই, ২০২১ ০৪:২৯:০৩

আমাদের আর কেউ রইল না

দিনাজপুর প্রাতনিধি : নারায়গঞ্জের রুপগঞ্জের হাসেম ফুড লিমিটেডে চাকরি করেতেন একমাত্র ছেল মোরসালিন(২২) । সাড়ে তিন বছর আগে মামা জুয়েলের সাথে চাকরি নিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে হাসেম ফুড লিমিটেডে অগ্নিকান্ড শুরু হলে প্রাণ বাঁচাতে ভবনের তিন তালা থেকে লাফ দিয়েছিল। লাফ দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি মোরসালিনের। বুকে এবং কোমরে আঘাত পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।
দূর্ঘটনার হাত থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গাড়িতে হেলপারি করতে দেয়নি পরিবার। মামার সাথে পাঠান রুপগঞ্জে চাকরি করতে। ঘটনার আগের দিন কথা হয়েছিল বাবার সাথে। বাসায় পাঠিয়েছিলেন বেতনের সাড়ে ৪ হাজার টাকা, দিতে বলেছেন বোনকে। “কয়দিন আগত কথা হয়েছিল। মক কইছে বইনের জন্য টাকা পাঠায়ছু। ঈদত বাড়ি গেলে বইনের শ্বশুরবাড়িত যাইম। মোর জন্য চিন্তা করিস না। আমাদের আর কেউ রইল না দেখবার জন্যই। এইভাবে কান্না করে কথাগুলো বলেছেন মোরসালিনের বাবা আনিসুর রহমান ।
মোরসালিন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আব্দুলাপুর ইউনিয়নের সুখদেবপুর গ্রামের আনিসুর রহমান ও মোকসেদা খাতুনের ছেলে। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া। মোরসালিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙ্গিনায় মানুষের ভীড়। বাড়ির বারান্দায়  শুয়ে আছেন তার মা, বকছেন প্রলাপ, হচ্ছেন অজ্ঞান, আবার জ্ঞান ফিরলে ছেলের জন্য কান্না শুরু করতেছেন । একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা যেন পাগল প্রায়। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেহ বাসায় আসলে জড়িয়ে ধরে আহাজারী করছেন। বলছেন,“মোর ব্যাটা বোধয় ভাবিছে আগুনত পুরিলে মোক বাপ-মাও খুজে পাবিনায়, এই জন্য মোর ব্যাটা ঝাপ দিছে।” মায়ের কান্না দেখে কান্না করছেন সেখানে থাকা এলাকার সবাই। এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে মোরসালিন বড়। বোন কে বিয়ে দিয়েছেন পাঁচ মাস আগে। এদিকে ভাইয়ের শোকে অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বোনও। কাঁদতে কাঁদতে শ্বাস নিতে পারছেন না, বলতে পারছেন কথা।
মোরসালিনের বাবা আনিসুর রহমান বলেন, “বলছে গত ঈদে বাড়িতে আসতে পারিন। এবার যেমন করে হোক বাড়িত যাম। সবাই মিলে হামরা গাড়ি ঠিক করেছি। কালখানার একটা গেট নাকি বন্ধ ছিলো ছেলে আমার বের হবার পারেনি। দেখেই লাফ দিছে।”
মোরসালিনের মামা জুয়েলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা একই কোম্পানিতে চাকরি করতাম। আমার ঐদিন রাতে ডিউটি ছিল আর ভাগিনার দিনে । মোরসালিন থাকতো কোম্পানির কাছেই। কোম্পানিতে আগুন লাগছে একজন ফোন দিলে আমি যাই সেখানে। গিয়ে শুনি মোরসালিন ঝাপ দিছে। তাকে ইউএস বাংলা হাসপাতালে ভর্তি করাইছে। আমি সেখানে যায়, ভাগিনা আমাকে শুধু বলল মামা আমার বুকে ও মাজাই ব্যাথা করতেছে। ব্যাথা বেড়ে গেলে সেখানকার ডাক্তার ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাইতে বলে। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গেলে ভাগিনা আমার মারা যায়। এখনো লাশ হাতে পায়নি ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাবো।

 

 

প্রজন্মনিউজ/সবুজ

 

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ