চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের পর কুরবানীর পশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় খামারিরা

প্রকাশিত: ১০ জুলাই, ২০২১ ০৪:১৪:৪১

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের পর কুরবানীর পশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় খামারিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের পর কুরবানীর পশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় খামারিরা

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
হাতে গোনা আর কদিন বাদেই ঈদুল আযহা। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এবং লকডাউন আবারো বৃদ্ধি পাওয়ায় কোরবানির পশু বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার কয়েকশ খামার মালিক। একদিকে এ বছর আমের রেকর্ড উৎপাদনের পরও দাম না পাওয়ায় আম চাষীরা লোকসানের মুখে, অপরদিকে কুরবানির পশু বিক্রি না হলে খামারীদেরও বসতে হবে পথে। কয়েকবছর ধরে ভারত থেকে তেমন গরু না আসায় এবং করোনার কারণে এ বছর দেশের বাইরে থেকে কোন পশু আমদানী না করার সরকারী সিদ্ধান্তে খামারীরা আশায় বুক বাঁধলেও সে আশায় গুঁড়েবালির মত অবস্থা।

এদিকে জেলা প্রশাসন জেলার উদ্বৃত্ত পশু নিয়ে দুঃশ্চিন্তা দুর করতে চলতি সপ্তাহে পশুর হাটগুলো শর্ত স্বাপেক্ষে খুলে দিলেও ক্রেতার অভাবে চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে খামারিদের।  সারা বছর খামারে পরিশ্রম ও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করার পর এখন পশুর বাজার ও দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারীরা। অনেকে আবার পশু বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। জেলা প্রাণীসম্পদ বিভাগ বলছে জেলার বিভিন্ন খামারে চাহিদার থেকে ৬০ হাজার গরু বেশি আছে।

জুলফিকার আলি নামের এক খামারি জানান, আমার ১০ মণের উপরে ৪ টি গরু আছে। প্রতিবছর কোরবানির হাট শুরুর মাস দেড়েক আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাপারিরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনেন। কিন্তু এবছর কোন ব্যাপারি এখনও যোগাযোগ করেনি। পারচৌকা গ্রামের মিছু জানান, এবার কোরবানির ঈদের জন্য ১৫ টি গরু ও ৭ টি খাসি আছে। এবছর তেমন সাড়া পাচ্ছিনা।তবে লকডাউন খুললে আগামী সপ্তাহে ঢাকার কোন এক পশুর হাটে গরু গুলো নিয়ে যাব।

চককীত্তি এলাকার আব্দুল কায়উম সুজন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার আগ্রহী কোনো ব্যাপারীর দেখা নেই। এছাড়া কোরবানির আগমুহূর্তে জমজমাট হাট বসার সম্ভাবনাও নেই।
 
জেলা শহরের মীরপাড়ায় টি ইসলাম গট ডেইরি ফার্মের মালিক তরিকুল ইসলাম জানান, এ বছর কোরবানিতে ৫০টি খাসি ও ১৫টি ষাড় বিক্রি করব। চলমান লকডাউনে পশুর হাট বন্ধ থাকায় আমার ছেলে এবি মাসুদ নামের ফেসবুক আইডি থেকে খাসি ও ষাড় বিক্রির জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার তত্তীপুর হাট ইজারাদার আব্দুস সালাম জানান, করোনা ভাইরাসের কারনে মানুষ আর্থিক ভাবে চাপের মুখে রয়েছে। কাজেই অন্য বছরের তুলনায় এবার গরু কোরবানির হার কম হবে।হাট চালু হলেও হাটে বেপারী নাই। ক্রেতাও নাই বললেই চলে।

এদিকে করোনায় আয় কমে যাওয়া মধ্যবিত্ত আর নিম্নআয়ের মানুষেরা কোরবানি দিতে পারবে কিনা সে শঙ্কাও কাজ করছে খামারিদের মনের মাঝে। শিবগঞ্জের কালুপুর গ্রামের তাসির উদ্দিন জানান, তার ইলেকট্রিকের দোকান থাকলেও কয়েকমাস ধরে বন্ধ থাকায় সংসার চালানোয় দায়। তাই এ বছর তিনি কোন কুরবানী দিতে পারবেন না। পশুর হাটেও এ জন্য যাচ্ছেন না তিনি। তার মত অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের একই অবস্থা।

এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় বিভিন্ন খামারে কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৭৮৬ টি। আর কোরবানি জন্য পশুর চাহিদা আছে ১ লাখ ৩ হাজার ৭৭৮টি। করোনার প্রভাব পশুর বাজারে কিছুটা পড়েছে স্বীকার করে তিনি আরও জানান, সংকট দুর করতে জেলার খামারিদের অনলাইনে কোরবানিযোগ্য পশু বিক্রি করার জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ জানান, করোনাকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় দরিদ্র মানুষকে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে আর্থিক সহায়তা করছেন তাতে তারা খুশি। এছাড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার গুলো গরু ও খাসি বাড়িতেই পালন  করেন। কাজেই আসন্ন ঈদুল আযহায় কোন সমস্যা হবে না।

তিনি আরও জানান, গত ৭ জুলাই এক জুম মিটিং এ জেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও সাংসদদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সভায় লকডাউনের মধ্যে সীমিত পরিসরে খোলা জায়গায় শর্ত স্বাপেক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাই পশু বিক্রি নিয়ে কোন দুঃশ্চিন্তা এবছর হবে না।

প্রজন্মনিউজ২৪/সিফাতুল্লাহ
চাপাইনবাবগঞ্জ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ