করোনায় বিধস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ

প্রকাশিত: ০৮ জুলাই, ২০২১ ১২:২১:৩৯

করোনায় বিধস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ

করোনায় বিধস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ

বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে, ১ জুলাই থেকে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা হবে। এই ঘোষণা আসার পর নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।কর্তৃপক্ষ বলছে, লকডাউনে যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে সরকারের।

বাংলাদেশে গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার পর সরকারের আরোপিত তথাকথিত লকডাউনের সময় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।সেসময় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, পরিবহন খাতের বা কলকারখানার শ্রমিক বা দিন মজুর হিসেবে কাজ করা মানুষ না খেয়ে দিন যাপন করেছে, এমনও অভিযোগ শোনা গেছে।এবারও লকডাউন শুরুর আগে অনেকটা একই ধরণের পরিণতির আশঙ্কা করছেন নিম্ন আয়ের বহু মানুষ।

রাজধানীতে ১৮ বছর ধরে রিকশা চালান দ্বীপজেলা ভোলার শামসুল আলম। কিন্তু এত বেকায়দায় আগে কখনও পড়েননি। সংসারের খাওয়া-পরা, দুই ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ- সবই জোটে তার রিকশা চালিয়ে। তবে লকডাউন ঘোষণার পর তার আয় পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে তার দিন চালাতে। রাজধানীর সব নিম্ন আয়ের মানুষের এখন এমন অবস্থা। বড় দুর্দিন এখন তাদের।রিকসাচালক শামসুল আলম বলেন, ছয় দিন ধরে ২০০ টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না। অথচ আধাবেলা রিকশা চালালেই ৭০০ টাকা আয় করা যেত।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং, সানেম গত বছরের জুন মাসে লকডাউন পরবর্তী অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল, যেখানে উঠে আসে যে দুই মাসের লকডাউনের পর দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে।

ঐ গবেষণার একজন গবেষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, এবারও একই ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।‘“গত বছরের লকডাউনে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল তারা সরকারি সহায়তা, রেমিট্যান্স সহ নানা ধরণের সহায়তার ওপর ভর করে গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে অনেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। এখন আবার নতুন করে লকডাউন দেয়ায় মানুষজন আবারো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে", বলেন সায়মা হক বিদিশা।

তিনি বলেন গত বছরের লকডাউনে নিম্ন আয়ের বহু মানুষ নিজেদের সঞ্চয় শেষ করে ফেলেছে, অনেকের নতুন করে ঋণ নেয়ার মত পরিস্থিতিও নেই।এই অবস্থায় তাদের আয় এবং কাজের ধরণ বিবেচনা করে আলাদা ভাবে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন তিনি।

"খুব দরিদ্রদের বা বস্তি এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে খাবার দিয়ে আসার ব্যবস্থা করা উচিত। শুনতে হাস্যকর শোনালেও, এই ব্যবস্থা না করলে অতি দরিদ্রদের ঘরে রাখা সম্ভব না। সেরকম মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প পরিমাণে রেশনের মত খাদ্য ও জরুরি পণ্যের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।"

তবে গত বছর এই বন্টনের ক্ষেত্রে নানা ধরণের দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে আগের বারের শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন মিজ বিদিশা।করোনা ভাইরাস শাটডাউনের কারণে হঠাৎ করেই উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে লাখ লাখ মানুষের। তাদের অনেকেই ভীড় করছেন স্বল্প মূল্যের টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্রে।পাশাপাশি বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার ওপরও জোর দেন তিনি।

মিজ বিদিশা আশঙ্কা প্রকাশ করেন লকডাউন কড়াকড়িভাবে কার্যকর না করা হলে বিধি-নিষেধ দীর্ঘায়িত হতে পারে, যার প্রভাবে অর্থনৈতিকভাবে আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে সাধারণ মানুষ।তিনি বলেন, "লকডাউনটা যদি কঠোরভাবে পালন না করা হয়, তাহলে সংক্রমণ বাড়বে। আর সংক্রমণ বাড়লে দীর্ঘায়িত হতে পারে লকডাউন। সেক্ষেত্রে আরো ক্ষতিগ্রস্থ হবে সাধারণ মানুষ।"

"তাই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হল লকডাউনটা কড়াকড়ডি ভাবে পালন করা, যেন তা আর দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন না হয়।"বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ বলছে আসন্ন লকডাউনের সময় যারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মোহসিন বলেন, "দেশের শহর ও গ্রাম সব জায়গায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।"তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য সরকারের যথেষ্ট বরাদ্দ থাকলেও তার সুষ্ঠু ও সুষম বন্টন নিশ্চিত করতে না পারলে নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্দশা অব্যাহত থাকবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/তারিক আদনান
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ