‘ভয় নেই, দরজা খুলুন, আমি আপনাদের জলিদি’

প্রকাশিত: ০৫ জুলাই, ২০২১ ০১:০৬:১৮

‘ভয় নেই, দরজা খুলুন, আমি আপনাদের জলিদি’

‘বাড়িতে কেউ আছেন? ভয় নাই দরজা খুলুন, আমি আপনাদের লোক পৌর মেয়র জলিদি। আপনাদের জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।’ এভাবে রাতে খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হাজির হচ্ছেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সব এলাকা। মানুষের কাজ নাই, খাবার নাই। অসহায় মানুষগুলো না খেয়ে দিন পার করছেন। এমন পরিস্থিতিতে নাটোর পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে রাতের আঁধারে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।

করোনা দুর্যোগের এমন পরিস্থিতে মেয়রকে ভিন্নরূপে দেখছেন নাটোরবাসী। দিন নেই, রাত নেই খাদ্য সহায়তা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন তিনি। ছুটে চলেছেন মানুষের দুয়ারে দুয়ারে। তাদের দিয়ে আসছেন খাদ্য সহায়তা। সরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্য সহায়তার কয়েকদিনের এমন কাজের ধারাবাহিকতায় পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, রাত গভীর হলেই এখন বিপুল সংখ্যক মানুষ পথে পথে অপেক্ষা করেন মেয়রের জন্য। ফলে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেও অপেক্ষমান এসব মানুষের কাছে ছুটে যাচ্ছেন তিনি।

এই করোনা দুর্যোগে সত্যিকারের যেসব মানুষের সহায়তা প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছাতেই রাতের আঁধারে বাড়ি বাড়ি ছুটে চলেছেন বলে জানান মেয়র উমা চৌধুরী জলি। অসহায় মানুষগুলো হাতে তুলে দিচ্ছেন চাল, আলু, পিয়াজ, ডাল, লবণ, তেল, সেমাই, চিনি, দুধ, সাবানসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর থলে।

শহরের মলি­কহাটি নুনীয়া পাড়ার শ্যামলী কর্মকারের বলেন, আমরা ইটের খোয়া ভেঙে কোনোমতে জীবিকা নির্বাহী করি। লকডাউনে যতবারই কর্মহীন হয়েছি ততবারই আমাদের পৌর মেয়র জলিদি ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। 

শহরের চৌধুরী বড়গাছা মহল্লার আসমা বেগম বলেন,আমার স্বামী একজন রিকশাচালক। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পরায় খেয়ে না খেয়ে দিনানিপাত করছিলাম। আমাদের পৌর মেয়র জলি দিদি লকডাউনে আমাদের বাসায় গিয়ে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছে।

নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান চুন্নু জানান, আমাদের পৌর মেয়র করোনার ১৬টি মাস ৯টি ওয়ার্ডে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। বাড়ি-ঘরের বাইরের অবস্থা দেখে অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষ চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী সহায়তা করেছে। করোনার শুরু থেকে নাটোরে ফ্রন্ট লাইনে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

ব্যক্তিগত, সরকারি ও পৌরসভার পক্ষ থেকে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে খাবার ও ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। এছাড়াও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের বাড়িতে নিয়মিত খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। শহরবাসীকে সচেতন রাখতে নিয়মিত মাইকিং, বাইসাইকেলযোগে বিভিন্ন স্থান ঘুরে ঘুরে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেছেন তিনি। দিয়েছেন মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, জীবাণুনাশক স্প্রে।

নিজের মানবিক বোধ থেকেই সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন জানিয়ে এই মেয়র উমা চৌধুরী বলেন, দেশমাতৃকার জন্য কাজ করার শপথ নিয়েই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি। কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হলে হবো, সে নিয়ে চিন্তা করি না। তারপরেও যতটুকু সতর্ক থাকা সম্ভব থাকার চেষ্টা করছি। নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভয় করেতো অসহায় মানুষকে সাহায্য করা থেকে এড়িয়ে যেতে পারি না। তাই সাধ্যমতো এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাবো।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফাহাদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ