লালমনিরহাটের পাটগ্রামে

শিক্ষকদের বিক্ষোভ অবরুদ্ধ, ঘটনার তদন্তে বেড়িয়ে এলো থলের বিড়াল!

প্রকাশিত: ০৮ মে, ২০২১ ১১:৩৭:৩৩ || পরিবর্তিত: ০৮ মে, ২০২১ ১১:৩৭:৩৩

শিক্ষকদের বিক্ষোভ অবরুদ্ধ, ঘটনার তদন্তে বেড়িয়ে এলো থলের বিড়াল!

এসডি দোহা, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ১৩ তম গ্রেডিং এ আসন্ন ঈদের আগে বেতন বোনাস পাওয়ার দাবীতে গত মঙ্গলবার লালমনিরহাটের পাটগ্রামে বিক্ষোভ প্রদর্শন শেষে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় ঘেরাও করেন সপ্রাবি সহকারী শিক্ষকরা। এ ঘটনায় গোপন তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটগ্রাম উপজেলা শিক্ষা অফিস আকস্মিক পরিদর্শন ও তদন্তে আসেন রংপুর বিভাগীয় উপ-পরিচালক (ডিডি) মুজাহিদুল হক ও লালমনিরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ( ডিপিও) গোলাম নবী

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায়, সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী সপ্রাবি সহকারী শিক্ষকদের ১৫ তম গ্রেডিং পরিবর্তন করে ১৩ তম গ্রেডিং (পদ-মর্যদা) বাস্তবায়নে সরকার শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতায় শর্ত আরোপ করে দেন। ঘোষণা ছিল ১৩ তম গ্রেডিং পেতে অর্নাস- মাস্টার্স কিংবা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস সার্টিফিকেটধারীদের কমপক্ষে সেকেন্ড ক্লাশ থাকতে হবে। পরবর্তীতে সেই শর্ত শিতিল করে সকল সহকারী শিক্ষকের সমান মর্যদা দিয়ে একই গ্রেড প্রদানের সিদ্ধান্ত নেন সরকার।

সে হিসেবে সপ্রাবি সহকারী শিক্ষকদের কাছ থেকে এনআইডি পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর জমাদানের নির্দেশ দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী, সহকারী শিক্ষকগণ তাদের প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাধ্যমে কাগজপত্র জমা দেয়ার কথা থাকলেও সহকারী শিক্ষক প্রতিনিধি আব্দুর রহিম প্রামানিক লিবন, মফিদুল ইসলাম রুপা, আলমগীর হোসেন, জামিলুর রহমান আপন, সফিউল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষক নিজ দায়িত্বে অন্য সকল শিক্ষকের কাগজপত্র সংগ্রহ করে ১৪২ জনের কাগজপত্র শিক্ষা অফিসে জমা দেন। এতে অভিযোগ উঠে অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে শিক্ষক প্রতি ১ হাজার টাকা বকশিস আদায় যা পরবর্তীতে উৎকোচ হিসেবে বদনাম ছড়িয়ে পড়ে। এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী শিক্ষক নেতা আব্দুর রহিম প্রামানিক লিবন বলেন, কোন শিক্ষক বলতে পারবে না যে গ্রেডিং পরিবর্তন আপডেট এ কাজে কেউ আমাদেরকে কোন টাকা পয়সা দিয়েছে। আমরাই বরং ৫/ ১০০০ টাকা পকেট থেকে খরচ করে কাজটি করার চেষ্টা করেছি। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা টাকা ছাড়া কাজ করবে না এমন কথা শোনার পর শিক্ষকরা প্রতিবাদ করেন। হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভিতরে অডিটরকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দায়ি সহকারী শিক্ষক সফিউল ইসলাম হলেও দুঃখ প্রকাশ করেন শিক্ষক নেতা আব্দুর রহিম প্রামানিক লিবন।

বিধিমোতাবেক, সেই সব কাগজপত্র উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চঃদাঃ) আবুল হোসেন দেখার পর হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা বরাবর ফরওয়ার্ডিং করে দেন এমন তথ্য জানান হিসাব সহকারী তাছওয়ার সাকলাইন। তিনি বলেন, ১৩ তম গ্রেডিং ফিক্সেশনে নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারণ করার দায় দায়িত্ব হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার। তাঁর কার্যালয়ে সরকারি কাজে ব্যবহৃত সফটওয়্যার আইবাস + নেটওয়ার্ক ও প্রযুক্তি ত্রুটির কারনে ১৪২ শিক্ষকের এনআইডি টেস্ট ও বেতন কাঠামো পরিবর্তন বা গ্রেডিং ফিক্সেশন করা সম্ভব হয়নি। এমন দাবী করেন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম।তিনি বলেন, এ কারনে মূলতঃ পরবর্তী ফাইলগুলো আটকে যায়।এরপরও অন্য সকল শিক্ষকের সাথে ফাইল আটকে থাকা ওই ১৪২ শিক্ষকের বেতন বোনাস প্রদানে শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে একমত হোন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। কিন্তু বাঁধ সাধে শিক্ষকরা। তাদের কথা ঈদের আগেই আমাদেরকে ১৩ তম গ্রেডিং দিয়ে একই সাথে বেতন বোনাস দিতে হবে।

কোনভাবেই সেটা ঈদের আগে হবে না এমনটা জানার পর ক্ষুদ্ধ শিক্ষকরা বিক্ষোভ করার ফন্দি আটেন বলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে এসেছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষকদের মধ্যে ৬/৭ জন নামধারী শিক্ষক নেতার সার্ভিস বুকে কালী লাগতে পারে বলে গোপন তথ্য জানা গেছে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, সহকারী শিক্ষকরা যে রূঢ় আচরণ করেছেন, আমাকে গালিগালাজ ও অফিসের দরজায় লাথি মেরেছেন সে ছবি ও ভিডিও আমার কাছে আছে। কর্তৃপক্ষ চাইলে তদন্ত কাজে সেগুলো দেয়া হবে।

শিক্ষা অফিসের হিসাব সহকারী তাছওয়ার সাকলাইন বলেন, সহকারী শিক্ষকদের কাগজপত্র জমা হওয়ার পর কাজটা করার দায়িত্ব হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার। ১৩ তম গ্রেডিং ফিক্সেশন কাজটা তাঁর এখতিয়ার। তিনি সময়মত না করলে শিক্ষা অফিস তো কোনভাবে দায়ি নয়।

ঈদের আগে ১৩ তম গ্রেডিং এ বেতন বোনাস পাওয়ার কথা বলে অফিসের নাম ভাঙ্গিয়ে ফাইলপ্রতি ১ হাজার টাকা জমা নেন শিক্ষক নেতারা। অথচ এ ব্যাপারে শিক্ষা অফিস কোন টাকা গ্রহন করেনি বলে দাবী করেন হিসাব সহকারী তাছওয়ার সাকলাইন। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, অন্য শিক্ষকরা চলতি মাসের ২ তারিখে বেতন বোনাস উত্তোলন করেছেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া ১৪২ শিক্ষক অবশেষে আগের গেডে বেতন বোনাস উত্তোলন করেছেন বলে শিক্ষা অফিস নিশ্চিত করেছেন।

অনেকের ধারনা সামান্য একটা ভুল বুঝাবুঝি থেকে সপ্রাবি সহকারী শিক্ষকরা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে অডিটর সত্যেনদ্র দত্তকে টানাহেঁচড়া করার ঘটনায় যে রূঢ় আচরণ প্রকাশ পেয়েছে তাতে স্থানীয় প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান রুহল আমিন বাবুল ও মাননীয় এমপি সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/শাওন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ