ভারতে এক সপ্তাহে আক্রান্ত ২৭ লাখের বেশি  

প্রকাশিত: ০৭ মে, ২০২১ ০৩:০৯:৫২

ভারতে এক সপ্তাহে আক্রান্ত ২৭ লাখের বেশি  

সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে টানা দ্বিতীয় দিন ৪ লাখের বেশি কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

শুক্রবার স্থানীয় সময় সকালে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জনের দেহে ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। দৈনিক শনাক্তে এটিও নতুন বিশ্ব রেকর্ড।

এ নিয়ে দেশটিতে সরকারি হিসাবেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ১৪ লাখ ছাড়িয়ে গেছে; যার মধ্যে ২৭ লাখ ২৮ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে শেষ ৭ দিনে।

মহামারীর বিস্তার এখন ভারতের পশ্চিম অংশ থেকে ক্রমশ পূর্ব দিকে সরছে বলে এক দিন আগে সতর্ক করেছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে।

আর বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ভারতে সংক্রমণ এখন ঘনবসতিপূর্ণ শহর ছাড়িয়ে দুর্গম গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার এই দেশে ৭০ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে।

সংক্রমণ মোকাবেলায় দেশটিতে জানুয়ারি থেকে নাগরিকদের কোভিড টিকা দেওয়া শুরু হলেও সরবরাহের ঘাটতি ও পরিবহনজনিত সমস্যায় সম্প্রতি এ কর্মসূচির গতি অনেকখানিই কমে এসেছে।  

পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতজুড়ে কঠোর লকডাউন দেওয়ার দাবি উঠলেও অর্থনৈতিক ক্ষতি এড়াতে দেশটির সরকার সে পথে হাঁটতে চাইছে না বলে ইঙ্গিতও মিলেছে।

হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের ঘাটতি, ওষুধের সংকটের কারণে দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে মৃত্যুও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৯১৫ মৃত্যু নিয়ে দেশটিতে সরকারি হিসাবেই কোভিড-১৯ এ প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩তে।

আক্রান্ত-মৃত্যুর এ সরকারি হিসাবের সঙ্গে একমত নন বিশেষজ্ঞরা। তাদের হিসাবে, ভারতে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যের অন্তত ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি হবে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে শিগগিরই সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্কও করেছেন।

লাখ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে কুম্ভমেলার মতো ধর্মীয় উৎসব ও বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ করে ‍দিয়ে ভারতের সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় ‘গা ছাড়া ভাব’ দেখিয়েছে বলে অভিযোগ আছে সমালোচকদের।

টিকাদান কর্মসূচির শ্লথগতির জন্যও তারা নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে দোষারোপ করছেন।

“টিকাদানের গতি বাড়ান, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আনুন,” শুক্রবার সরকারের প্রতি এমন আহ্বান রেখেছে সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসও।

ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় টিকা উৎপাদক দেশ হলেও নিজেদের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতেই হিমশিম খাচ্ছে তারা। এখন পর্যন্ত দেশটি নাগরিকদের মধ্যে ভ্যাকসিনের প্রায় ১৬ কোটি ডোজ প্রয়োগ করলেও জনসংখ্যার অনুপাতে এই সংখ্যা নগণ্য।

দেশটিতে কয়েকদিন প্রায় ৪০ লাখ ডোজের মতো টিকা দেওয়া হয়েছিল; ভ্যাকসিন ঘাটতির কারণে এখন তা দৈনিক ২৫ লাখ ডোজে এসে নেমেছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অমর্ত্য লাহিড়ি।

“এখন যদি দিনে ৫০ লাখ ডোজও দেওয়া হয়, তাহলেও সবাইকে ২ ডোজ দিতে দিতে বছর পেরিয়ে যাবে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ,” বলেছেন তিনি।

রয়টার্স লিখেছে, ভারতের মধ্যে উত্তর ও পশ্চিমের রাজ্যগুলো মহামারীতে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মে’র প্রথম সপ্তাহে দক্ষিণের ৫টি রাজ্যে দৈনিক শনাক্তের পরিমাণ নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

“প্রাদুর্ভাব এখন পূর্বদিকে অগ্রসর হচ্ছে বলে তথ্যপ্রমাণে ইঙ্গিত মিলেছে, সেদিককার রাজ্যগুলোতে দৈনিক শনাক্ত ও মৃত্যুহারের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে,” পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার, উড়িষ্যা ও ঝাড়খণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমনটাই বলেছে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত ভারতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাহায্য পাঠানো অব্যাহত আছে। শুক্রবার দেশটিতে পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ডের পাঠানো কোভিড সহায়তা পৌঁছেছে বলে টুইটারে জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী।

প্রজন্মনিউজ২৪/এএআই

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ