ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট: অধিকতর সংক্রামক, অপেক্ষাকৃত গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে

প্রকাশিত: ০৬ মে, ২০২১ ১২:৪১:৩৪

ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট: অধিকতর সংক্রামক, অপেক্ষাকৃত গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে

একের পর এক রূপ পাল্টাচ্ছে করোনাভাইরাস। এ ভাইরাস মোকাবেলায় বিজ্ঞানীরা যখন হরেক রকমের ওষুধ ও টিকা তৈরিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, ভাইরাসটিও নতুন নতুন রূপে আবির্ভূত হয়ে তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে।

নিয়মিত রুপ পাল্টানো ভাইরাসের স্বভাব। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে মিউটেশন। করোনাভাইরাসের আবির্ভাবের পর বিগত বছর দেড়েকের মধ্যে এ ভাইরাসের শুধু স্পাইক প্রোটিনেই চার হাজারের বেশি মিউটেশন ঘটেছে।

কিন্তু, মিউটেশনে সৃষ্ট এসব ভ্যারিয়েন্টের বেশিরভাগই সংক্রমণের বিভিন্ন আঙ্গিকের নিরিখে বিশেষ কোনো গুরুত্ব বহন করে না।

তখনই একটি ভ্যারিয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যখন দেখা যায় যে, এটি মূল ভাইরাসের চেয়ে অধিকতর সংক্রামক, অপেক্ষাকৃত গুরুতর অসুস্থতা সৃষ্টি করে, দ্রুততর গতিতে ছড়ায় কিংবা ইতোপূর্বেকার ইনফেকশন বা টিকা গ্রহণের মধ্য দিয়ে অর্জিত ইম্যুনিটিকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়।

করোনাভাইরাসের এ রকম কিছু ভ্যারিয়েন্ট বিশ্বের নানা অঞ্চলে নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। এ যাবত বিজ্ঞানীরা এ ধরনের চারটি ভ্যারিয়েন্ট চিহ্নিত করেছেন। যথা— ইউকে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.১.৭), ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট (পি.১), সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৩৫১) ও ক্যালিফোর্নিয়ান ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৪২৯)।

এই ভ্যারিয়েন্টগুলোকে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব কনসার্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।

এ তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হতে পারে সাম্প্রতিককালে ভারতে আবির্ভূত নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা ইন্ডিয়ান ভ্যারিয়েন্ট, বি.১.৬১৭।তবে, এই ভ্যারিয়েন্টটি আপাতদৃষ্টিতে উদ্বেগজনক বিবেচিত হলেও যেহেতু সংক্রমণের বিভিন্ন আঙ্গিকে এর অবস্থান এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হয়নি, একে এখনো ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের মতো রেগুলেটরি বডি এটাকে একটি মাঝামাঝি অবস্থানে রেখে ‘ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। (What do we know about the Indian coronavirus variant? The Guardian, April 19, 2021)

সম্প্রতি, পাশের দেশ ভারতে করোনা অতিমারি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত বছর দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা সর্বোচ্চ প্রায় ১ লাখ ও মৃতের সংখ্যা প্রায় ১ হাজারে ওঠার পর সেপ্টেম্বর থেকে কমতে শুরু করে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ শনাক্ত ও মৃত্যু যথাক্রমে প্রায় ১০ হাজার ও ১০০-তে নেমে আসে। কিন্তু, গত মার্চের শুরু থেকে হঠাৎ সংক্রমণ তীব্র গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হয়। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা ৪ লাখ ও মৃতের সংখ্যা সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি যখন সংক্রমণ এ যাবৎকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো বা অতিমারির সবচেয়ে খারাপ সময়টা কেটে গেছে।

ডিসেম্বর-জানুয়ারি চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমায়োলজির একটি অ্যান্টিবডি সমীক্ষা প্রাক্কলন করে, ভারতের বড় বড় শহরগুলোর কিছু এলাকায় ৫০ শতাংশেরও বেশি লোক ও জাতীয়ভাবে ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ইতোমধ্যে সংক্রমিত হয়েছে। এর মানে, জনসাধারণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সংক্রমণের মাধ্যমে কিছুটা ইম্যুনিটি অর্জন করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গবেষকদের কেউ কেউ এমনটা প্রত্যাশা করছিলেন যে, অতিমারির পরবর্তী ধাপটির তীব্রতা অপেক্ষাকৃত কম হবে— বলেন দিল্লিতে কর্মরত নিউজার্সি প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির এপিডেমায়োলজিস্ট রমন লক্ষ্মীনারায়ণ। (India’s massive COVID surge puzzles, April 21, 2021)

কিন্তু, বাস্তবে ঘটলো ঠিক উল্টোটা। প্রশ্ন হল, কেন হঠাৎ সংক্রমণ আবার এমন উল্কাবেগে ঊর্ধ্বমুখী হলো? কী হতে পারে এর অন্তর্নিহিত কারণ? সংক্রমণ কমে আসা ও টিকা দান কার্যক্রম শুরু হওয়ায় আত্মতুষ্টি বশে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে লোকজনের অবাধে মেলামেশা ও ঘোরাফেরা? না কি অধিকতর সংক্রামক নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্টের আগমন বা আবির্ভাব? ঠিক কোন ফ্যাক্টরটি এখানে প্রধান ভূমিকা রেখেছে তা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়।

তবে, বিশেষজ্ঞ মহলের কাছে সম্প্রতি ভারতে দেখা দেওয়া নতুন ভ্যারিয়েন্ট, বি.১.৬১৭, যা ইতোমধ্যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, তা বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

এই ভ্যারিয়েন্টটির বিশেষত্ব হলো— এর স্পাইক প্রোটিনে এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ মিউটেশনের সমন্বয় ঘটেছে, যেগুলো আগে আবিষ্কৃত মারাত্মক ভ্যারিয়েন্টগুলোর কোন না কোনটিতে স্বতন্ত্রভাবে দেখা গেলেও কোনো ভ্যারিয়েন্টেই এক সঙ্গে দেখা যায়নি। এটিই এর ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ নামের ভিত্তি। এর মানে নিশ্চয়ই এই নয় যে, এতে কেবল দুটো মিউটেশন ঘটেছে। বরং প্রকৃতপক্ষে মোট মিউটেশনের সংখ্যা এক ডজনেরও বেশি।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজমুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ