ফের পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল, ২০২১ ১১:৫৩:১২

ফের পুঁজি হারানোর শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা


ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ ও দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার শর্ত সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখার অনুমতি দিয়েছে। আগামী ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ সুযোগ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। কারণ গত বছরের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে ওঠা যায়নি, তাই নতুন করে সব বন্ধ করে দেওয়া হলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

অর্থনীতিবিদদের তথ্য অনুযায়ী, গত লকডাউনের পর দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়েছিল প্রায় ৪০ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম ফের চালু হলেও এখনো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি উদ্যোক্তারা। একটি দোকান ঘিরে কয়েকটি পরিবারের জীবিকা চলে। মালিক, কর্মচারী আবার তাঁদের মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান। তাই দোকান না খুলে আর কী-ই বা বিকল্প আছে। সুরক্ষিত থেকেই তাঁদের ব্যবসা করতে হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির তথ্য মতে, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬০ লাখ দোকান বা ক্ষুদ্র ব্যবসা রয়েছে দেশে। গত বছর সাধারণ ছুটিতে বন্ধ থাকার কারণে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন এক হাজার ১০০ কোটি টাকা করে লোকসান হয়েছে। সেই লোকসান কাটিয়ে উঠতে এবারের পহেলা বৈশাখ ও ঈদ উৎসবের দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, উৎসব ঘিরে দোকান মালিকরা এরই মধ্যে এক হাজার কোটি টাকার মালপত্র তুলেছেন, মৌসুম চলে গেলে যা অবিক্রীত থেকে যাবে। তাই পুঁজি তুলে আনা তাঁদের জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদসংলগ্ন খাবারের দোকান সিপির বিক্রেতা সৈয়দ ইফতেখার বলেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, নাগেট, শাশলিক, চিকেন বল বিক্রি করি। লকডাউনে বেচাকেনা হয় না। গত বছরের লকডাউনে কেনাবেচা একদম বন্ধ ছিল। গত চার মাসে সেই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পথে ছিলাম, এই লকডাউনে তো আবার ক্ষতির মুখে পড়ব।

কাটাসুর এলাকার আরেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সিয়াম খান বলেন, আমার বাসার সামনে একটি বরফের কারখানা গড়ে তুলেছি। বরফ ক্যান মীনা বাজার ও আগোরাতে সরবরাহ করি। মাছ টাটকা রাখতে ব্যবহার করা হয় এই বরফ। লকডাউনের জন্য বরফের উৎপাদনও কমেছে। মীনা বাজার ও আগোরার মতো শপিং মলগুলোতে বরফের চাহিদা কমে যায়। করোনার আগে বরফ দরকার হতো সারা দিনে ১২-১৫ ক্যান। গতকাল দুপুর পর্যন্ত চারটি ক্যানও বিক্রি হয়নি।

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোলনচাপা দত্ত বছরখানেক আগে নিজ উদ্যোগে শুরু করেছিলেন মসলার ব্যবসা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মসলা সংগ্রহ করে অনলাইনের মাধ্যমে তা বিক্রি করেন। মসলার বড় অংশটি আসে দক্ষিণাঞ্চলের শিপমেন্টের মাধ্যমে, কিন্তু পরিবহন চলাচল সীমিত করায় ব্যবসায় ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তাঁর। 

তিনি বলেন, নৌযোগাযোগ বন্ধ, তাই শিপমেন্ট পেতেও দেরি হবে। গণপরিবহন নেই, যাতায়াত আরো ব্যয়সাপেক্ষ হবে। ব্যাংকিং লেনদেনের সময়ও কম, এখানেও সমস্যায় পড়তে হবে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, পহেলা বৈশাখ ও দুই ঈদকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ২০-২২ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। গত বছর করোনার লকডাউনের কারণে লেনদেন তিন-চার হাজার কোটি টাকায় নেমে আসে। এতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রণোদনা ও সব কার্যক্রম স্বাভাবিক করে দেওয়ায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠছিলেন ব্যবসায়ীরা। এবারের বিধি-নিষেধ দিলেও সব কার্যক্রম চলছে।

তিনি আরও বলেন, অফিস-আদালত, কলকারখানা, বইমেলা, ব্যাংক-এসব প্রতিষ্ঠান খোলা ও কার্যক্রম চলছে ঠিক আগের মতোই। গত বছরের লোকসানের হিসাব থেকেই বোঝা যায় এবারের বিধি-নিষেধেও আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে দোকানপাট ও বিপণিবিতান খুলে দেওয়ায় আমরা কিছুটা খুশি।

এদিকে ব্যবসায়ীরা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি। চিঠিতে তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ক্ষুদ্র, পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকান সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে খোলা রাখার অনুরোধ করেছেন।

চিঠিতে তারা জানিয়েছেন, গত বছরের (২০২০ সাল) লকডাউনে তারা ৬-৭ হাজার কোটি টাকার পুঁজি হারিয়েছেন। সেই সঙ্গে রমজান ও ঈদ উপলক্ষে ২০-২২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। বড় ধরনের ক্ষতির পরও করোনার মধ্যে ক্ষুদ্র, পাইকারি, খুচরা মার্কেট ও দোকানিরা দেশ ও জাতির স্বার্থে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ব্যাপারে তাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল।

এতে ব্যবসায়ীরা আরও উল্লেখ করেন, কিন্তু এ বছর ক্ষুদ্র, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কিছুটা ব্যবসার আশায় নতুন করে বিনিয়োগ করেছেন। অথচ হঠাৎ করেই লকডাউনের ঘোষণায় ফের ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারানোর শঙ্কায় পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের সীমিত পরিসরে ব্যবসা করার সুযোগ না দিলে পুঁজিসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বেন।

জানা যায়, ১ এপ্রিল থেকে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার। ফলে হোটেলগুলো অঘোষিতভাবে বন্ধ। মালিকপক্ষ কর্মচারীদের মার্চ মাসের বেতন ধরিয়ে দিয়ে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠায়। এপ্রিল মাসের শুরুতেই সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা হাজার হাজার কর্মচারীর।

হোটেল-রেস্তোরাঁয় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য, সাত শতাধিক আবাসিক হোটেল-গেস্টহাউস ও রেস্তোরাঁয় চাকরি করছেন অন্তত ৩০ হাজার লোক। সাত দিনের বিধি-নিষেধ শুরুর পর অন্তত ১৫ হাজার কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক ছাঁটাই করা হয়েছে।#

প্রজন্মনিউজ২৪/ফাহাদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ