ভয়াবহ রুপে করোনা, সবার মনে হয় চেনা !

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০৫:৫২:২৪ || পরিবর্তিত: ১০ এপ্রিল, ২০২১ ০৫:৫২:২৪

ভয়াবহ রুপে করোনা, সবার মনে হয় চেনা !

করোনা সংক্রমণ হার ঊর্ধ্বমুখী। আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অফিস, আদালত, বাজার, গণপরিবহনে চলাফেরা করছে মানুষ। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই।

দেশে সংক্রমণ শুরু হওয়ার এক বছর পর সংক্রমণ পরিস্থিতির নতুন মাত্রায় উদ্বেগ জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চলাফেরার ক্ষেত্রে একজন সচেতন নাগরিকের মতো দায়িত্ব পালন করতে হবে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা জারি করেছে প্রশাসন। চিকিৎসকরা বলেন, টিকা নিলেও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সুস্থ থাকতে চাইলে এগুলো অবশ্যই মানতে হবে।

শনিবার(১০ই এপ্রিল)রাজধানীসহ সারাদেশে মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে নয় হাজার ৬৬১ জনে। ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে ৫৩ জন পুরুষ এবং ২৪ জন নারী।

এ সময়ে নমুনা পরীক্ষায় নতুন আরও পাঁচ হাজার ৩৩৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। ২৪ ঘণ্টায় দেশের সরকারি-বেসরকারি ২৪৩টি ল্যাবরেটরিতে ২৫ হাজার ১৮৫টি নমুনা সংগ্রহ ও ২৬ হাজার ৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়।

শনিবার (১০ই এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় ২৬ হাজার ০৭৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ সময়ে নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।

এ সময়ে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তিন হাজার ৮৩৭ জন। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। রোগী বেড়ে যাওয়ায় আইসিইউ শয্যা ফাঁকা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।

করোনা সংক্রমণের হার হঠাৎ করে ঊর্ধ্বমুখী হলেও মানুষের মধ্যে তেমন সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক দূরত্ব না মেনে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। খুব অল্পসংখ্যক মানুষের মুখে মাস্ক। অধিকাংশের মাস্ক থুঁতনিতে। অনেকে কোমরে চাবির রিংয়ের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছেন মাস্ক। হাত না ধুয়ে চলছে হালকা নাস্তা খাওয়া।

  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়াদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন বয়স্করা। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে অন্যান্য রোগ।  

সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) আয়োজিত করোনা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিএসএমএমইউর করোনা ইউনিট ও কেবিনে সাত হাজারেরও বেশি রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। সেখানে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগী ভর্তি হন। তাদের মধ্যে মৃত্যু হয় সাড়ে ৫০০ রোগীর। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন সাড়ে তিন হাজার রোগী।

যেসব রোগী রিলিজ পেয়েছেন তাদের পোস্ট-কোভিড ফলোআপ চিকিৎসার সময় দেখা গেছে, রোগীভেদে অনেকেই শ্বাস নিতে কষ্ট, শুকনো কফ, ইনসোমনিয়া (ঘুমের ব্যাঘাত), মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, অবসাদগ্রস্ত, দুর্বলতা, বুক ধড়ফড় করা, ভার্টিগো (মাথা ঘুরানো) ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে ভুগছেন। করোনায় এত মানুষ আক্রান্ত ও মৃত্যু হতে দেখেও হুশ হচ্ছে না মানুষের। গরীব মানুষ মনে করছে, করোনা তাদের রোগ নয়।

মধ্যবিত্তরাও করোনাকে তোয়াক্কা না করে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করছেন। ১৪ এপ্রিল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে সাত দিনের কঠোর লকডাউন পালিত হবে।দেশের মানুষকে সার্বক্ষণিক মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পুরোপুরি উদ্বুদ্ধ করতে না পারলে সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করা যাবে না।

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বর্তমানে সাত দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলাকালে মার্কেট ও শপিংমল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকছে। করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে হাজার হাজার মানুষ মার্কেটে যাচ্ছে।

১৪ এপ্রিল থেকে সরকার কঠোর লকডাউন ঘোষণা করছে এবং এরপর সেই লকডাউন আরও বাড়তে পারে মনে করে মানুষ ঈদকে সামনে রেখে শপিং করছেন। কিন্তু এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না বেশিরভাগই, যা ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/অসীম আল ইমরান
 
 

 

 
  
 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ