গমের বাজার চড়া

মুনাফার আশায় কৃষকরা

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ, ২০২১ ১১:৫৭:৩৩

মুনাফার আশায় কৃষকরা

দেশের বাজারগুলোতে গমের দাম বেশ চড়া থাকার অন্যতম কারন হলো আমদানি ঘাটতি। অন্যদিকে কৃষকদের মাঠে এখন দোল খাচ্ছে আধা-পাকা গম। অল্প কিছুদিনের মধ্যে পেকে গেলেই মাড়াই করা হবে। তাই কৃষকরা এবার গম বিক্রি করে ভালো মুনাফার আশা করছেন।

বাংলাদেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে গমের উৎপাদন বেশি। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা গ্রামের কৃষক মজিদ মিয়া এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে তার গম মাড়াই শুরু হবে।

এখন গমের বাজারও বেশি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর গমে ভালো মুনাফা হবে। গত বছরের থেকে এ বছর ফলন ভালো।

তিনি বলেন, গত বছরের থেকে এ বছর ফলন ভালো। এখন বাজারও বেশি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর গমে ভালো মুনাফা হবে।

উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. রিয়াজ উদ্দিন।

তিনি বলেন, এবছর পুরো জেলায় দুই হাজার ২২৫ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল দুই হাজার ৮৫ হেক্টর। এ বছর কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না থাকা এবং আবহাওয়া উপযোগী থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। প্রতি হেক্টরে এ বছর দুই টন গম বেশি হবে বলে আমরা আশা করছি। গত বছর রংপুরে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন ছিল ৩ দশমিক ৪৮ টন।

বর্তমান পরিস্থিতি

যদিও দেশে গম চাষের পরিমাণ ক্রমশই কমছে। লাভ কম, শ্রমিক সঙ্কট, বৈরী আবহাওয়া, ব্লাস্ট আতঙ্ক ও ভালো মানের বীজের অভাবে গম চাষের ঝুঁকি নিতে চাইছেন না অনেক চাষি। গমের পরিবর্তে ভুট্টা চাষে মনোযোগী হয়েছেন অনেকে।

শুধু এ বছর নয়, ক্রমান্বয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ টনে পৌঁছাতে কাজ করা হচ্ছে

তবু এ বছর গমের আবাদ ভালো হওয়ায় গত কয়েক বছরের তুলনায় উৎপাদন বাড়বে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। তারা জানান, চলতি মৌসুমে দেশে গমের উৎপাদন ১৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। উদ্ভাবিত নতুন জাতের বীজ ব্যবহার করে গমের উৎপাদন এ বছর বেড়েছে।

ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সারাদেশে এবার গমের ফলন ও উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় ৬০ টন প্রজনন বীজ দেয়া হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশক ও সেচ খরচ কম লাগায় উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের বীজে গম চাষে আগ্রহ বেড়েছে। সবকিছু মিলে এবার ফলন বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, শুধু এ বছর নয়, ক্রমান্বয়ে উৎপাদন বাড়িয়ে ২০২৫ সালের মধ্যে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লাখ টনে পৌঁছাতে কাজ করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, এ বছর তিন লাখ ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ছয় হাজার হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে তিন লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল।

দেশে গমের সর্বোচ্চ উৎপাদন হয় দিনাজপুর জেলায়। ওই জেলায়ও গত বছরের চেয়ে এ বছর গমের চাষ বেড়েছে। গত বছর দিনাজপুরে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকরা গম চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ছয় হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।

চাষিরা যা বলছেন

বিভিন্ন এলাকা থেকে পাওয়া তথ্যে উঠে এসেছে, চলতি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের গম যেমন বারি গম ২৫, ২৮, ৩০, ও ৩৩ জাতের শস্যটির আবাদ করেছেন কৃষকরা। তাছাড়া গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আওতায় প্রদর্শনীর মাধ্যমে অনেক জমিতে গম আবাদ হয়েছে এ বছর। অনুকূল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের উপযুক্ত পরামর্শ-দিকনির্দেশনা এবং কৃষকদের সঠিক পরিচর্যার কারণে বিভিন্ন জেলায় গমের ফলন আশাব্যঞ্জক।

বেশ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে গম চাষে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা খরচ হয়েছে এ বছর। প্রতি বিঘায় ১১ থেকে ১২ মণ গম পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তারা। গমের দাম মনপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকা চলছে। তাতে বিঘাপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা মুনাফা থাকবে কৃষকের।

দেশে বছরে গমের চাহিদা ৭১ লাখ টন। যার বেশিরভাগই আমদানি করতে হয়। গত বছর দেশে গম উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১২ লাখ টন। বাকি গম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বছরে গড়ে ৬০ লাখ টন গম আমদানি হচ্ছে। এ বছর এখন পর্যন্ত (২০২০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ২২ মার্চ পর্যন্ত) ৩৬ লাখ ৮৯ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে।

নতুন জাতে নতুন আশা

সম্প্রতি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী উচ্চ ফলনশীল গমের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। তাতে দেশে গমের চাষ ও উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। দেশে দিন দিন গমের চাহিদাও বাড়ছে। তবে আবহাওয়া গম চাষের জন্য ততটা উপযোগী না হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পুরো দেশে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না।

দেশে আগে গমের অনেক জাত জনপ্রিয় হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো সহজেই ব্লাস্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতো। নতুন উদ্ভাবিত জাত, যেমন বারি গম-৩৩, ডব্লিউএমআরআই গম-২ ও ডব্লিউএমআরআই গম-৩ সহ আরও কয়েকটি জাত ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এসব গমের জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫ দিন। গড় ফলনও বেশি, হেক্টরপ্রতি ৪.৬ থেকে ৫ টন পর্যন্ত।

২০১৬ সালে দেশে প্রথম ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয়। ব্লাস্টে আক্রান্ত ফসলের উৎপাদন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ কমে যায়।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজমুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ