কেমন আছে বিলিনিয়ারদের ক্লাব ‘গিভিং প্লেজ’

প্রকাশিত: ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১ ০৪:৩৯:০২

কেমন আছে বিলিনিয়ারদের ক্লাব ‘গিভিং প্লেজ’

 ২০১০ সালের আগস্টে বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটসহ ৪০ জন ধনী ব্যক্তি তাঁদের সম্পদের সিংহভাগ জনহিতকর কাজে ব্যয় করার লক্ষ্য নিয়ে ‘গিভিং প্লেজ’ ক্লাব তৈরি করেন
২০১০ সালের আগস্টে বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটসহ ৪০ জন ধনী ব্যক্তি তাঁদের সম্পদের সিংহভাগ জনহিতকর কাজে ব্যয় করার লক্ষ্য নিয়ে ‘গিভিং প্লেজ’ ক্লাব তৈরি করেন
বিশ্বে অতি ধনীদের মধ্যে সবচেয়ে কে বেশি জনকল্যাণে ভূমিকা রেখেছেন—এমন প্রশ্ন করা হলে প্রথমেই নাম আসবে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের। সবচেয়ে বেশি সময় শীর্ষ ধনীর আসনে থাকা গেটসের এই মানবপ্রীতি আজকের নয়। ২১ বছর আগে ২০০০ সালে বিল গেটস ও স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস প্রতিষ্ঠা করেন মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন। তবে এতে থেমে নেই তাঁরা। এরপরও জনকল্যাণে নানা উদ্যোগ নেন এই দম্পতি। ১০ বছর আগে তেমনই এক অভিনব উদ্যোগ ছিল ‘গিভিং প্লেজ’। অর্থাৎ দানের অঙ্গীকার। তবে ওই উদ্যোগের মূল কারিগর ছিলেন আরেক মার্কিন ধনকুবের, বিনিয়োগ গুরু বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ওয়ারেন বাফেট। বাফেট ২০০৬ সাল থেকে মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনে দান করে আসছেন। শত কোটিপতিদের এই ‘গিভিং প্লেজ’ সংস্থার উদ্দেশ্য হলো তাঁদের সম্পদের সিংহভাগ জনকল্যাণে ব্যয় করা।  

২০০৯ সালে এক নৈশভোজে গেটস-বাফেট জনহিতকর কাজের ক্ষেত্রে নতুন এক ইতিহাস গড়েছিলেন। এর পরের বছর অর্থাৎ ২০১০ সালের আগস্টে বিল গেটস ও ওয়ারেন বাফেটসহ ৪০ জন ধনী ব্যক্তি তাঁদের সম্পদের সিংহভাগ জনহিতকর কাজে ব্যয় করার লক্ষ্য নিয়ে এই ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন। এটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সে সময় বিল গেটস বলেন, এটি পরোপকারের এক বিস্ময়কর ঐতিহ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা শেষ পর্যন্ত বিশ্বকে আরও উন্নত স্থান হতে সাহায্য করবে।

 প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন ২৪টি দেশের ২১৮ জন শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। যাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে।
প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন ২৪টি দেশের ২১৮ জন শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। যাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে।
গত বছর ১০ বছর পূর্ণ করেছে এই সংস্থা। প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত এই সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছেন ২৪টি দেশের ২১৮ জন শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। যাঁদের বয়স ৩০ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। ক্লাবে যোগ দেওয়ার শর্ত দুটো। সম্পদ হতে হবে কমপক্ষে ১০০ কোটি ডলার, আর এর অন্তত ৫০ শতাংশ জনহিতে দান করার ঘোষণা দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী বেঁচে থাকতে বা মারা যাওয়ার পর নিজেদের মোট সম্পদের কমপক্ষে অর্ধেকটা দান করা হবে। প্রতিষ্ঠা হওয়ার চার বছরের মধ্যে দানের পরিমাণ ৫০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। গবেষণা সংস্থা ওয়েলথ-এক্স-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মধ্যে এটি ৬০০ বিলিয়ন ডলার হয়ে যাবে। গত বছর ১৩ জন ধনী নতুন যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের ঘোষিত দানের পরিমাণ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার।

গিভিং প্লেজের উল্লেখযোগ্য হলো, ধনীদের এই অঙ্গীকার বাধ্যতামূলক নয়। কাউকে বাধ্য করা হয় না এবং সম্পত্তির ওপর কোনো ধরনের তদারকিও করা হয় না। বলতে গেলে গিভিং অঙ্গীকার খুব কঠিন নয় ধনীদের জন্য। এটি দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই বা কীভাবে অর্থ দেওয়া যেতে পারে, সে সম্পর্কে কোনো প্রয়োজনীয়তাও আরোপ করা হয়নি। তারপরও এর মূল গুরুত্ব হলো এটি বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের আচরণে নাটকীয় পরিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেছে। গেটস এবং বাফেট, যাঁরা তাঁদের সম্পদ বিশ্ব স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কাজে ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।


যেভাবে খরচ করা হয় অর্থ
দানের প্রতিশ্রুতি চালু করার পর এ থেকে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিশ্ব স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জরুরি ত্রাণ, দারিদ্র্যসহ নানা বিষয়ে তহবিল গঠনের ৩৬ বিলিয়ন ডলারের (৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার) বেশি অনুদান দিয়েছেন। গিভিং প্লেজের মাধ্যমে ২০১৫ সালে মার্ক জাকারবার্গ এবং প্রিসিলা চ্যান ফেসবুকের শেয়ারের ৯৯ শতাংশ দাতব্য প্রতিষ্ঠানের কাছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মেয়ে ম্যাক্সের জন্মের পর এই ঘোষণা দেন এই দম্পতি। এই দম্পতি ২০১০ সালে প্রথম স্বাক্ষরদানকারী দলে ছিলেন। এর পরপরই শিক্ষা এবং চিকিৎসা গবেষণায় তাঁরা দান করছেন বেশি। ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সিডিসি ফাউন্ডেশনকে আড়াই কোটি ডলার প্রদানসহ কল্যাণকর কাজের জন্য ১৬০ কোটি ডলারের বেশি অনুদান দেন তাঁরা। ইলন মাস্ক বিজ্ঞান শিক্ষা এবং পুনরায় বিকিরণযোগ্য শক্তি গবেষণায় সমর্থন দিয়ে অনুদান দেন।


দানে সেরা বাফেট
বর্তমান বিশ্বে দানে সবার শীর্ষে রয়েছেন ওয়ারেন বাফেট। নবতিপর এই ধনী এখন পর্যন্ত ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন। এই দানের বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৭৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার সমান বা এক বছরের বাজেটের চেয়েও বেশি। গত জুলাইয়ে বাফেট দাতব্য কাজের জন্য ২৯০ কোটি ডলার দানের ঘোষণা দেন।


এই ক্লাবে নেই জেফ বেজোস
মজার হচ্ছে বর্তমানের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ই–কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এই ক্লাবের সদস্য নন। ২০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি সম্পদের মালিক বেজোস। এই দাতব্য প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না হওয়ায় বেশ সমালোচিত তিনি। বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ ধনীর মধ্যে কেবল বেজোসই এই প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেননি। তবে বেজোস যোগ না দিলেও তাঁর সাবেক স্ত্রী ম্যাকেঞ্জি স্কট এতে স্বাক্ষর করেন। ২০১৯ সালে জেফ বেজোসের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর আমাজনের ৪ শতাংশ শেয়ার পান ম্যাকেঞ্জি। সেই সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ থেকে যে ৩৭ বিলিয়ন ডলার সম্পদ তিনি পেয়েছেন, সেটির অর্ধেক এই ফান্ডে দান করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

কেমন করছে শত কোটিপতিদের অভিনব সেই ক্লাব
প্রতিশ্রুতি নিয়ে যে বিতর্ক
গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অব পলিসি স্টাডিজের এক (আইপিএস) প্রতিবেদনে দেখা যায়, শুরুতে এই ক্লাবের সদস্য হওয়া প্রায় ৭৫ শতাংশ ধনীরই সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে। অনেক স্বাক্ষরকারী অর্থ দেওয়ার চেয়ে দ্রুত আরও বেশি অর্থ করছেন। ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ, হোম ডিপোর প্রতিষ্ঠাতা কেন ল্যাঙ্গোন, সেলসফোর্সের মার্ক বেনিফসহ আসল স্বাক্ষরকারীদের নয়জনেরই সম্পদ ২০০ শতাংশ বেড়েছে। আইপিএস মনে করে, অনেক অতি ধনী সমাজসেবক বেসরকারি ফাউন্ডেশনে প্রচুর অনুদান দেয় কর কমানোর লক্ষ্য নিয়ে। অর্থাৎ কর থেকে রেয়াত পাওয়ার জন্য এই দান করে। কর কমাতে এই অনুদান আইনত তাদের সাহায্য করে।

প্রজন্মনিউজ২৪/মাহমুদুল হাসান

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ