প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী, ২০২১ ০৫:৩৫:০০ || পরিবর্তিত: ২৭ জানুয়ারী, ২০২১ ০৫:৩৫:০০
দেলাওয়ার হোসাইন:
নগরীজুড়ে শীতের আগমনে রাত বাড়তেই নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে শহর। কমে যায় যান ও পথচারীর চলাচল।
এ নিস্তব্ধতায় যেনো শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দেয়। মানুষ যখন নিজ ঘৃহে ঘুমে ভিবোর, তখন রাজধানীর লাখও ছিন্নমূল মানুয়ের রাত কাটে আগুন জ্বালিয়ে এবং সকালের সূর্যের তাপে।
এমনোই ছিন্নমূল মানুষদের সাথে শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে গত ৩ রাত কথা বলে এ প্রতিবেদক। শহরজুড়ে দেখা যায়, জেঁকে বসা শীতে জবুথবু ছিন্নমূল এ সকল মানুষ।তাদের দেখার কেউ নেই।শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে জেগে থাকেন তারা।
একটু উষ্ণতা পেতে গরম কাপড়ের অপেক্ষায় পথচেয়ে নির্ঘুম রাত কাটান তারা। কেউ কেউ গরম কাপড় নিয়ে আসলেও সবার ভাগ্য জুটেনা। বাড়ে অপেক্ষর প্রহর।ভোরে অভিমানী সূযের দেখা মিলতেও অপেক্ষা একটু দীর্ঘ।
কিন্তু অপেক্ষা করেও কোন কোন দিন মিলেনা সূর্যের দেখা।শীতের মৌসুমে নগরীর ছিন্নমূল মানুষের রাত কাটে অবর্ণনীয় কষ্টে।
এসব সহায়-সম্বলহীনদের দেখা যায় কেউ পেতেছে বিছানা, কেউবা বিছানা ছাড়াই শুয়ে পড়ে সড়কে, ফুটপাতে, গাছের তলায় ও ব্রিজের নিচে। তাদের কেউ কেউ শ্রমজীবী, কেউবা নিতান্তই অসহায়।এভাবেই শীতের প্রতিটি রাত কাটছে ইট-পাথরের নগরীতে প্রায় সাত লাখ দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের।
সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শ্যামলী, কমলাপুর রেল স্টেশন আজিমপুর করবস্থান, গুলিস্তান এলাকা এবং বস্তিগুলো ঘুরে দেখা গেছে রাতের হিমশীতল ঢাকার আকাশের নিচে শুয়ে আছে অসংখ্য ছিন্নমুল মানুষ।যার কাছে যতটুকু কাপড় আছে তা দিয়ে শীত নিবারণে বৃথা চেষ্টা করছেন।
এসকল মানুষ বলছেন, করোনায় ভাইরাসে তাদের মধ্যে বেকাত্বের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ।খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তাদের। অসুস্থতায় ভুগছেন অনেকে।অতিরিক্ত ঠাণ্ডা, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশিসহ হৃদরোগে এ সময় অনেকে মারাও যান। যাদের মধ্যে বেশির ভাগ প্রবীণ ও শিশু।শীতের দুর্ভোগের ফলে তাদের এখন বেঁচে থাকাই দায়।
রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে ফুটপাথে পুরো শরীরে একটা চাদর জড়িয়ে শুয়ে আছে কেউ। পাশে ৮ বছরের একটি মেয়ে।কাছে গিয়ে জানা গেল তার নাম রোকাইয়া।শুয়ে থাকা ব্যাক্তি তার মা। গত কিছুদিন অসুস্খ। গতকাল থেকে উঠতেও পারছেনা।রোকাইয়া জানায়, ভবঘুরে জীবন তাদের।করোনার আগে মা যখন যে কাজ পেতেন তা দিয়েই চলতো।আমি ফুল বিক্রি করতাম।
একটু সামনে যেতেই মসজিদের কোলে মশারী দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে।তাদের মধ্যে একজন আজাদ(৪৭) ।সে জানায়, কাজ করতেই আইছিলাম শহরে। রাতদিন শহরের গলি গলি ঘুরেও কাজ পান না। শীত বাড়ছে। আর এখন শরীর খারাপ। শীতের জন্য একটা জেকেট ছাড়া কিছুই নেই। ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পেরে রাতে না ঘুমিয়ে বসে থাকেন। অপেক্ষা করেন কেউ যদি একটা কম্বল নিয়ে আসে।
রাজধানীর প্রান্থপথ মোড় হয়ে গ্রীন রোডে দেখা যায় আজাদ ও রোকেয়াদের মতো আরো অনেকেই শুয়ে আছেন। যারা রাত জেগে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিলেন। হাইকোর্ট মাজার গেটে এবং বিজয় সরণী গিয়ে দেখা যায় সেখানে অবস্থানরতদের প্রায় সবাই নির্ঘুম। তাদের কয়েকজন জানান, রাত বাড়ার সাথে শীত বাড়তে থাকে। রাস্তায় কাপড় বিছিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করেও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ নিচে থেকে যে ঠাণ্ডা ওঠে তাতে শরীরে বরফের ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। যার কারণে নিরুপায় হয়ে বসে আছেন তারা।
গত তিন দিন রাতে রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষদের খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায়, অনেককে নিজ উদ্ধেগে এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষে শীত পোশাক বিতরণ করছে।গতকাল বৃহষ্পতিবার মিরপুর রোডের ঢাকা কলেজের আশাশে কম্বল বিতরণ করতে দেখা যায় ঢাকা কলেজ ছাত্র কল্যাণ ফাউন্ডেশন সদস্যদের। এসময় সংগঠনটির চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন,অপ্রিয় হলেও সত্য শুধুমাত্র বক্তব্য এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে গরিব-দুঃখী মানুষের কথা বলা হয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সহযোগিতার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না। যদি এগিয়ে আসতো তাহলে এত শীতের মধ্যেও কাউকে শীতের পোশাক না থাকার কারণে রাতে ফুটপাথে কষ্ট করে রাত যাপন করতে হতো না। সমাজের এলিট শ্রেণী অথবা ধনী লোক তারা যদি এ শীতার্ত মানুষের পাশে পাশে এসে দাঁড়ায় এবং যাকাত দেয় তাহলে বাংলাদেশে গরীব থাকার কথা না।
ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তি (পুনর্বাসন) আইন- ২০১১’তে বলা হয়েছে, ভবঘুরে, ভিক্ষুকদের আশ্রয়, পুনর্বাসন, চিকিৎসাসহ অন্যান্য দায়-দায়িত্ব বহন করবে সরকার। কিন্তু এই আইনের বাস্তবায়ন নেই বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল করিম দেশ রূপান্তরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মতে দেশে একেবারে ছিন্নমূল মানুষ রয়েছে ৫০ হাজার। আর প্রতি বছরে এদের সংখ্যা বাড়ছে দুই হাজার করে। প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানেই ছাঁটাই হচ্ছে। সব মানুষ তো আর চুরি করতে পারেনা। বাড়ি ভাড়া সহ নানা খরচ।
দিনে আনে দিন খায় তাদের অবস্থা তো আরো নাজুক। তারাই মূলত ভিক্ষাবৃত্তি নেমেছে। ভিক্ষুক হিজড়াদের জন্য আইন থাকেও আইনের শাসন নেই, কিংবা আইন থাকলেও এর প্রয়োগ নেই। সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সীমাবদ্ধতাও আছে।
অন্য দিকে সরকারি তথ্যানুযায়ী ঢাকার তিন হাজার ৩৯৪টি বস্তিতে সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বাস করে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) করা রিপোর্টের ভিত্তিতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বস্তির সংখ্যা এক হাজার ৬৩৯টি। মোট খানা এক লাখ ৩৫ হাজার ৩৪০টি। এসব বস্তিতে চার লাখ ৯৯ হাজার ১৯ মানুষ থাকে। অপর দিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক হাজার ৭৫৫টি বস্তিতে মোট খানা ৪০ হাজার ৫৯১টি।
সেখানে এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৬ জন বসবাস করে।
শব্দ: ৭৫৮
প্রজন্মনিউজ২৪/গাজীআক্তার
পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে কুয়াকাটা
বিশ্ব বই দিবসে নিজের কক্ষেই লাইব্রেরি গড়ে তুললেন রাবি শিক্ষার্থী আকরাম
পটুয়াখালীর বাউফলে হিটস্ট্রোকে পুলিশ সদস্যের মৃত্যু
বোরহানউদ্দিন উপজেলায় ভোটার স্মার্ট কার্ড বিতরণ
ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথীর ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ
পদ্মায় গোসলে নেমে একসঙ্গে নিখোঁজ ৩ কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
আধুনিক ওয়ার্ড গঠনে কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চান সোহেল
বান্দরবানের তিন উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি
ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসির পাকিস্তান সফরের কারণ কী
খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করা হয়েছে তা সর্বজনবিদিত
Severity: Notice
Message: Undefined index: category
Filename: blog/details.php
Line Number: 417
Backtrace:
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler
File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view
File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once