পাহাড়ী অর্থনৈতিতে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা

সাজেকে পর্যটকদের জন্য মসজিদ নির্মাণ সময়ের দাবী

প্রকাশিত: ০২ ডিসেম্বর, ২০২০ ০২:১৫:৩৩

সাজেকে পর্যটকদের জন্য মসজিদ নির্মাণ সময়ের দাবী

নুর মোহাম্মদ, নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে তিন পার্বত্য জেলার প্রাকৃতিক লীলাভূমি। জেলাগুলোতে প্রতিদিন ছয় হাজার পর্যটক আসে এরমধ্যে শুধুমাত্র সাজেকেই আসে তিন হাজার পর্যটক। যার ৯৫ শতাংশই মুসলমান।

ধর্মীয় সম্প্রতিতে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে রুল মডেলও বটে। এরই ধারাবাহিকতায় সাজেকে সব ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয় থাকলেও মসজিদ না থাকায় হতাশ পর্যটকরা। সরকারী ছুটি শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় এই দুইদিন পর্যটক সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু শুক্রবারের জুমার নামাজ না পড়তে পাড়ায় বেশিরভাগ পর্যটক হতাশ হচ্ছে। এরই ধারাবিাহিকতায় জেলা পরিষদ এখানে একটি মসজিদ নির্মান শুরু করে। কিন্তু পাহাড়ী সন্ত্রাসী গোষ্টি তাতে বাধাঁ দেয়।

পর্যটন খাতের বিকাশে ও পর্যটকদের সুবিধায় ‘দারূস সালাম জামে মসজিদ’ নামে ধর্মীয় এই স্থাপনাটি নির্মাণ করছে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ। কিন্তু পর্যটনবান্ধব এই প্রকল্পটি নিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা।

সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, সপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটকের সমাগম ঘটে। যাদের প্রায় ৯৫ শতাংশই মুসলিম পর্যটক। সাজেকগামী এসব পর্যটকের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি মসজিদ নির্মাণের। বিপুল সংখ্যক এই পর্যটকের সুবিধার কথা বিবেচনা করে রাঙামাটি জেলা পরিষদ সাজেকের হেলিপ্যাডে দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এদিকে বাধা উপেক্ষা করে মসজিদ নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে। কিন্তু জেলা পরিষদের এই মহৎ উদ্দেশ্যকে বানচাল করে দেয়ার জন্য কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এবং পাহাড়ে সন্ত্রাসীরা নানাভাবে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মসজিদ নির্মাণ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে পাহাড়ের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। 

জানা যায়, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সরকারি জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করলেও সেনাবাহিনীকে জড়িয়ে কুৎস রটনা করছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা। সেনাবাহিনী পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে তাদের জায়গায় জোরপূর্বক মসজিদ নির্মাণ করছে এবং এতে কাজ করতে স্থানীয় উপজাতিদের বাধ্য করা হচ্ছে- এমন প্রপাগান্ডা চালানো হচ্ছে।

কিন্তু জেলা পরিষদ জানিয়েছে, তারা মসজিদটি সরকারি জায়গায় নির্মাণ করছে। এটি সেনাবাহিনীর কোনো প্রকল্প নয়। তবে সেনাবাহিনী যেহেতু সাজেক পর্যটন এলাকার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তার অংশ হিসেবে তারা এই স্থানটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

সাজেক ভ্যালিতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের জন্য বেশ কয়েকটা উপাসনালয় থাকলেও ছিলো না মুসলিম পর্যটকদের নামাজ আদায় করার মসজিদ। বর্তমানে নামাজ পড়ার জন্য সেনাবাহিনীর ক্যাম্পের ছোট একটি নামাজ ঘরে যেতে হয়। ফলে ধর্মপ্রাণ পর্যটকদের নামাজ আদায়ে পড়তে হয় বেকায়দায়। এজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে মসজিদ নির্মাণের জন্য পর্যটকদের আকুল আবেদন ছিলো সব-সময়।

সাজেকে রুন্ময়ের আগে হাতের বাম পাশে পুরাতন হেলিপ্যাডে ‘দারূস সালাম জামে মসজিদ’ এর সাইনবোর্ড ঝুলছে। জানা যায়, এটি খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকে আসার পথে অনেক দূর থেকে দেখা যাবে। ফলে নির্মাণার্ধীন দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটি অপরূপ সুন্দর্যের সাজেক পর্যটন কেন্দ্রে যোগ করবে নতুন মাত্রা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাজেক ভ্রমণে আরও বেশি আকৃষ্ট হবে। যা স্থানীয় উপজাতিদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নির্মাণাধীন মসজিদের সাইনবোর্ড দেখে রাঙামাটি জেলা পরিষদকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসলিম দর্শনার্থীরা। স্থানীয় এক জীপগাড়ি চালক বলেন, শুক্রবারে আমরা ভাড়া নিয়ে আসলে জুমার নামাজ পড়ার সুযোগ হতো না, যদি জামে মসজিদটি নির্মাণ হয় তাহলে পর্যটকদের পাশাপাশি আমরাও নামাজ আদায় করতে পারবো।

চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটক সাকিব বলেন, সাজেকের নয়নাভিরাম দৃশ্য আকর্ষিত করলেও এখানে মুসলমান পর্যটকদের জন্য কোনো মসজিদ নেই। ফলে মুসলমানরা ঠিকমতো নামাজ আদায় করতে পারছে না।

স্থানীয় এক রিসোর্ট মালিক বলেন, এখানে বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটক আসছে। মসজিদ না থাকায় নিজস্ব উদ্যোগে ছাড়া নামাজ আদায়ের সুযোগ নেই। শুক্রবার জুমা আদায়ের কোনো সুযোগ নেই। মসজিদ নির্মাণ হলে এ সমস্যা লাঘব হবে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশ্লেষক সিদ্দীকি শাহিন বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সর্বদা উপজাতীয় জনগণের কল্যাণে কাজ করে। সুতরাং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে যতই কুৎসা রটনা করার চেষ্টা করা হোক না কেন সাধারণ জনগণ তা কখনোই বিশ্বাস করবে না এবং বিভ্রান্ত হবে না। সন্ত্রাসীরা অপপ্রচার চালিয়ে পর্যটনকে বন্ধ করতে চায়, কারণ পর্যটক গেলে তাদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম অবাধে পরিচালনায় বাঁধা সৃষ্টি করবে।

সরকারি জায়গায় ‘দারূস সালাম জামে মসজিদ’ নির্মাণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ব্রিষকেতু চাকমা। তিনি বলেন, স্থানীয় অধিবাসীদের জায়গায় নির্মাণ করার তথ্য সত্য নয়। সরকারি খাস জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পরিষদ এখানে অর্থায়ন করছে। আর তত্বাবধানে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

পর্যটকরা বলছেন, সকল ধর্মের সম্প্রতির দেশে সাজেকে সকল ধর্মের উপাসনালয় থাকবে কিন্তু মুসলিমদের জন্য সমজিদ থাকবেনা কেন। মসজিদ হলে পাহাড়ী ও বাঙ্গালীদের মধ্যে সৌহার্দ ও পারস্পারিক বন্ধন আরো দৃঢ় হবে। দূরত্ব কমে আসবে। সাজেকের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টির অর্থনীতি আরো মজবুত হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/নুর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ