দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে

প্রকাশিত: ৩০ নভেম্বর, ২০২০ ১০:৪৩:১০

দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে

দেশে শীতের শুরুতেই করোনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে৷হিসাব অনুযায়ী, করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা গত দুই সপ্তাহে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে৷

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সামলাতে প্রস্তুতির বিষয়টি তাই আলোচনায় উঠে এসেছে৷

দেশে নতুন করে লকডাউন আরোপের কোনো ইঙ্গিত নেই৷জানা গেছে, সরকার এবার লকডাউন ঘোষণার কোনো পরিকল্পনা করছে না৷তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আরো কড়া নির্দেশনা দিতে পারে৷বিশেষ করে ঘরের বাইরে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে এখন যে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে তাতে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হতে পারে৷

তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিজ্ঞতা হলো, এখনো বাইরে বের হওয়া লোকজনের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ মাস্ক ব্যবহার করেন না৷জরিমানা ও মাস্ক বিতরণ করেও তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না৷আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া এখন সব জায়গায়তেই স্বাভাবিক কাজকর্ম চলছে৷তবে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ আছে৷আর সময়মত করোনা ভ্যাকসিন পাওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার৷

দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ৷এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ প্রথম করোনায় প্রথম মৃত্যুর খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর৷দেশে করোনায় এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ছিলো ৩০ জুন৷সেদিন মৃতের সংখ্যা ছিল ৬৪৷এরপর সর্বনিম্ন ৭ নভেম্বর, ১৩ জন৷

তবে ৭ নভেম্বরের পর থেকে করোনায় মৃতের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে৷গত ১৭ নভেম্বর করোনায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়, যা ৭ নভেম্বর পরবর্তী সময়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড৷আর সর্বশেষ ২৯ নভেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ২৯ জন৷নতুন শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৭৮৮ জন৷

যদি রোববার সপ্তাহের শুরু ধরা হয় তাহলে ২২ থেকে ২৮ নভেম্বর দেশে করোনা সংক্রমণের ৪৮তম সপ্তাহ চলছে৷এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ২৩০ জনের৷এর আগের ৪৭তম সপ্তাহে অর্থাৎ ১৫ থেকে ২১ নভেম্বর সময়ে করোনায় ১৭৭ জন মারা যায়৷তার আগে ৪৬তম সপ্তাহে অর্থাৎ ৮ থেকে ১৪ নভেম্বর মৃত্যু হয় ১২৪ জনের৷

এই হিসাবে ৪৬তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ১০৬জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷আর ৪৭তম সপ্তাহের তুলনায় ৪৮তম সপ্তাহে ৫৩ জন বেশি মানুষ মারা গেছেন৷

দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মারা গেছেন ছয় হাজার ৬০৯ জন৷আক্রান্ত হয়েছে চার লাখ ৬২ হাজার ৪০৭ জন৷

করোনা নিয়ে জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটি ও পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘করোনায় মৃত্যু বাড়লেও সংক্রমণ শতকরা ১৩ ভাগে স্থির আছে৷মৃত্যু বাড়ার কারণ হলো করোনা রোগীর চিকিৎসা এখনো সহজলভ্য হয়নি৷ আক্রান্তরা হাসাপতালে ঠিকমত চিকিৎসা পান না৷ ঢাকার বাইরে চিকিৎসাব্যবস্থা এবং আইসিইউ না থাকায় রোগী মারা যাচ্ছেন৷তারা ঢাকায় এসেও চিকিৎসা পাচ্ছেন না৷’’

তিনি জানান, এবার পরামর্শক কমিটি লকডাউন আরোপ না করার পক্ষে মত দিয়েছে৷কারণ, একটি দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা স্বচ্ছল না হলে লকডাউনে অনেকেই আর্থিক ও খাদ্য সংকটে পড়ে৷লকডাউনের পরিবর্তে তাই মাস্কের ব্যবহার, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব যাতে মানুষ মেনে চলে সে ব্যাপারে আরো কাঠের হওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷আর লকডাউন আরোপ করা হয় সংক্রমণ ঠেকাতে৷লকডাউন মৃত্যু কমানোর জন্য নয়৷

তবে তিনি মনে করেন, দেশের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে দায়িত্বহীন কথার কারণে মানুষের মধ্যে ঢিলেমি তৈরি হয়েছে৷এখনো কেউ কেউ বলছেন ভ্যাকসিন আসার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরুন৷তাহলে ভ্যাকসিন আসার পর কি মাস্ক পরতে হবে না?

এরইমধ্যে ভারতের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে একটি চুক্তি করেছে৷ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট অক্সফোর্ডের ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে৷আর গ্যাভি থেকে ৯ কোটি ৮০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ৷

তবে ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেই তা এনে লাভ হবে না৷বিবেচনায় রাখতে হবে দাম এবং সংরক্ষণের তাপমাত্রা৷সরকার বলছে, নাগরিকদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে বিনামূল্যে৷আর এজন্য একটা গাইডলাইনও তৈরি করা হয়েছে৷

কিন্তু জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‘যেসব বিষয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই নিশ্চিত করতে বলেছেন তা এখনো হয়নি৷সরকারি হাসপাতালে হাই ফ্লো অক্সিজেনজোন হয়নি৷আইসিইউর সংখ্যা বাড়েনি৷ফলে চিকিৎসাব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি৷আর মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্বের ব্যাপারে সচেতনাতামূলক কর্মসূচিও নেয়া হয়নি৷যারা গরীব তাদের বিনামূলে কাপড়ের মাস্ক বিতরণ করা দরকার৷যাতে তারা এটি ধুয়ে একাধিকবার ব্যবহার করতে পারেন৷''

তিনি বলেন, ‘‘করোনা পরীক্ষা না বাড়িয়ে তা আরো কমানো হয়েছে৷ফলে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে কখনোই সঠিক ধারণা পাওয়া যায়নি৷''

তার অভিযোগ, যে চিকিৎসকরা জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন তাদের প্রণোদনা দেয়া হয়নি৷যারা মারা গেছেন তাদের পরিবার এখনো ক্ষতিপুরণ পায়নি৷করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতদের আবাসিক সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে৷ফলে চিকিৎকদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়েছে৷

প্রজন্মনিউজ২৪/হারুন

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ