চরম অস্তিত্ব সংকটে যাত্রাপালা

প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর, ২০২০ ১১:৩০:৪৬

চরম অস্তিত্ব সংকটে যাত্রাপালা

দেশে যাত্রাপালা এখন চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। যাত্রা পরিবারকে দেখার কেউ নেই। ১৯৪১-৪২ সালে নবীনগরের বিদ্যাকূট গ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা দলের সূচনা হয়। এরপর আরও অনেক দলের সৃষ্টি হয়। নব্বই দশক পর্যন্ত দলগুলো সক্রিয় ছিল। ১৯৩৬-৩৭ সালে কলকাতা থেকে যাত্রাদল এসে নিয়াজ মাঠে যাত্রা করত। 

চরম অস্তিত্ব সংকটে পড়ে অবশেষে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে যাত্রাপালা শিল্প পরিবার। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ‘বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ’ সংগঠন সরকারকে পাশে পেতে মানববন্ধন করতে বাধ্য হয়। মানববন্ধনে যাত্রাশিল্প পরিবার প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দেওয়া এক ‘খোলা চিঠি’তে উল্লেখ করেন, ‘যাত্রা শুধু বিনোদন নয়, লোকশিক্ষার বাহনও বটে। সাম্য, সম্প্রীতি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্য দিয়ে জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি করেছে শিক্ষামূলক যাত্রাপালা। এতসব কল্যাণমূলক কাজের দাবিদার হয়েও যাত্রাশিল্প ও যাত্রাশিল্পীরা আজ জাতীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে না। যদিও বর্তমান সরকার আমলে ২০১২ সালে একটি যাত্রা নীতিমালা প্রণয়ন ও গেজেটভুক্ত হয়েছে, কিন্তু তার সুফল পাচ্ছে না মালিক ও শিল্পীরা। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে জেলা প্রশাসন যাত্রানুষ্ঠানের অনুমতি প্রদানে বিরত থাকছে। যাত্রা একটি পেশাদারি শিল্প। হাজার হাজার মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকে এই শিল্পের মাধ্যমে। তবে এখন কেন যাত্রা পরিবার নিগৃহীত হবে। ভাতে-পানিতে কষ্ট পাবে। শিক্ষা আর চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে যাত্রা পরিবারের সন্তানরা। নীতিমালা হওয়ার পরেও কেন যাত্রা প্রদর্শনীর অনুমতি দেবেন না জেলা প্রশাসক? যাত্রাপালা পরিবার মানববন্ধনে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে তাদের বাঁচাতে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. সহজে যাতে যাত্রা প্রদর্শনীর অনুমতি পাওয়া যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক জেলা প্রশাসককে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া ও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

২. এর আগে করোনাকালে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে কিছু যাত্রাশিল্পীকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল, যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য, হতদরিদ্র যাত্রা শিল্পীদের বাঁচাতে পুনরায় প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হোক। 

৩. করোনাকালে যাত্রা মালিকরা যাত্রা মঞ্চায়ন করতে না পেরে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপনে পড়েছে। এ অবস্থায় শিল্পকলা একাডেমিতে নিবন্ধনকৃত যাত্রা দলগুলো বাছাই করে অন্তত ২০টি যাত্রাদলের প্রতিটিকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদান দেওয়া হোক।

৪. মুক্তিযুদ্ধের পালাসহ বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনভিত্তিক কয়েকটি যাত্রাপালার বিশেষ মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা হোক।

৫. চলচ্চিত্র শিল্পীদের মতো যাত্রাশিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হোক।

৬. অসচ্ছল সংস্কৃতি কর্মীদের ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাত্রাশিল্পীদের জন্য পৃথক কোটার ব্যবস্থা রাখা হোক।

৭. বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে একটি জাতীয় যাত্রামঞ্চ প্রতিষ্ঠা করা হোক।

যাত্রাপালা অনেক আগেই দৈন্যদশার কবলে পড়েছে। ফলে এর সঙ্গে যুক্তরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বাধ্য হয়েই ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন অনেকে।

এ বছরের যাত্রা মৌসুম নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। করোনা মহামারীর কারণে যাত্রাদলগুলো সংগঠিত হতে সাহস পাচ্ছে না। ৫ সেপ্টেম্বর সারা দেশ থেকে যাত্রাপালার মালিকরা ঢাকা এসেছিলেন।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল চৈতালি, আনন্দ, বিসিজাপ অপেরা। এসবের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার কোনো দলই করোনার কারণে সংগঠিত হচ্ছে না। মানে যাত্রাশিল্পটি নতুন করে অস্তিত্ব সংকটে পড়ল।

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে নিবন্ধন পেয়েছে ১১৭টি যাত্রা সংগঠন। এর মধ্যে কিছু দল নিবন্ধন নবায়ন করেনি। আর চারটি দল অশ্লীল যাত্রা মঞ্চায়নের কারণে তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে শিল্পকলা একাডেমি।  এই চারটি দল হলো- ভোলানাথ, চৈতালি, ডায়মন্ড ও স্বদেশ অপেরা।


প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ