প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের প্রভাব নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ১১:২২:৩৩

প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের প্রভাব নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়

করোনার প্রভাব মোকাবেলায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে অর্থনীতিতে কি গতিশীলতা ফিরে এসেছে তা নিয়ে পৃথকভাবে ৩ দিন ব্যাপি এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রণালয়। অনুষ্ঠানে অর্থসচিব দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরবেন। এই বিষয়ে প্রথম আলোচনা হবে ২৬ নভেম্বর। এরপরে ৩ ও ১০ ডিসেম্বরে আলোচনা চলবে। অনুষ্ঠানে ওয়েবিনারে যুক্ত হবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে জানা যায়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করবেন।
উল্লেখ্য করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকার মূলত চারটি কৌশল নিয়েছিল এরমধ্যে একটি ছিল সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি, আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ প্রণয়ন, সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা ও মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি।
এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, করোনা প্যাকেজে অর্থনীতিতে কিছু ভাল ইমপেক্ট অবশ্যই পড়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় যে কাজটি হয়েছে তা হলো অর্থনীতি চালু রাখা।এতে আমাদের উপর করোনার অর্থনৈতিক ইমপেক্ট তেমনভাবে পড়েনি। অনেক উন্নত দেশও এক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। তারা এখন অর্থনীতি চালু করতে হিমশিম খাচ্ছে। রপ্তানিখাতের শ্রমিকদের ১০ হাজার কোটি টাকা প্যাকেজ দেয়া হয়েছে। তাতে রপ্তানিখাত কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছে। তবে তিনি এটাও উল্লেখ করেন, সরকারের আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ঋণ নির্ভর প্যাকেজ বেশি দিতে হয়েছে। এই কাজগুলো যদি সরকার নিজস্ব ফান্ড থেকে দিত তবে আর্থিক ইমপেক্ট আরো বেশি পড়তো।
অর্থমন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, সরকার ৪টি আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মাধ্যমে যে বিষয়গুলোতে প্রাধান্য দিয়েছে তা হলো ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দেয়া, ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত এক্সপোর্ট ডেভলপমেন্ট ফান্ডের (ইডিএফ) সুবিধা বাড়ানো, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম প্রণয়ন করা। রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন/ভাতা পরিশোধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছেন। এ বিষয়েও বিস্তারিত বলবেন অর্থসচিব।
সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ হলো: (১) বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ; (২) ১০ টাকা কেজি দরে চাউল বিক্রয়; (৩) লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠির মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ; (৪) ‘বয়স্ক ভাতা’ এবং ‘বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলাদের জন্য ভাতা’ কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা; এবং (৫) জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহ নির্মাণ কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন করা; ইত্যাদি।
অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা প্রদান: ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকার একটি ঋণ নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে।
ক্ষুদ্র (কুটির শিল্পসহ) ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা স্বল্পসুদে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদানের লক্ষ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণের বিষয়েও বলা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবর্তিত ইডিএফ (এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ড)-এর সুবিধা বাড়ানো: ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি এর আওতায় কাঁচামাল আমদানি সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইডিএফ-এর বর্তমান আকার ৩.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা। ফলে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অতিরিক্ত ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ইডিএফ তহবিলে যুক্তকরা। ইডিএফ-এর বর্তমান সুদের হার লেবার +১.৫ শতাংশ (যা প্রকৃত পক্ষে ২.৭৩%) থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা। এসব বিষয় নিয়ে বলবেন গভর্নর।

প্রজন্মনিউজ২৪/নাজমুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ