দলীয় ঐক্য ফেরাতে কঠোর আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২৩ নভেম্বর, ২০২০ ১০:১৬:০৬

দলীয় ঐক্য ফেরাতে কঠোর আওয়ামী লীগ

দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য ফেরাতে কঠোর আওয়ামী লীগ। নিজস্ব বলয় বা গ্রুপিং তৈরি করা, কোন্দল অব্যাহত রাখা, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্যকারী এবং দায়িত্বে অবহেলাসহ শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি।

এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই জেলার (সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী) চারজন শীর্ষ নেতাকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। দলকে তৃণমূল পর্যন্ত সুসংগঠিত করে ঢেলে সাজানোর কাজের অংশ হিসেবে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

ক্ষমতাসীন দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, এই অব্যাহতির মধ্য দিয়ে তৃণমূলে কঠোর বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। অন্য জেলায় এরকম অভিযোগ থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও এমন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তারা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ রোববার সন্ধ্যায় বলেন, আমরা আমাদের দল গোছানোর কাজ শুরু করেছিলাম। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারণে বেশ কিছুদিন সেই কাজ আমরা করতে পারিনি। এখন আবারও এই কাজ শুরু করছি।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, কেউ দলীয় শৃঙ্খলা বা দলীয় আনুগত্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও শৃঙ্খলার বিষয়। যারা দায়িত্বের প্রতি উদাসীন, যাদের দায়িত্বে অবহেলা আছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

শুধু নরসিংদী বা সিরাজগঞ্জই নয়, সারা দেশেও এই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অব্যশই। আরও যেখানে এই ধরনের সমস্যা আছে, সেখানেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রোববার সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল লতিফ বিশ্বাস এবং ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপিকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতির নির্দেশক্রমে এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বিধি মোতাবেক সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে স্বীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে।

একই সঙ্গে পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অ্যাডভোকেট কেএম হোসেন আলীকে (হাসান) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ তালুকদারকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করেছে। তবে ঠিক কী কারণে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে, তা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়নি।

দলীয় সূত্রে ও স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দুই ভাগে বিভক্ত। দলের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেয়ে নিজেদের এজেন্ডাকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছেন।

জেলার নেতাদের কোন্দলের জের ধরে সিরাজগঞ্জে বিভিন্ন সময় সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। চলতি বছরের ৬ জুলাই সিরাজগঞ্জে দলীয় কোন্দলের জেরে প্রতিপক্ষ ছাত্রলীগ নেতাদের মারধরে ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক বিজয় মারা গেছেন। ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ছাত্রলীগের একাংশ জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

এই বিক্ষোভের নেপথ্যে জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ইন্দনদাতা হিসেবে কাজ করেন। এরপর ১২ অক্টোবর সিরাজগঞ্জ-১ উপনির্বাচনকে ঘিরেও জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কোন্দল ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ে। উপনির্বাচনে ৩ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এই তিন প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কাজ হচ্ছে তৃণমূল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংহত করা। কর্মসূচি ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে দলের কার্যক্রমকে প্রচার করা এবং দলকে জনপ্রিয় করে তোলা। যারা এটা না করে নিজেদের বলয় তৈরি করছেন বা দলে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছেন, তাদের জন্য এই বার্তা।

দলীয় সভাপতি সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন। তিনি বলেন, নিজের বলয় ভারী করতে বিভেদ তৈরি করে যারা অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নষ্ট করবে। যারা দলের জন্য ক্ষতিকর, তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ