পুষ্টিগুণে শীতের সবজি

প্রকাশিত: ১০ নভেম্বর, ২০২০ ১০:২৭:৪২

 পুষ্টিগুণে শীতের সবজি

হেমন্ত যেমন গায়ে শীত শীত পরশ বুলিয়ে দেয়, তেমনি বাজারে নিয়ে আসে নানা ধরনের শীতের সবজি। যদিও এখন সারা বছরই বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজি পাওয়া যায়।

কিন্তু শীতের সবজির আসল স্বাদটা কিন্তু শীতেই পাওয়া যায়। পুষ্টিগুণও থাকে অটুট। তাই সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সবজি খেলেও শীতের সবজি খাওয়ার মজাই আলাদা।

আমাদের দেশে শীতের সময় বাজারে বেশি দেখা যায়- ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি, লাউ, মটরশুঁটি, গাজর, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টেমেটো ও পেঁয়াজ কলি প্রভৃতি। পুষ্টিবিদদের মতে, শীতকালীন সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন প্রভৃতি। অস্থিক্ষয় রোধে ও শরীরে রক্তকণিকা বা প্লাটিলেড গঠনে শীতকালীন শাকসবজির ভূমিকা অপরিসীম। ভিটামিন-‘সি’, ভিটামিন-‘এ’ এবং ভিটামিন-‘ই’-এর ঘাটতি পূরণে খেতে পারেন বেশি বেশি শীতের সবজি। শীতকালীন সবজিতে বিদ্যমান ভিটামিন-‘ই’ মুটিয়ে যাওয়ার সমস্যা থেকে রক্ষা করে এবং চুলপড়া রোধ করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর থাকার জন্য প্রচুর পরিমাণে শীতকালীন শাকসবজি গ্রহণ করা উচিত। জেনে নিন, শীতের কোন সবজিতে কী পুষ্টিগুণ থাকে।

ফুলকপি : শীতকালীন সবজির প্রথমেই আসে ফুলকপির নাম। নানা পুষ্টিগুণে ভরপুর ফুলকপি। এতে আছে ভিটামিন ‘সি’, ‘এ’, ‘ডি’ ও ‘কে’। রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও লৌহ। ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ফুলকপি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

বাঁধাকপি : বাঁধাকপির পাতার মোড়কে আছে নানা পুষ্টিগুণ, যেমন- ভিটামিন ‘সি’ ও ‘কে’। এর ফলিক এসিড বা ফলট রক্ত বাড়ায়, গর্ভস্থ শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করে। বাঁধাকপিতে বিদ্যমান গ্লুকোসিনোলেট নামের উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক। গবেষণা বলছে, পাতা দিয়ে মোড়া এ ধরনের সবজি রক্তে চর্বি ও শর্করা কমায়। বাঁধাকপি আঁশেরও চমৎকার উৎস, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

লাউ : লাউ মূলত পানিপূর্ণ ঠাণ্ডাজাতীয় একটি সবজি। এতে সবচেয়ে বেশি রয়েছে পানি, যা আমাদের দেহকে সহজেই পানিশূন্যতা থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়াও রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘কে’, ভিটামিন ‘ই’, ফাইবার, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও জিঙ্ক। লাউয়ের জিঙ্ক উপাদানটি আমাদের দেহকে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে লাউকে পথ্য হিসেবে ধরা হয়। লাউ খেলে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে, অনিদ্রার সমস্যাতেও উপকারী এটি।

গাজর : গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি। গাজরে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদানগুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ত্বকের খসখসে ও রোদে পোড়া ভাব কমায়। গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকের মরা কোষ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।

টমেটো : এটি একটি জনপ্রিয় সবজি। ক্যালোরিতে ভরপুর এ সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। টমেটোতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে এবং ঠাণ্ডাজাতীয় রোগ ভালো করে। যে কোনো চর্মরোগ, বিশেষত স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধ করে। টমেটোতে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা প্রকৃতির ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির বিরুদ্ধে লড়াই করে। দাঁতের গোড়া মজবুত করে ও চোখের পুষ্টি জোগায়।

শিম : শিমে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফাইবার। এছাড়া রয়েছে ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিন। শিম হজমসহায়ক এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ব্রোকলি : শীতকালীন সবজি হিসেবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশেও চাষ করা হচ্ছে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। এটি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।  

প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ