মিয়ানমারে ভোটগ্রহন চলছে, নোবেলজয়ী সুচির বিজয় নিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২০ ০৪:০৬:৩৮ || পরিবর্তিত: ০৮ নভেম্বর, ২০২০ ০৪:০৬:৩৮

মিয়ানমারে ভোটগ্রহন চলছে, নোবেলজয়ী সুচির বিজয় নিশ্চিত

আজ রোববার(৮ নভেম্বর) মিয়ানমারে ভোর থেকে জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।  রাজধানী নেপিদ সহ সাতটি রাজ্য ও সাতটি অঞ্চলে একযোগে ভোট চলছে। ৯০-এর  দশকে শুরু হওয়া সামরিক শাসনের পর এটিই দেশটির ২য়  গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচন।

বিবিসি জানিয়েছে, ‘দেশটিতেই সেনা শাসন অবসানের পর এটি দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে নিশ্চিত সর্বময় নেত্রী অং সান সু চি।’

মিয়ানমার সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা। নির্বাচনে দেশটির রাখাইন ও কাচিন প্রদেশে বড় ধরনের সন্ত্রাসী  হামলার  আশঙ্কা রয়েছে। তবে মিয়ানমার  সেনা বাহিনি সতর্ক্ অবস্থানে রয়েছে এবং সেনা  টহলও  জোরদার করা হয়েছে। দেশটির সংঘাতপ্রবণ এলাকা রাখাইন-শান-কাচিন-মন ও বাগোতে ভোটগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে ।

দেশটির সাধারণ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ কোটি ৭০ লাখ। তবে বিশাল রোহিঙ্গা  মুসলিম জনগষ্ঠীসহ বেশ কয়েকটি সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ২৬ লক্ষ ভোটার  এই সাধারণ  নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

রাখাইন প্রদেশে (আরাকান) বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের গণহত্যায় সহযোগীতার  অভিযোগে বিশ্বজুড়ে সমালোচিত হয়েছেন নোবেল জয়ী নেত্রী অং সান সু চি।  জাতিসংঘেও তিনি সমালোচিত এবং  আন্তর্জাতিক পর্যায়ে  তার নোবেল ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছে ।

মিয়ানমারে গণহত্যা থেকে বাচতে লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে পাশের দেশ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। তাদের জন্য বাংলাদেশ সরকার সমকালীন সব থেকে বৃহত্তম শরণার্থী শিবির তৈরি করেছে। ঢাকা চাচ্ছে অবিলম্বে এই শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিক মিয়ানমার। বিষয়টি ঝুলিয়ে রেখেছেন সে দেশের সর্বময় নেত্রী  নোবেলজয়ী সুচি।

মিয়ানমারের সাধারন নির্বাচনে ক্ষমতাশীন অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (NLD) এবং ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি(USDP) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এবার নির্বাচনে ছোটবড় আঞ্চলিক পর্যায়ের আরও ৯৩টি দল অংশ নিচ্ছে।

২০১৫ সালে দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি'র ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি ক্ষমতায় আসে। গণমাধ্যমের আগাম ধারনা, এবারও ক্ষমতায় আসতেছে অং সান সু চির ‘NLD’। তবে সু চি এবং তার দলের বিরুদ্ধে করোনা আচরণ বিধি না মানার অভিযোগ রয়েছে। নির্বা্চনী প্রচারনায় করোনা স্বাস্থবিধি না মানায় ব্যাপকভাবে সমালোচিতও হয়েছে সু চির দল।

বিবিসি ও সিএনএন জানিয়েছে, আং সান সু চি এর দল ‘NLD’ আবারও ক্ষমতায় আসবে।  বিশ্লেষকদের ধারনা, সু চি ক্ষমতায় থাকুক এটাই চায় দেশটির  নিয়ন্ত্রক ক্ষমতাধর সেনা কর্তারা।

নোবেলজয়ী সু চি ও তার দল এনএলডি ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিপুল জয় পান। টানা ৫০ বছর সেনা শাসনে থাকার পর মিয়ানমারে প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়।

কিন্তু আইন অনুসারে বিদেশি বিবাহ করার কারনে ‘অংসান সু চি’ প্রেসিডেন্ট হননি।  তিনি মিয়ানমারের ‘ডি ফ্যাক্টো’ সুপ্রিমো বা সর্বময় নেত্রী।

তবে বিদেশি নাগরিকের সঙ্গে বিয়ে হওয়া এবং মিয়ানমার ব্যতীত ভিনদেশের নাগরিকত্ব থাকা সন্তানের অভিভাবক হওয়ায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না সুচি। তাই ২০১৫ সালেও নির্বাচনে বিজয়ী সুচি দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। মিয়ানমারের অবিসংবাদিত এই নেত্রী হয়েছেন ‘স্টেট কাউন্সিলর’।

নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে দুই কক্ষবিশিষ্ট দেশটির সংসদের হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে কমপক্ষে ২২১টি আসন এবং হাউস অব ন্যাশনালিটিস এ কমপক্ষে ১১৩টি আসন জয় করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল এককভাবে অথবা একাধিক রাজনৈতিক দল যুগ্মভাবে এই আসনগুলো পেলে যুক্ত সরকার গঠন করতে পারবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্বাচনের পাশাপাশি একই সঙ্গে দেশটিতে রাজ্য এবং আঞ্চলিক পর্যায়েও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আঞ্চলিক নির্বাচনে প্রাদেশিক পর্যায়ে এক-তৃতীয়াংশ আসন নির্ধারিত থাকে সামরিক বাহিনীর জন্য। নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যরা পরবর্তীতে দেশটির প্রেসিডেন্ট এবং দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করবেন।

সাধারণ নির্বাচন হলেও এবার বেশ কয়েকটি বিদ্বেষপূর্ণ স্থানে ভোট প্রদানের কোনো ব্যবস্থা করেনি দেশটির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনে বিজয়ী দল ২০২১ সালের মার্চ মাসে সরকার গঠন করবেন।

প্রজন্মনিউজ২৪/ হোসাইন নূর

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ