বড় হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ২৭ অক্টোবর, ২০২০ ০৯:৫০:৪৬

বড় হচ্ছে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা

প্রজন্মনিউজ ডেস্ক :  শরিয়াহভিত্তিক বা ইসলামি ব্যাংকিংয়ের পরিসর দ্রুত বাড়ছে। দেশে ৬১টি ব্যাংকের মধ্যে পুরোদমে ইসলামি ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে আটটি ব্যাংক। এছাড়া কনভেনশনাল বা সাধারণ ব্যাংকিং করা তিনটি ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তর হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি পেয়েছে। আর কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোও ইসলামি ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব বাড়িয়েছে। দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত ও বিনিয়োগের দিক থেকে এক চতুর্থাংশই ইসলামি ব্যাংকিংয়ে দখলে রয়েছে।

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথাগত বা কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ে সুবিধা করতে না পারায় ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দিকে ঝুঁঁকেছেন উদ্যোক্তারা। ইসলামি ব্যাংকিং চালু করতে ১০টির বেশি আবেদনপত্র বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রয়েছে। চলতি বছরের মার্চে ইসলামি ব্যাংকিং করার জন্য অনুমতি পেয়েছে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড। এর আগে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকিং করার অনুমতি পায়। এখন দেশে আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংকের সঙ্গে এ তিনটি যুক্ত হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকও ইসলামি উইন্ডো খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমতি নিয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কনভেনশনাল ব্যাংকের মধ্যে নতুন করে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক সম্প্রতি আলাদা ইসলামি উইন্ডোর মাধ্যমে ব্যাংকিং শুরু করেছে। এর বাইরে ৯টি প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং ১২টি প্রচলিত ব্যাংকের ১৫৫টি উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামি ব্যাংকিং চলছে।

এসব ব্যাংক, শাখা এবং উইন্ডোতে মোট আমানতের পরিমাণ ২ লাখ ৯১ হাজার ৩০৪ কোটি টাকা। যা দেশের সব ব্যাংকের মোট আমানতের ২৫ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে। যা দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট বিনিয়োগের ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাত্ আমানত ও বিনিয়োগের দিক থেকে দেশের মোট ব্যাংকিং খাতের এক চতুর্থাংশ স্থান ইসলামি ব্যাংকিং দখলে রয়েছে। সবগুলো ব্যাংক মিলে দেশে ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ১০ হাজার ৫৮৮টি, এর মধ্যে ১ হাজার ৪৪৮টি শাখা ও উইন্ডো ইসলামি ব্যাংকিংয়ের।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রচলিত ধারার একটি ব্যাংক ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৮৫ টাকা ঋণ দিতে পারে। ইসলামি ব্যাংকগুলো যেখানে ৯০ টাকা দিতে পারে। এ ছাড়া প্রচলিত ধারার ব্যাংকের মতো ইসলামি ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৫ শতাংশ হারে নগদ জমা সংরক্ষণ করতে হয়। অথচ প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোর ১৩ শতাংশ এসএলআর রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ইসলামি ব্যাংকগুলোর জন্য তা সাড়ে ৫ শতাংশ। ইসলামি ব্যাংকগুলো যে কোনো সময় আমানতে মুনাফার হার পরিবর্তন করতে পারে। প্রচলিত ধারার ব্যাংক মেয়াদপূর্তির আগে যা পারে না। এসব কারণে প্রচলিত ধারার ব্যাংকের তুলনায় ইসলামি ব্যাংকে ভালো মুনাফা হয়। ফলে অনেক ব্যাংক এখন ইসলামি ব্যাংকিংয়ে রূপান্তরে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ব্যাংকের বোর্ড।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শরীয়াহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্য আবুল কাশেম মো. ছফিউল্লাহ আরিফ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের মানুষ ইসলামি ব্যাংকিংয়ের দিকে প্রবল ঝোঁক আছে। স্বাভাবিকভাবে মানুষ সুদের সঙ্গে যুক্ত হতে চান না। এ বিষয়টি ব্যাংকও অনেক ক্ষেত্রে কাজে লাগায়। সাধারণত আমানত সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকিং যেভাবে এগুতে পারে কনভেনশনাল ব্যাংকিং সেভাবে এগুতে পারে না। ফলে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের আমানত সংগ্রহের টার্গেট দ্রুত পূরণ সম্ভব হয়।

ইসলাম ধর্মে সুদ নিষিদ্ধ থাকায় মানুষ সুদের সঙ্গে যুক্ত না হয়ে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হন। একটি টেকসই অর্থনীতির জন্য শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও এখন স্বীকৃত বিষয়। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ পশ্চিমাবিশ্বে সুদভিত্তিক অর্থনীতি সুফল আনতে পারেনি এটাও অনেকক্ষেত্রে প্রমাণিত হওয়ায় এখন ইসলামী ব্যাংকিং নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ এসেছে। ইসলামি ব্যাংকগুলোর সাফল্য দেখে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ আগ্রহ শুধু মুসলিমপ্রধান দেশে হচ্ছে তা নয়, অমুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রেও ইসলামি ব্যাংক গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। ব্যাবসায়িক মুনাফা নয়, সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার সেবাই ইসলামি ব্যাংকিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং অনেক বেশি সম্ভাবনাময়ী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে নামে ইসলামি ব্যাংকিং হলেও অনেক ব্যাংক যথাযথভাবে শরিয়াহ পরিপালন করেন না। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ছফিউল্লাহ আরিফ বলেন, ব্যাংকগুলো যাতে যথাযথভাবে শরিয়াহ এর নিয়ম পালন করে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদারকি করা হচ্ছে। যথাযথ শরিয়াহ পালনের পরিবেশ ও মানসিকতা তৈরির জন্য সেন্ট্রাল শরিয়াহ বোর্ড, ব্যাংকের নিজস্ব শরিয়াহ বোর্ড কাজ করছে।

ইসলামিক ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসে। বিশেষ করে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে। যেসব কনভেনশনাল ব্যাংক ইসলামি ব্যাংকিং করছে তারা ইসলামি ব্যাংকিংয়ে তাদের জনশক্তি বাড়াচ্ছে। বর্তমানে ইসলামি ব্যাংকিংয়ে মোট জনশক্তি রয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮২ জন। যা তিন মাস আগের চেয়ে ৫১০ জন বেশি।

জানা গেছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা গ্রাহক পর্যায়ে হস্তক্ষেপ-সক্ষমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং অ্যাপ্রোচ এবং ধর্মীয় ও কল্যাণমূলক প্রণোদনার কারণে ইসলামি ব্যাংকগুলো তরুণ-যুবকসহ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক আকর্ষণ করতে পারছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণ ও গ্রাহককেন্দ্রিক মডেলের কারণে অনেক ঋণগ্রহিতা ও আমানতকারী ইসলামি ব্যাংকিং পছন্দ করেন।

বাংলাদেশের আটটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামি ব্যাংক হলো—ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এক্সিম), সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।

 

প্রজন্মনিউজ/শেখ নিপ্পন

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ