অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলেও বাড়ছে না আমদানি 

প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর, ২০২০ ০৩:২৩:৫৯

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হলেও বাড়ছে না আমদানি 

অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি যেভাবে চাঙা হচ্ছে, সেই তুলনায় আমদানি বাণিজ্য বাড়ছে না। শুধু তাই নয়, প্রয়োজনীয় মূলধনী যন্ত্রপাতি (ক্যাপিটাল মেশিনারি) আমদানির এলসিও সেইভাবে খোলা হচ্ছে না। যদিও রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে ডলার ঠিকই আসছে। এতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ বাড়লেও শিল্পায়ন হচ্ছে না। নতুন কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে না ওঠায় নতুন করে কর্মসংস্থানও হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থনীতির সূচক সচল হচ্ছে, শুধু আমদানিতে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। টানা কয়েক মাস ধরে আমদানিতে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২২ অক্টোবর) প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) আমদানি হয়েছে এক হাজার ১৭৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের পণ্য, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। আগের বছরের প্রথম তিন মাসে আমদানি হয়েছিল এক হাজার ৩২৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৫০ হাজার ৬৫১ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে আমদানি ব্যয় কমেছে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের চেয়ে ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। আগস্টে আমদানি ব্যয় কমেছে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। আর জুলাইতে কমেছে ১৯ দশমিক ৪২ শতাংশ।

করোনা মহামারির আগে প্রতিমাসে পণ্য আমদানিতে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ হলেও এখন তা তিন বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এতে করে বিনিয়োগে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এভাবে মাসের পর মাস টানা আমদানি কমে যাওয়া অর্থনীতির জন্য মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’ তিনি মনে করেন, আমদানির এই দৈন্যদশার প্রভাব পড়বে দেশের সার্বিক বিনিয়োগে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত বছরের জুলাই-আগস্ট এই দুই মাসে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৯৯ কোটি ২৮ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এই বছরের জুলাই-আগস্ট সময়ে তা ৭৪ কোটি ৫২ লাখ ডলারে নেমে এসেছে।

শিল্পের কাঁচামাল আমদানির জন্য গত বছর ওই দুই মাসে ৩২০ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের এলসি খোলা হয়েছিল। এ বছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছে ২৮৬ কোটি ৬৫ লাখ ডলারের। অর্থাৎ আমদানি কমেছে ১০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। একইভাবে শিল্প খাতের মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জ্বালানি তেল আমদানির এলসি কমেছে ৫৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের কমেছে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, গত বছর ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর সেদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। পরে চীন থেকে আমদানি শুরু হলেও সেই ধাক্কা এখনও রয়ে গেছে। মার্চ মাসে বাংলাদেশে করোনাভাইাসের প্রকোপ দেখা দিলে এপ্রিল মাসে পণ্য আমদানি তলানিতে নেমে আসে। ওই মাসে বিভিন্ন পণ্য আমদানির জন্য মাত্র ১৬০ কোটি ডলারের এলসি খুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা, যা ছিল গত বছরের এপ্রিলের চেয়ে ২৬৮ শতাংশ কম। আর আগের মাস মার্চের চেয়ে ২৬৩ শতাংশ কম।

যদিও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর তিন মাসে ৯৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করেছে বাংলাদেশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। এই তিন মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৭১ কোটি ৩২ লাখ ডলার। আগের বছরের প্রথম তিন মাসের তুলনায় বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। আগের বছরের প্রথম তিন রেমিট্যান্স এসেছিল ৪৫১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে এখন ৪১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অবস্থান করছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন





ব্রেকিং নিউজ