সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে এক আঙিনায় শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির

প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর, ২০২০ ০৬:০৬:০৩

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে এক আঙিনায় শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির

ধর্মীয় সম্প্রীতি কী  ? ধর্মীয় সম্প্রীতি কাকে বলে ? তা কেমন হওয়া উচিত- তা জানার জন্য, দেখার জন্য একবারের জন্য হলেও  বাংলাদেশের লারমনিরহাট শহরের পুরান বাজারে আসা উচিত।

শহরের পুরান বাজারের কাছেই এক আঙিনায় অবস্থিত মসজিদ ও মন্দির। এখানে মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ এবং হিন্দুদের কালীবাড়ি দুর্গা মন্দির পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। দুটি স্থাপনার দেয়াল প্রায় লাগোয়া। এ যেন ধর্মীয় সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভাবতেই আনন্দে ও গর্বে হৃদয় ভরে উঠে।সুবেহ সাদিকের সময়  মোয়াজ্জিনের মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে আসা সুমধুর ফজরের  আজান শেষে মুসলমানগণ ফজরের নামাজ আদায় করেন। এর কিছুক্ষণ পরেই মন্দিরে শোনা যায় হিন্দুদের উলুধ্বনি, চলে পূজা-অর্চনার অনুষ্ঠানিকতা। এমনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নিদর্শন বহন করছে লালমনিরহাটের শতবর্ষী মসজিদ ও মন্দির।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে একই উঠানে দুইটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। এখানে মুসলমান এবং হিন্দুরা যে যার ধর্ম সুষ্ঠুভাবে পালন করছেন। আমরা নামাজ পড়ছি, তারা পূজা করছেন। কেউ কারো ধর্মে কোনো হস্তক্ষেপ করছেন না। আমাদের মাঝে ধর্মীয় আচার-বিধি পালন করা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।’

মন্দিরের পুরোহিত সঞ্জয় কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মন্দিরে নিয়মিত পূজা অর্চনা হয়। আজান ও নামাজের সময় বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়। ধর্মীয় সম্প্রীতির বিঘ্ন ঘটে- এমন অবস্থার মধ্যে আমাকে কোনো দিনই পড়তে হয়নি। বরং স্থানীয় মুসল্লিদের সহযোগিতা পেয়ে আসছি।’

প্রবীণ সাংবাদিক ও একাত্তরের গেরিলা কমান্ডার এসএম শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, ‘১৮৩৬ সালে দুর্গা মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে এখানে কালী মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। ফলে পুরান বাজার অনেকের কাছে কালীবাড়ি নামে পরিচিত। এরপর মন্দির প্রাঙ্গণে ১৯০০ সালে একটি নামাজের ঘর নির্মিত হয়। নামাজের ঘরটিই পরবর্তীতে পুরান বাজার জামে মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করে।’

তিনি আরো বলেন, ‘কোনো বিবাদ ও ঝামেলা ছাড়াই ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করে আসছে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। দুর্গাপূজার সময় ঢাক-ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে সমস্যা হয় না। মসজিদ ও মন্দির কমিটির সদস্যরা বসে ঠিক করে নেন কখন কিভাবে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন করা হবে। নামাজের সময় সব বাদ্য-বাজনা বন্ধ রাখা হয়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা দ্রুত মসজিদ ত্যাগ করে পূজারীদের সুযোগ করে দেন। এটাই এখানে নিয়ম।’

এলাকাবাসী জানান, দীর্ঘদিন ধরে একই উঠানে মসজিদ-মন্দির হলেও উভয় ধর্মের মানুষ সম্প্রীতির বন্ধনে থেকে স্ব-স্ব ধর্ম পালন করে আসছেন। কিন্তু ধর্ম পালন নিয়ে কখনো কোনো বাক-বিতণ্ডাও হয়নি বলে জানা যায়। শালীনতা বজায় রেখে একই উঠানে দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছেন উভয় ধর্মের মানুষ।

উভয় ধর্মের বাসিন্দারা এটা নিয়ে গর্ব করেন। পৃথিবীজুড়ে চলমান সহিংসতা আর সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের সংবাদের মধ্যে এমন দৃশ্য নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। একই আঙিনায় মন্দির ও মসজিদ স্থাপন করেছে ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত।

ঢাকা থেকে যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাস ও ট্রেনে লালমনিরহাট যাওয়া যায়। লালমনি এক্সপ্রেস কমলাপুর থেকে রাতে ছেড়ে সকালে লালমনিরহাটে পৌঁছায়। এ ছাড়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস অথবা রংপুর এক্সপ্রেসে রংপুর বা কাউনিয়া নেমে বাস বা ট্রেনে লালমনিরহাট। লালমনিরহাট হচ্ছে রেলের বিভাগীয় শহর। এরপর রিকশা বা অটোতে পুরান বাজারের ঐতিহাসিক এ স্থানে যাওয়া যায়।

থাকা-খাওয়া: থাকা-খাওয়ার জন্য মধ্যমমানের কিছু হোটেল রয়েছে মিশন মোড় ও রেলগেটের কাছাকাছি। ঐতিহাসিক স্থানের ঠিক কাছেই  খাঁন আবাসিক হোটেলে বিলাসী থাকা ও খাবারের ব্যবস্থা আছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ হোসাইন নূর

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ