বানোয়াট বক্তব্যের ভিত্তিতে বেরোবি কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর, ২০২০ ০৬:৫০:০৯ || পরিবর্তিত: ০২ অক্টোবর, ২০২০ ০৬:৫০:০৯

বানোয়াট বক্তব্যের ভিত্তিতে বেরোবি কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক প্রক্টর আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলামের নামে ভিত্তিহীন বক্তব্য জুড়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করার অভিযোগ উঠেছে।

এই বক্তব্য সঠিক নয় এবং ঐ তারিখের আদেশ বলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাও সঠিক নয় মর্মে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন সাবেক এই প্রক্টর। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে উঠেছে সমালোচনার ঝড়।

জানা যায়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আলমিরা রাখাকে কেন্দ্র করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ঐ কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে নোটিশের জবাব দিলে তা সন্তোষজনক নয় উল্লেখ করে গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্বাক্ষরিত এক আদেশের মাধ্যমে মুহাম্মদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

নোটিশ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের সাময়িক বরখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের সিলগালাকৃত অফিস কক্ষের ফাইল প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে গত ১২ মার্চের আদেশ বলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও প্রক্টর অধ্যাপক ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম কর্তৃক বুঝিয়ে দেয়ার সময় তার (ফরিদ উল ইসলাম) বক্তব্য মতে সহকারী এই রেজিস্ট্রারের কিছু ফাইল পাওয়া যায়, যা তিনি প্রকৌশল দপ্তরে রেখেছিলেন।

কারণ দর্শানোর নোটিশে যেভাবে তাকে ও তার বক্তব্য উল্লেখপূর্বক যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা সঠিক নয় উল্লেখ করে লিখিতভাবে রেজিস্ট্রারকে জানান সাবেক প্রক্টর আবু কালাম মো: ফরিদ উল ইসলাম। তিনি জানান, ‘উক্ত কারণ দর্শানো নোটিশের শুরুর বাক্যে ১২ মার্চের আদেশবলে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করেছেন, তাও সঠিক নয়।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত সেই চিঠিতে তিনি বলেন, ‘গত ১২ মার্চের আদেশবলে গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম’র সিলগালাকৃত অফিস কক্ষ প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় আপনার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়নি, কোন মাধ্যমেই কথা হয়নি, মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়নি এবং এ সংক্রান্ত কোন লিখিত বা মৌখিক বক্তব্যও আমি কোথাও কারো নিকট প্রদান করিনি।

কিন্তু আপনি এই পত্রের বিষয়োল্লিখিত নোটিশে আমার বক্তব্য হিসেবে যে উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছেন তা আপনার কল্পনা প্রসূত বক্তব্য। রাষ্ট্রীয় কার্যে নিয়োজিত একজন কর্মকর্তা হিসেবে আপনার নিকট হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের নামে এমন মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপন একেবারেই অপ্রত্যাশিত।

আমার সম্পর্কে আপনার এমন মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপনে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর হিসেবে আহত হয়েছি এবং অসম্মানবোধ করছি। এধরনের বক্তব্য আইনানুগভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তথা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী আপনার কাছে আরও যুক্তিসংগত ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করে’

প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমের অফিস কক্ষ সিলগালা করার সময় প্রকৌশল দপ্তরের টেবিলের উপর রক্ষিত অনেকগুলো ফাইল ছিলো যেগুলো ক্রমিক নম্বরসহ তালিকা প্রস্তত করার পর নিরাপদে রাখার জন্য একটি আলমিরার প্রয়োজন হয়। সে মোতাবেক আমি উপাচার্য মহোদয়ের পিএস দপ্তরে একটি আলমিরার চাহিদাপত্র পাঠাই। পরক্ষণে পিএস-টু-ভিসি আমিনুর রহমান কয়েকজন কর্মচারীকে নিয়ে প্রশাসন ভবনের ৩য় তলা থেকে ফাইলসহ একটি আলমিরা নির্বাহী প্রকৌশলীর রুমে নিয়ে আসেন।

আলমিরায় কিছু ফাইল দেখে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, খালি আলমিরা চেয়েছি কিন্তু আলমিরাতে ফাইল কেন? উত্তরে পিএস ( উপাচার্যের একান্ত সচিব) আমাকে বললেন, স্যার এই ফাইলগুলোর মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে। জানতে চাইলাম, কীভাবে বুঝলেন এখানে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র রয়েছে? এর জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারলেন না। জানতে চাইলাম, এর মালিক কে? জনাব আমিনুর রহমান জানান, এই আলমিরা ইঞ্জিনিয়ার জাহাঙ্গীর সাহেবের।

পরে কয়েকটা ফাইল দেখে (পড়ে) মনে হলো, এটা জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের আলমিরা। তিনি (পিএস) ফাইলগুলো তার (আমিনুর রহমান) হস্তগত করতে চাইলে আমি তাকে বলি, অন্য দপ্তরের ফাইল ঐ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে দেখা বিধি সম্মত নয়। আমি উক্ত আলমিরার অগোছালো ফাইল এক জায়গায় জড়ো করে সুতলি দিয়ে বেঁধে একটি টেবিলের উপর রাখি।

যদিও জনসংযোগ দপ্তরের বা অন্য কারো ব্যবহৃত আলমিরা এভাবে ব্যবহার করা সঠিক হয়নি। কিন্তু আর কোন আলমিরা না থাকায় এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষের তালিকাভূক্ত ফাইলসমূহ রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব বিবেচনায় উক্ত আলমিরা ব্যবহার করতে বাধ্য হই। পুরো কক্ষের ফাইলগুলো তালিকাভূক্ত করে আলমিরাগুলোতে রাখতে অনেক রাত হয়ে যায়। এমতাবস্থায় জনসংযোগ দপ্তরের সেই ফাইলগুলো টেবিলে রেখে কক্ষ তালাবদ্ধ করে বের হয়ে আসি।

গত ৯ সেপ্টেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলম’র সিলগালাকৃত অফিস কক্ষ প্রকৌশল দপ্তরের কর্মকর্তাগণকে বুঝিয়ে দিতে গেলে জনসংযোগ দপ্তরের আলমিরার সেই ফাইলগুলো নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ি। কারণ, একদিকে যেমন ফাইলগুলো প্রকৌশল দপ্তরের তালিকাভূক্ত ফাইল নয় অপরদিকে অন্য দপ্তরের ফাইল অরক্ষিত রাখা সমীচীন নয়।

এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মহোদয় কয়েকজন কর্মকর্তাসহ প্রকৌশল দপ্তরে উপস্থিত হলে আমি তাঁকে ফাইলগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জানাই। তিনি বলেন, ফাইলগুলো এখানেই থাকুক। যার ফাইল তিনি লিখিতভাবে জানালে তাঁকে দিয়ে দেওয়া হবে। এরপর ফাইলগুলো ট্রেজারারের উপস্থিতিতে প্রকৌশল দপ্তরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, আলমিরাটি নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে বা প্রকৌশল দপ্তরে ছিলো না। আমি দেখেছি তৃতীয় তলা থেকে আলমিরাটি আনা হয়েছে। পরে খোঁজ খবর নিয়ে আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, আলমিরাটি আসলে জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে আনা হয়েছিলো। আমাকে অসত্য তথ্য দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে ফাইলগুলো বন্দি করা হয়েছে। আমাকে আলমিরাটি দেওয়ার সময় কোন সিলগালাযুক্ত তালা ছিলো না। এমনকি এই আলমিরাতে কী ফাইল বা নথি ছিলো, কে ব্যবহার করেছে এসব আমাকে না জানিয়ে আলমিরাটি খোলা হয়েছে।

আমার কাছে মনে হয়েছে আলমিরার তালাটিও সচল ছিলো না। যেহেতু ঐ সময়ে এই আলমিরার মূল মালিক হিসেবে কেউ উপস্থিত ছিলো না সেহেতু এই আলমিরা অক্ষত ছিলো কিনা বা এর আগে কেউ এই আলমিরা খুলেছে কিনা সেটাও আমি নিশ্চিত ছিলাম না।

এমতাবস্থায়, বেরোবি:/রেজি:/কারণ দর্শানো নোটিশ/২০২০/৭১৬, তারিখ: ২৬/৯/২০২০ মোতাবেক ইস্যুকৃত কারণ দর্শানো নোটিশে আমার নাম উল্লেখপূর্বক যে অসত্য এবং মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়েছে তার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং উক্ত বক্তব্য প্রত্যাহার করে আমার এই বক্তব্যটি নথিভুক্ত করার জন্য বিশেষভাবে আহ্বান জানাচ্ছি।

এদিকে সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও হয়রানি ছাড়া কিছুই নয় বলে মনে করছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারা। তাদের অভিযোগ বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে কথা বলেছে বা ভবিষ্যতে বলতে পারে তাদের তিনি বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করছেন। একটা স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে কথায় কথায় শিক্ষক-কর্মকর্তাদের শোকজ ও বরখাস্ত করে চলেছেন।

তারা বলেন, একজন জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তরের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছেন। যদি তিনি তথ্য সংগ্রহ করে না রাখতেন তাহলে তার অপরাধ হতো। কিন্তু তথ্য সংগ্রহ করে রাখাতেই তাকে অপরাধী করা হলো।

বিগত উপাচার্যের সময়ে তিনি ওই দপ্তরের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং যে যখন তথ্য সংগ্রহ করতে বলেছে তিনি সংগ্রহ করে রেখেছেন মাত্র। আর অধ্যাপক ফরিদ উল ইসলামের লিখিত বক্তব্যের মধ্যে এটা স্পষ্ট যে ঐ আলমিরা কিভাবে ওইখানে গেছে। আর ফাইলগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ব্যতীত খোলাই তো অপরাধ। সেখানে ওই কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করাটা উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো হলো না?

বরখাস্তের আদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া প্রতিবাদ জানিয়ে তার ফেসবুক টাইমলাইনে বলেন, “সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে একটি মহলের হীন স্বার্থ করার উদ্দেশ্যে কাল্পনিক গল্প সাজিয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ আলীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।’’

অন্য দপ্তরের কারো আলমিরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুমতি ব্যতিত আনতে পারেন কিনা জানতে চাইলে ভিসির ব্যক্তিগত সচিব (পিএস টু ভিসি) আমিনুর রহমান বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এই ঘটনায় আমাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মোস্তফা কামাল, প্রো-ভিসি সরিফা সালোয়া ডিনা এবং ভিসি কলিমউল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেনি।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ