রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৫:১০:২৫

রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা

রাজশাহীতে আবাসন ব্যবসায় প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা। চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে না। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) চেয়ারম্যানের কাছে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আরডিএ। এদিকে, ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবসার সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জামায়াতপন্থী শিক্ষক ড. মনিরুজ্জামান সরকার জড়িত বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।

রাজশাহী নগরীর মির্জাপুর মৌজার আরএস ১৩৮ নম্বর দাগে ২৮টি ফ্ল্যাট ও গাড়ি পার্কিংসহ আটতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেন রাবির পাঁচ শিক্ষকসহ দশ ভূমি মালিক। ২০১৫ সালের ১ জুন ‘তুষার কর্পোরেশন লিমিটেড’ এবং রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ড. মনিরুজ্জামান সরকার, আরবি বিভাগের শিক্ষক ড. জাহিদুল ইসলাম ও রাবির সহকারী রেজিস্ট্রার ড. মমিনুল ইসলামসহ দশজনের সঙ্গে তারা চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ভূমি মালিকদের কাছে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার কথা ছিল ২০১৭ সালের নভেম্বরে। কিন্তু নির্মাণ কৌশল বদল করে ২০১৭ সালের ৩০ মে ভূমি মালিকদের সঙ্গে নতুন করে আরেকটি চুক্তি করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। এক্ষেত্রে তুষার কর্পোরেশন লিমিটেডের বদলে ‘ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের সঙ্গে আগের শর্ত মেনে চুক্তি করা হয়। দ্বিতীয় চুক্তিনামায় সংশ্লিষ্ট ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশরাফুল ইসলাম রাবি শিক্ষক ড. মনিরুজ্জামানের আপন ভাগ্নে। দ্বিতীয় চুক্তি অনুযায়ী ফ্ল্যাট হস্তান্তরের কথা ছিল ২০১৮ সালের নভেম্বরে। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ভবনটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। অভিযোগ, নকশারও পরিবর্তন করেছেন ডেভেলপার। ভবনটিতে ২৮টি ফ্ল্যাট থাকলেও প্রবেশ ও বাহির পথ রয়েছে মাত্র একটি। এর প্রশস্ততা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি। এছাড়া সিঁড়ির প্রশস্ততা মাত্র ৩ ফুট ৭ ইঞ্চি। নেই গার্ডরুম। অথচ আরডিএর ইমারত নির্মাণ আইন অনুযায়ী এ ধরনের বহুতল ভবনে কমপক্ষে দুটি সিঁড়ি ও দুটি লিফট থাকার কথা। থাকার কথা বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন। কিন্তু এসবের কোনো কিছুই করেননি ডেভেলপার। এছাড়া বহুতল এ ভবনে নেই অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।

অভিযোগ, ভবনটির জমির মালিক দশজনের মধ্যে পাঁচজন ফ্ল্যাট পেয়েছেন। অপর পাঁচজন ফ্ল্যাট না পেয়ে এখনও ডেভেলপারের কাছে ঘুরছেন। ২৮টি ফ্লাটের মধ্যে জমির পাঁচ মালিক এবং ডেভেলপারদের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনে পাঁচজন বসবাস করছেন। ভবনে বসবাসকারীরা চুক্তি অনুযায়ী লিফট, সিঁড়ি ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন স্থাপনসহ অন্য সমস্যা সমাধানে ডেভেলপারদের একাধিকবার বললেও তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেননি। উল্টো একটি ফ্ল্যাটের ক্রেতার স্বামী অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামকে এসব বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ডেভেলপাররা হুমকি দিয়েছেন। মতিহার থানায় ১২ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন অ্যাডভোকেট শফিকুল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফ্ল্যাট কেনার সময় ডেভেলপাররা যে চুক্তি করেছেন সে অনুযায়ী তারা কাজ করেননি। এমনকি নকশা অনুযায়ী তারা ভবনটি নির্মাণও করেননি। তারা প্রতারণা করছেন।

অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড আমার নয়, এটি আমার ভাগ্নের। তিনি বলেন, আমি নিজেও ভূমির দশ মালিকের একজন। আমার সঙ্গে তাদের একটু ঝামেলা হয়েছে। এগুলো নিয়ে বসে আমি মিটমাট করে ফেলার চেষ্টা করছি।


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এমএ বারী বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী কোনো শিক্ষক আবাসন ব্যবসার মতো লাভজনক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন না। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুজ্জামান সরকার ও রাবি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সহকারী রেজিস্ট্রার ড. মমিনুল ইসলামের আবাসন ব্যবসার বিষয়টি তার জানা নেই। লাভজনকে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান আনওয়ার হোসেন জানান, ইউনিসিটি প্রপার্টি অ্যান্ড ডেভেলপারস লিমিটেড নামের কোনো প্রতিষ্ঠান আরডিএতে তালিকাভুক্ত নয়। অভিযোগ আসার পর সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল তারিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ