প্রথমবারেই সাফল্য: পাহাড়ের চূড়ায় মিষ্টি পান চাষ

প্রকাশিত: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৩:৫৩:৫৭

প্রথমবারেই সাফল্য: পাহাড়ের চূড়ায় মিষ্টি পান চাষ

জুমের সঙ্গে এবার পাহাড়ে চূড়ায় পানচাষ করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে খাগড়াছড়ি দীঘিনালার সীমানাপাড়া এলাকার অন্তত ৬০ জন পানচাষী।
অপার সম্ভাবনাময় পার্বত্য চট্টগ্রাম যেন একখণ্ড ভূস্বর্গ। শরৎ মৌসুমে ঘন সবুজে মোড়ানো পাহাড়। কাঁচা-পাকা ধানে ভরে গেছে জুম। খাগড়াছড়ির ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বেশির ভাগ মানুষ জুম চাষের ওপর নির্ভরশীল। অতীতে এক পাহাড়ে জুম চাষ করার পর ১০ থেকে ১৫ বছর পর আবার সেই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হতো। তবে বিরতিহীনভাবে জুমে চাষাবাদ হওয়ায় কমছে জুম ভূমির উর্বরতা। জুমে ধান, হলুদ, মারফা, মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ ধরনের সবজি উৎপাদিত হয়। জুমিয়ারা জানান, অতীতে এক পাহাড়ে জুম চাষ করার পর, এক দশকের বেশি সময় পর সেই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হতো। তবে পাহাড়ে রাবার বাগান, সেগুনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক বনায়নের কারণে কমেছে জুমের পরিমাণ। বাধ্য হয়ে মাত্র ২ থেকে ৩ বছর পর একই পাহাড়ে জুমের আবাদ করা হচ্ছে। এতে কমছে জমির উর্বরতা। জুম চাষ করে ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারছে না জুমচাষীরা।
তবে জুমের সঙ্গে এবার পাহাড়ে চূড়ায় পানচাষ করে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছে খাগড়াছড়ি দীঘিনালার সীমানাপাড়া এলাকার অন্তত ৬০ জন পানচাষী। বিস্ময়কর হলেও পাহাড়ের চূড়ায় পান চাষ করেছে তারা। পানচাষীরা বলছে, জুমের চেয়ে পান চাষে লাভ বেশি। অনেকে পান চাষ করছে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানচাষীর সংখ্যা। খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের চূড়ায় প্রথমবারের মতো ৬০ বরজে পানের আবাদ করেছে চাষীরা।


খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পাহাড়ের চূড়া বা ঢালু জমিতের পানের বরজ দৃশ্যমান। এক সময় এসব পাহাড়ে কেবল জুম চাষ হলেও এখন জুমের পাশাপাশি প্রথমবাবের মতো পানচাষ করেছে চাষীরা। পাহাড়ে বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর পর পানের আবাদ শুরু করেন চাষীরা। প্রতি ২৫ শতক জমিতে পানের আবাদ করতে খরচ প্রায় ৪০ হাজার টাকা। বাজারে পানের দাম ভালো থাকলে প্রায় দেড় লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন চাষীরা। পান চাষ করে অনেকে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।
সীমানাপাড়া এলাকায় পাহাড়ের ঢালুতে জুম ক্ষেতের অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পানচাষ করেছেন নবীন ত্রিপুরা। সরেজমিন নবীন ত্রিপুরার বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সন্ত্রীক বাগানে পানের যত্ন নিচ্ছেন।
কীভাবে পানচাষ শুরু করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নবীন ত্রিপুরা জানান, আমরা এখানে বছরের পর বছর জুম চাষ করেছি। তবে এক স্বজনের মাধ্যমে পাহাড়ের চূড়ায় পানচাষের কৌশল সম্পর্কে ধারণা নিয়েছি। পরে নিজে নিজে ২০ শতক জমিতে পানের আবাদ শুরু করেছি এবং দ্রুত সাফল্য পেয়েছি। মে মাসে পানের বরজে চারা রোপণ করেছি। ধীরে ধীরে পুরো বরজ সবুজ পানে ভরে গেছে। প্রতি সপ্তাহে ১শ' বিড়া পান বিক্রি করি। এ বরজ থেকে অন্তত দেড় লাখ টাকার পান বিক্রি করতে পারব।
পাহাড়ের চূড়ায় পানচাষকে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছে কৃষি বিভাগ। দীঘিনালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ওঙ্কার বিশ্বাস জানান, কৃষকদের আর্থিক প্রণোদনা ও ঋণ সহায়তা প্রদানে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট থাকার পরও পাহাড়ে পান চাষ করে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। তবে এসব কৃষককে যাতে কৃষি ঋণের আওতায় নিয়ে আসা যায়, সেই বিষয়ে আমরা কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলেছি। কৃষকদের মাঝে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

প্রজন্মনিউজ২৪/সাখাওয়াত

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ