বাগেরহাটের করমজল প্রজনন কেন্দ্রে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী

প্রকাশিত: ২৭ অগাস্ট, ২০২০ ১১:৪৩:৪৫

বাগেরহাটের করমজল প্রজনন কেন্দ্রে ঝুঁকিতে বন্যপ্রাণী

নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভঙ্গুর অবকাঠামো নিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সুন্দরবনের একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র করমজল। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেই ক্ষতির সম্মুখিন হয় এই কেন্দ্রটি।
কয়েক মাস আগে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় এই কেন্দ্রের বিভিন্ন অবকাঠামো ও গাছপালার। গেল কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টি ও জোয়ারের পানির হাত থেকেও রক্ষা পায়নি কেন্দ্রটি।

জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে হরিণ, কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকার আবাসস্থলগুলো। জোয়ারের পানির সঙ্গে আসা পলিতে কর্দমাক্ত হয়েছে করমজলের অভ্যন্তরে পর্যটকদের জন্য করা রাস্তা ও বন্যপ্রাণীদের শেডগুলো। অবাঞ্চিত বিভিন্ন ফল ও আগাছায় নষ্ট হয়েছে সুপেয় পানির পুকুরগুলো। বনরক্ষী ও কর্মকর্তাদের প্রাণপন চেষ্টায় জোয়ারের পানিতে কোনো বন্যপ্রাণী না বের হলেও পানির উচ্চতা সামান্য বেশি হলে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারত বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকে।

সুন্দরবন বিশেষজ্ঞদের দাবি বৈশ্বিক আবহাওয়া জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে লোকালয়ে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য করমজল প্রজনন কেন্দ্রটির রাস্তাসহ সব অবকাঠামোকে যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বর্তমানে ৩শ বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ ‘বাটাগুর বাসকা’, ১৯৩টি কুমির ও ৩৬টি হরিণ রয়েছে। এছাড়াও এই বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সময় বিলুপ্ত প্রজাতির ১২টি বাটাগুর বাসকা এবং ৯৭টি কুমির সুন্দরবনে অবমুক্ত করা হয়েছে। বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই কেন্দ্রটির অবকাঠামোগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। জোয়ারের পানিতে পর্যটকদের জন্য করা কনক্রিটের রাস্তাগুলো ডুবে যায়। কাঠের তৈরি ফুট রেলের অবস্থাও নাজুক। কুমিরের ছানা লালন পালনের জন্য করা শেডগুলো ভেঙে গেছে। অনেকদিন আগে নির্মাণ করায় শেডগুলোর উপরের ছাউনি ছিঁড়ে গেছে। নেটগুলোর অবস্থাও খারাপ। এসবের মধ্যেও এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় ভাল রয়েছে করমজলের বন্যপ্রাণীরা। তবে দীর্ঘদিন এভাবে থাকলে জোয়ারের পানিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীগুলো বাইরে বের হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করেছেন বনরক্ষীরা।

বাটাগুর বাসকা’ প্রজেক্টের কর্মচারী হযরত ইউসুফ ও হযরত আলী বলেন, আমরা বাটাগুর বাসকা প্রজেক্টে চাকরি করি। সন্তানের মতই লালন পালন করি এদের। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় নিজেদের প্রাণ রক্ষায় যতটুকু চেষ্টা করি, কচ্ছপগুলো রক্ষায়ও একই ধরনের চেষ্টা করি। এবার হঠাৎ করে জোয়ারের পানি বেড়ে যাওয়ায় আমরা খুবই শঙ্কিত ছিলাম যে কচ্ছপগুলো কোনোভাবে বেরিয়ে যায় কিনা। আমরা সার্বক্ষণিক পুকুরের (কচ্ছপ লালন পালনের ক্যানেল) পাশে অবস্থান করেছিলাম। সব মিলিয়ে আমাদের কোনো কচ্ছপের কিছু হয়নি। তবে পানি যদি আরও বেশি হয় তাহলে বিলুপ্ত প্রায় কচ্ছপগুলো আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে করমজলের বন্যপ্রাণীরা হুমকির মধ্যে থাকে। এবার জোয়ারের পানিতে প্রজনন কেন্দ্রসহ সব জায়গায় পানি উঠেছিল। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বন্যপ্রাণীগুলো বিপদে পড়তে পারে। বিপদ হতে পারে দায়িত্বরত বনকর্মীদেরও। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ থেকে রক্ষা পেতে এখনই করমজলের অবকাঠামো ও প্রাণীদের বসবাসের আবাসস্থলগুলোকে উঁচু করার দাবি জানান তিনি।

করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির বলেন, চাকরি জীবনে কখনও বনের মধ্যে এত পানি দেখিনি। প্রাণপন চেষ্টা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে করমজলে থাকা প্রাণীগুলোকে আমরা রক্ষা করেছি। ভবিষ্যতে এর চেয়ে বেশি পানি উঠলে বন্যপ্রাণীগুলো রক্ষা করা কঠিন হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।
 
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় জোয়ারের পানি এবার সুন্দরবনে একটু বেশি উঠেছে। বিষয়টি মাথায় রেখে ভবিষ্যতের জন্য সুন্দরবনের অবকাঠামো নির্মাণ এবং প্রাণীদের আবাসস্থল যুগোপযোগী করে গড়ে তোলা হবে।
প্রজন্মনিউজ২৪/জহুরুল

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ