সমৃদ্ধ বাংলাদেশপর জন্য বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন

প্রকাশিত: ১৬ অগাস্ট, ২০২০ ১১:৫২:৩৪

সমৃদ্ধ বাংলাদেশপর জন্য বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োজন

 "শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড "এই উক্তিটি দ্বারা শিক্ষাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।একটি দেশের  উন্নয়নের পূর্বশর্ত সে দেশের শিক্ষা।

মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। মনে করা হয়, যে দেশে যত বেশি শিক্ষিত, সে দেশ তত বেশি উন্নত।কিন্তু আজ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যাবস্থায় নানা বৈষম্য দেখা দেয়।যা শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের বাধা হয়ে আছে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের সামনে তুলে ধরেছিল ‘দিনবদলের সনদ’যাতে তিনি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকল্প উপস্থাপন করেছিলেন।শিক্ষা ব্যবস্থাই যদি পিছিয়ে থাকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে কি করে?

প্রথমে লক্ষ্য করি বাজেটের শিক্ষাখাতের বরাদ্দের  উপর। প্রতিবছর বাজেটের সময় দেখা যায় শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ  তুলনামূলক কম। আমরা যদি প্রতি অর্থবছরের বাজেট বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখা যায় যে বাজেটে শিক্ষা খাতের সঙ্গে সব সময়ই প্রযুক্তি বাজেট সংযুক্ত থাকে। অথচ সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে শিক্ষা খাতের বাজেট প্রণয়ন  এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা উচিত।

সরকারী-বেসরকারি, মাদ্রাসা-কারিগরিসহ বহুধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের  এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০% সরকারী, বাকি ৮০% বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে লাখো- কোটি  শিক্ষার্থী। শিক্ষাব্যবস্থার এই দুই ধারা সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের মধ্যে বেতন-ভাতায় ব্যাপক বৈষম্য বিরাজমান। দিন দিন এ বৈষম্য বেড়ে চলেছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান তুলনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেশি  হওয়াতে পর্যাপ্ত  বেতন পাচ্ছেনা অনেক বেসরকারি  শিক্ষক।এ বৈষম্য দূর না হলে শিক্ষায় উন্নতি সম্ভব নয়।

সবার জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যে সরকারের ঘোষিত লক্ষ্য, তা বাস্তবায়ন করতে হলে,  এ বৈষম্য দূর করতে হবে।অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে শিক্ষার্থীদের অনেক বেতন দিতে হয়। ফলশ্রুতিতে,  সেখানে গরীব শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা করতে পারে না।এখন এটা স্পষ্ট হয়ে দাঁড়াচ্ছে যে,  বাংলাদেশে 'সবার জন্য শিক্ষা' নিছক একটি ফাঁকা  স্লোগান। সাধারণ মানুষের জন্য শিক্ষার দরজা উন্মুক্ত না করে ক্রমেই বাণিজ্যিক  পণ্যে পরিণত করা হচ্ছে। এই সুযোগে শিক্ষাবাণিজ্যের বণিকরা লুট করে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। আর শাসকগোষ্ঠী তার পাহারাদারের ভূমিকা পালন করছে মাত্র।

অনেক সময় লক্ষ্য করা  যায় শিক্ষা ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য।যার ফলে নারীর তুলনায় পুরুষেরেরা শিক্ষা ব্যবস্থায় এগিয়ে যায়।আর প্রতিবন্ধী ও আদিবাসীদের বৈষম্যের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা আজ তার "সার্বজনীন " বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলছে ।এসব বৈষম্য দূর করা হলে অতিসত্বর শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নতি দেখা দিবে।


শিক্ষকদের পাঠদানেও বৈষম্য দেখা যায়।সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ভালো পাঠদান দেয়।যা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দেয়না।কারন বেতন বৈষম্য  ও প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব নয়। আর, মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া আধুনিক বাংলাদেশ গড়া নিছকই একটি দিবাস্বপ্ন।

বাংলাদেশের শহুরে ও গ্রামীণ প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। একটি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত যেখানে ১ঃ৬০। সেখানে শহুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ অনুপাত আরো কম। পাশাপাশি, শহুরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোগত উন্নতি গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোর তুলনায় অনেক বেশি।  
শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপাত বেশি থাকায় গ্রামের শিক্ষার্থী তুলনামূলক বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। গ্রামে যেহেতু বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বসবাস করে, সেহেতু গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আরো বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।  

বর্তমান বিশ্বে চোখ বুলালেই আমরা দেখি,আমেরিকাতে প্রায় ৯২% লোক শিক্ষিত।চীন,ভারত,সিঙ্গাপুর এর মত দেশে বর্তমানে উচ্চশিক্ষার জন্য অনেক এগিয়ে এসেছে।শুধু মাত্র বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যাবস্থার জন্য আজকে তারা বিশ্বে উচ্চশিক্ষার জন্য উন্নত।বাংলাদেশে বৈষম্যহীনতার জন্য তা অনেক পিছিয়ে আছে বৈষম্যহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে অতিসত্বর শিক্ষা ব্যবস্থায় উন্নয়ন সাধিত হবে।

লেখক
আব্দুল্লাহ আল নোমান
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ