একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষা কার্যক্রম প্রস্তাবনা, নোবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিরুপ প্রতিক্রিয়া


ফাহাদ হোসেন, নোবিপ্রবি প্রতিনিধি: গত ৯ আগস্ট নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি)একটি একাডেমিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় বিগত ১৭ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বিভাগের চলমান সেমিস্টারের সকল কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকল ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষার্থীদের চলমান সেমিস্টারের অবশিষ্ট ক্লাস, সিটি ও এসাইনমেন্ট ১৫ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে অর্থাৎ কোর্স শেষ করার সাথে সাথে শিক্ষার্থীদের ৩০ শতাংশ নম্বরের সকল কার্যক্রম অনলাইনে শেষ করতে হবে এবং বাকি ৭০ শতাংশ নম্বরের পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় খোলা সাপেক্ষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, ক্যাম্পাস খোলার সময় বৃদ্ধি পেলে ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পরবর্তী সেমিস্টারের কার্যক্রম অনলাইনেই শুরু করা হবে এবং সেমিস্টার ফাইনাল বাদে বাকি কার্যক্রম অনলাইনে শেষ করা হবে।যদি সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা যায় তবে পরর্বতী সেমিস্টারে না শুরু করে, চলমান সেমিষ্টারের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। চলমান সেমিষ্টার সম্পূর্ণ করেই পরর্বতী সেমিষ্টারের কার্যক্রম শুরু হবে।

কিন্তু যদি সরকার কর্তৃক ছুটির মেয়াদ আরো বৃদ্ধি পায়, তবে পরর্বতী সেমিষ্টারের  পাঠদান শেষ করে ক্যাম্পাস খুললে অবশিষ্ট থাকা পূর্বের সেমিস্টারের পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং মাঝখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধামত উপযুক্ত সময় বিরতি দিয়ে পরবর্তী সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু করা হবে। এসব সিদ্ধান্ত সম্ভাব্য বলে জানিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল সূত্র।

পরীক্ষায় সিলেবাস কমানোর ব্যাপারে বিভাগ সমূহের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে বলে জানায় একাডেমিক কাউন্সিল। বিষয় সংশিষ্ট শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধামত সিলেবাস কমিয়ে নির্দিষ্ট কারিকুলাম অনুযায়ী পরীক্ষা নিতে পারবেন।ইউজিসির নির্দেশনা ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয়  একাডেমিক কাউন্সিল।

একাডেমিক কাউন্সিলের এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে ও বিপক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমত রয়েছ। বেশকিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হিসেবে অভিমত দিয়েছে। তাদের মতে, " যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ৫ মাস ধরে বন্ধ। ঠিক কবে বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে এ বিষয়ে খোদ প্রশাসনই জানে না। এ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে তাদের মূল্যবান শিক্ষাবর্ষ সেশনজটের কবলে পড়বে না। "

"এক্ষেত্রে সিলেবাস কমিয়ে সেমিষ্টার পরীক্ষা নেওয়া হলে  ভালো হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর  সময়টাও আরো কিছুটা বাড়িয়ে দিলে ভালো হবে। নয়তো তা শিক্ষার্থীদের জন্য চাপ সৃষ্টি করবে।" আবার, অনেকে মনে করছেন সিলেবাস কমিয়ে বা স্বল্প সময় দিয়ে  পরীক্ষা গ্রহণ  কোনভাবেই কল্যাণকর হবে না। কারণ এতে শিক্ষার গুণগত মান বজায় থাকেনা।

এছাড়াও অন্যান্য নানাবিধ সমস্যার কারণে শুধুমাত্র অনলাইনে পুরো সেমিস্টার শেষ করার বিপক্ষে মত জানিয়েছে  অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে ইতিবাচক থেকে নেতিবাচক প্রভাবই লক্ষ্য করা যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

বিভিন্ন বিভাগে   নিয়মিত অনলাইন ক্লাশে অংশ গ্রহণকারী  শিক্ষার্থীদের অভিমত , ক্যাম্পাসের ক্লাশরুমে বসে ক্লাশ করা এবং  অনলাইনে ক্লাশ করার মধ্য রয়েছে বিরাট প্রভেদ। অনলাইন ক্লাসে  সব বিষয়গুলো যথার্থভাবে বুঝা সম্ভব হয়না। অনলাইনে শিক্ষকের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার সুযোগও খুব কম পাওয়া যায়। আবার ব্যবহারিক ক্লাশগুলো তো অনলাইনে করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে ক্যাম্পাস খুললে প্রয়োজন যথেষ্ট সময় এবং অন্যান বিষয়ের জন্যও প্রয়োজন রিভিউ ক্লাশ।

বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থী গ্রামাঞ্চলে বসবাস করার কারণে  শিক্ষার্থীরা ডিভাইস সমস্যা, নেটওয়ার্ক সমস্যা,  ঘন ঘন লোডশেডিং, এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেট দুর্বলতার কারণে সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত অনলাইন ক্লাশে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে,  প্রতিটি অনলাইন ক্লাসে গড়ে ৫০-৬০ % বেশি শিক্ষার্থীর উপস্থিত পাওয়া যায় না। এতে করে বিনষ্ট হচ্ছে সার্বজনীন শিক্ষার অধিকার।

বিভিন্ন  বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বিভাগ পুরোদমে অনলাইন  ক্লাশ শুরু করেনি। কোন কোন বিভাগে মাত্র ১-২ টি কোর্সের ক্লাশ চলমান। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের অনাগ্রহ এবং নানাবিধ সমস্যার কারণেই সেসকল বিভাগের শিক্ষকরা ক্লাশ নেয়া শুরু করতে পারেননি।

প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়ে এখন যদি এসকল ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষকেরা পুরোদমে ক্লাশ নেয়া শুরু করেও থাকেন তারপরেও এত কম সময়ে (১৫ সেপ্টেম্বর এর মধ্যে) কোর্সগুলো সম্পূর্ণভাবে শেষ করা সম্ভব নয়। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ক্লাস, টেস্ট, এসাইমেন্ট শেষ করা গেলেও সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরীক্ষা নেওয়া হলে,  ফলাফল বিপর্যয়ে মতো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মতামত জানিয়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থী।

সেপ্টেম্বরে ক্যাম্পাস খুললে চলমান সেমিস্টারের পরীক্ষা এবং বিলম্ব হলে পরবর্তীতে দুটি সেমিস্টারের পরীক্ষা একসাথে নেয়া হবে"-প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে কোনভাবেই একমত পোষন করছেন না বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। সেপ্টেম্বরে ক্যাম্পাস খুললেও পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময় চাইছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। করোনাকালীন সময়ে অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

নিজেদেরকে মানসিকভাবে তৈরী করার জন্যও সময় প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের। সকল শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা এবং সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে জোর অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন যদি শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারেন তাহলে অনলাইন শ্রেনিকার্যক্রম নিয়ে শিক্ষার্থীদের কোন বিরুপ মতামত  থাকবেনা।

প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র  শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষন করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেইজ  থেকে অনলাইনে ভোট দেয়ার একটি কার্যক্রমের আয়োজন করে যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রশাসন সিদ্ধান্তে একমত পোষন করলে "হ্যাঁ" ভোট এবং ভিন্নমত পোষন করলে "না" ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত,  বিশ্ববিদ্যালয়ের ১,৩২০ জন শিক্ষার্থী ভোট দেয়ার কার্যক্রমে অংশ নিয়ে ২৮৭ জন হ্যা ভোট দিয়েছেন যা শতকরা ২২ শতাংশ এবং ১০৩৩ জন শিক্ষার্থী না ভোট দিয়েছেন যা শতকরা ৭৮ শতাংশ।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ