শিশুদের মানসিক ও শারিরী বিকাশে বাধা স্মার্ট ফোন

প্রকাশিত: ১২ অগাস্ট, ২০২০ ০৩:০৬:৩২ || পরিবর্তিত: ১২ অগাস্ট, ২০২০ ০৩:০৬:৩২

শিশুদের মানসিক ও শারিরী বিকাশে বাধা স্মার্ট ফোন

জহুরুল হক নিজস্ব প্রতিবেদক : মোবাইল ফোন শিশুদের মানুষিক ও শারিরীক গঠনে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। শহর কেন্দ্রিক চাকরিজীবী অভিবাকরা শিশুদের নিয়ে নানারকম সমস্যার মুখোমোখি হচ্ছেন।

রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে বসবাসরত একটি মাল্টি কোম্পানিতে চাকরিরত জামালের সাথে আজ বুধবার কথা হয়। তিনি জানান, আমার ছয় বছরের ছেলে ফাহিম ছোট থেকে মোবাইল ও টেলিভিশনে কার্টুন দেখে সময় কাটাতো। আমরা নিশ্চিন্তায় থাকতাম। এখন সবসময় কার্টুন দেখে মোবাইল ছাড়া খাওয়া পড়াসহ কোন কাজ করতে চায় না। স্কুলে সহপাঠিদের সাথে মিশতে চায় না সবসময় মোবাইল নিয়েই থাকে।

বর্তমানে ফাহিম  খালি চোখে অক্ষর দেখতে পায় না । ডাক্তার দেখিয়েছি চশমা দিয়েছেন ও মোবাইল না দেখার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্ত মোবাইল ছাড়া এখন সে কিছুই করতে চায় না।

চিকিৎসা  বিজ্ঞানের দাবি, শিশুদের হাতে মোবাইল ফোনসহ কোনো ইলেকট্রনিক্স গেজেট দেওয়া উচিত নয়। মোবাইল ফোন থেকে নির্গত রশ্মি শিশুদের দৃষ্টিশক্তির ভীষণ ক্ষতি করে। যেসব শিশু দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা মোবাইল ফোনে ভিডিও গেম খেলে, খুব অল্প বয়সে তারা চোখের সমস্যায় পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা এক মিনিট মোবাইলে কথা বললে মস্তিষ্কে যে কম্পন সৃষ্টি হয় তা স্থির হতে সময় লাগে দুই ঘন্টা। ওই গবেষণায় আরো দাবি করা হয়, যেসব বাচ্চারা দৈনিক পাঁচ-ছয় ঘন্টা মোবাইল ব্যবহার করে তাদের বুদ্ধির বিকাশ সাধারণ বাচ্চাদের চেয়ে কম হয়।

শিশুদের উপর স্মার্টফোনের খারাপ প্রভাব

মোবাইল ফোন যে শিশু বিভ্রান্ত করার বা তাদের আটকে রাখার সহজ উপায় হতে পারে। যাইহোক, এগুলি তাদের নিজস্ব দোষের সাথে আসে। নিয়মিত মোবাইল ফোন ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাবগুলির মধ্যে রয়েছে।

১. টিউমার

যেসব শিশুদের অনেকটা বর্ধিত সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার করার প্রবণতা রয়েছে, তাদের কানের কাছে ফোন রাখার কারণে, বিশেষত কান এবং মস্তিষ্কের অঞ্চলে অ্যান্টি–ম্যালিগন্যান্ট টিউমার হওয়ার উচ্চতর সম্ভাবনা দেখা গেছে। মস্তিস্কের মতো অঙ্গগুলির জন্য হাড়, টিস্যু এবং প্রতিরক্ষামূলক আবরণগুলি শিশুদের মধ্যে এখনও খুব পাতলা। সুতরাং, এই অঙ্গগুলি মোবাইল ফোন থেকে নির্গত ৬০% রেডিয়েশন শোষণ করে। বিকিরণটি মানুষের শরীরে অদ্ভুত প্রভাব ফেলতে পারে, কখনও কখনও সরাসরি স্নায়ুতন্ত্রকেও প্রভাবিত করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটিকে একটি “সম্ভাব্য কার্সিনোজেন” হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে এবং ক্যান্সারের সম্ভাব্য ঝুঁকি বহন করে।

২. মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের সমস্যা

গবেষণায় দেখা গেছে যে কেবল ২ মিনিটের জন্য ফোনে কথা বলার মাধ্যমে, কোনও শিশুর মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপ পরিবর্তন হয়ে যায়। এই ত্রুটিযুক্ত ক্রিয়াকলাপটি মেজাজের ধরণ এবং আচরণগত প্রবণতার পরিবর্তনের কারণ হতে পারে এবং শিশুদের নতুন জিনিস শিখতে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে সমস্যা হতে পারে।

৩. ঘুমে ব্যাঘাত

শিশুরা বন্ধুদের সাথে রাতে অনেক দেরি পর্যন্ত কথা বলতে, গেম খেলতে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রোল করতে পারে, যা সময়ের সাথে সাথে ক্লান্তি এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করে। কম ঘুমও শিক্ষা জীবনকে ব্যহত করে, যেহেতু শিশুরা স্কুলে যা পড়ানো হয় তাতে মনোনিবেশ করতে খুব বেশি ঘুমের প্রয়োজন। অতএব, এটির একটি ডোমিনো প্রভাব রয়েছে যা তাদের জীবনের সমস্ত স্তরে প্রবেশ করে।

৪. মেডিকেল ইস্যু

শিশুদের ফ্রি সময়ে মোবাইল ফোনে চিপকে থাকার ফলে তারা শারীরিক ক্রিয়ায় অংশ নেয় না এবং তাজা বাতাস পায় না। এটি তাদের স্থূলত্ব এবং অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকির মধ্যে ফেলে, যা পরে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো ক্ষতিকারক রোগে পরিণত হতে পারে।
5. মানসিক স্বাস্থ্য

সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুরা সাইবারবুলির সংস্পর্শে আসতে পারে যারা ইন্টারনেটে তাদের হ্যারাস করে এবং তাদেরকে হুমকি দেয়। অনেক শিশু যারা সাইবারবুল হয়েছে তারা কেবলমাত্র জীবনের অনেক পরে তাদের অভিজ্ঞতা স্বীকার করতে পারে, যখন ইতিমধ্যে মানসিক ক্ষতি হয়ে গেছে। শিশুরা যখন অনলাইনের প্রতি বেশি মন দিয়ে অপেক্ষা করে, তারা মনোযোগ দেয় না, তখন সামাজিক মিডিয়া হতাশা ও উদ্বেগও জাগাতে পারে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান

 

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ