ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা হলেই টাকা অচল হয় না


আমাদের অনেকের মাঝেই একটা ধারণা আছে। নোট যদি ছেঁড়া-ফাটা হয় কিংবা ময়লা, নরম হয়ে যায়, তাহলে হয়তো আর চলবে না। এটা ভুল ধারণা। অনেকেই জানেন না, একটা নোট কতটুকু ছেঁড়া-ফাটা থাকলে তার মূল্যমানে কোন সমস্যা হয় না। যদি নিজের কাছে রাখলে মনে হয় সেই নোটের কোন বিনিময় মূল্য পাওয়া যাবে না, তবে যে কোন ব্যাংকের শাখা থেকে টাকা পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।

একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। ঘটনাটি বেশ আগের। আমার এক প্রতিবেশী বাজার থেকে দুই কেজি মাংস কেনার পর বিক্রেতাকে পাঁচশত টাকার দুইটা নোট দিলেন। বিক্রেতা একটি নোট রেখে অন্যটি ফেরত দিয়ে দিলেন। টাকার এক কোনায় সামান্য একটু ছেঁড়া আছে, সেজন্য সেই টাকা পাল্টে দিতে বললেন।

সেই প্রতিবেশী মানুষটি পড়লেন মহাবিপদে। পকেটে সেই মুহূর্তে তেমন টাকা ছিল না, যা মাংস বিক্রেতাকে দিতে পারেন। দোকানিকে যতই তিনি বোঝাবার চেষ্টা করলেন, এই ছেঁড়ায় কোন সমস্যা হবে না কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হলো।

দোকানির সাফ কথা, ভাইজান এই টাকা কেউ নেবে না। ব্যাংকের ডিপিএস জমা দিতে পারবো না। আপনি পাল্টে না দিলে আমার পুরাই ক্ষতি হয়ে যাবে। বাধ্য হয়ে অনেক মানুষজনের মধ্যে এক কেজি মাংস ফেরত দিলেন। দুই কেজির পরিবর্তে এক কেজি মাংস নিয়ে বাড়ি আসলেন।

এরপর বিকালে যখন তার সাথে দেখা হলো, আমাকে সেই পাঁচশত টাকা দিয়ে বললেন এটা কি করা যায়? সামান্য একটু ছেঁড়া ছিল। আমি বললাম, এই টাকায় সমস্যা নেই। এটা চলবে। যে কোন ব্যাংকের শাখায় নিয়ে গেলে নিয়ম অনুযায়ী পাল্টে দেবে। তখন তিনি উপরের ঘটনা খুলে বললেন।

সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টি সহজ ও বোধগম্য করা করার জন্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত পরিপত্র অনুযায়ী, ব্যাংকের প্রত্যেক শাখায় জনসাধারণের সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে “ছেঁড়া ফাটা ও ময়লা নোট গ্রহণ করা হয়”, এই মর্মে নোটিশ স্থাপন করতে হবে।

নোটিশে উল্লেখ থাকবে, ময়লা অবিকৃত নোটের বিনিময়মূল্য জমা দানের সাথেই প্রদান করা হয়। কোন ছেঁড়া নোটের কোন অংশ যদি অনুপস্থিত থাকে এবং বিদ্যমান অংশ যদি ৯০% এর অধিক হয়, তবে সেরূপ নোটের সম্পূর্ণ বিনিময়মূল্য সরাসরি কাউন্টারের মাধ্যমে প্রদান করা হয়। একইভাবে, কোন নোট যদি একাধিক খণ্ডে খণ্ডিত না হয় এবং নোটের সম্পূর্ণ অংশ বিদ্যমান থাকে, সে ক্ষেত্রেও নোটের সম্পূর্ণ বিনিময় মূল্য কাউন্টারেই প্রদান করা হয়।

ছেঁড়া-ফাটা ও ময়লা টাকা সম্পর্কে ধারণা না থাকার কারণে বিভিন্ন দালাল শ্রেণি বাট্টায় টাকা বিনিময়ের ব্যবসা করে। অথচ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কোন না কোন ব্যাংকের শাখা আছে। প্রয়োজন শুধু আমাদের সচেতনতা।

লেখক: রিয়াজুল হক, অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রজন্মনিউজি২৪/ফরিদ