বন্যার ধরন বদলে যাচ্ছে?

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই, ২০২০ ১২:১৮:৫২

বন্যার ধরন বদলে যাচ্ছে?

 

বাংলাদেশের তিনটি প্রধান নদী গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা হয়ে মে থেকে অক্টোবরের মধ্যে উজানের দেশ নেপাল, ভারত ও ভুটান থেকে ৮ লাখ ৪৪ হাজার কোটি কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়, যা বার্ষিক মোট প্রবাহের ৯৫ শতাংশ, বাংলাপিডিয়ার তথ্য এ কথাই বলছে।

উজানে বৃষ্টিপাত বেশি হলে সেই পানি সাগরে যাওয়ার পথে নদীর তীর ছাপিয়ে প্লাবিত করে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চল। ফলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং মেঘনা অববাহিকার মোটামুটি ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে প্লাবিত হয়, যা দেশের মোট ভূখণ্ডের ১৮ শতাংশের মত।

তিন বছর আগেও বন্যায় দেশের ৪২ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর এবারের বন্যা মৌসুমে এখন পর্যন্ত দেশের অন্তত ৩১ শতাংশ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

গত এক মাসে উজানের ঢলে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা তিন দফা বন্যার কবলে পড়েছে। এবার ব্যপ্তির বিচারে আগের অনেক বন্যার চেয়ে কম ভয়ঙ্কর হয়েছে। যদিও এবারের বন্যার গতি-প্রকৃতি ‘কিছুটা ব্যতিক্রম’ বলে মনে করছেন একজন বিশেষজ্ঞ।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলছেন, রাস্তাঘাট আর অবকাঠামোর প্রচুর উন্নয়ন হওয়ায় অনেক জায়গায়ই নদীর মুখ ভরাট হয়ে গেছে। তাতে বন্যা আর আগের মত বেশি এলাকায় না ছড়িয়ে অববাহিকায়তেই আটকে থাকছে, ফলে বন্যার স্থায়িত্ব বাড়ছে।   

তিনি বলেন, এবারের বন্যায় বেশ কিছু নতুন চিত্র আমরা দেখতে পাচ্ছি। আগে বন্যা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ত। এখন বন্যার গতিপথও আগের চেয়ে কিছুটা বদলে গেছে বলে মনে হচ্ছে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, সে হিসেবে এবারের বন্যার ব্যাপ্তি ততটা মারাত্মক হয়নি। কিন্তু স্থায়িত্ব বেড়ে যাওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। দীর্ঘ সময় বন্যা থাকলে বাঁধ টেকে না, মাটিও নরম হয়ে যায়। পানি যখন নামে, তখন পাড় ভাঙে বেশি। ফলে এবার ভাঙন মারাত্মক আকার নিতে পারে।

চলতি মৌসুমে বন্যা শুরু হয়েছিল গত ২৬ জুন। প্রথম ধাপে অন্তত ১০টি জেলায়, দ্বিতীয় ধাপে আরও আটটি জেলায় বিস্তার ঘটে বন্যার। ২৬ জুলাই পর্যন্ত সব মিলিয়ে দেশের ৩১ জেলার নিম্নাঞ্চল তিন ধাপে প্লাবিত হয়েছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালে দেশে বড় বন্যা হয়েছে। সেগুলোর তুলনায় এবারের বন্যার ধরনে ভিন্নতা রয়েছে বেশ কিছু দিক দিয়ে।

আবার সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৯ সালের বন্যার সঙ্গে অনেক দিক দিয়ে মিল রয়েছে। সে কারণেই তার মনে হচ্ছে, দেশে বন্যার চরিত্র হয়ত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা পাল্টে যেতে শুরু করেছে।

গেল বছর ১২ জুলাই বন্যা শুরু হয়েছিল। এবার শুরু হয় ২৬ জুনের দিকে। গতবার দুই-তিন দফা বন্যা হলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এমনিতে প্রতিবার বন্যা ১০ থেকে ১৪ দিনের মত স্থায়ী হয়, পরে পানি নেমে যায়। কিন্তু এবার দুই ঢলের মাঝে সময়ের ব্যবধান কম হওয়ায় ইতোমধ্যে টানা বন্যার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের বড় বন্যাগুলোর মধ্যে ১৯৮৮ সালের বন্যা হয়েছিল অগাস্ট সেপ্টেম্বর সময়ে। বছরের একই সময়ে হয়েছিল ১৯৯৮ সালের বন্যাও। আর সাম্প্রতিক সময়ে ২০১৭ সালের বন্যা শুরু হয়েছিল জুলাই মাসে।

অধ্যাপক সাইফুল বলেন, এবারের বন্যার গতি-প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে একটু আগেই শুরু হয়েছে। বন্যার সিজনটা এগিয়ে এলো কিনা- বুঝতে পারছি না। দেশের উজানেও বন্যা তুলনামুলক আগে শুরু হল।

১৯৮৮ সালের বন্যায় দেশের ৬১ শতাংশ এলাকা দুই মাস ধরে, ১৯৯৮ সালের বন্যায় ৬৮ শতাংশ এলাকা এক মাস ধরে প্লাবিত ছিল।

এবারের বন্যায় ইতোমধ্যে এক মাস পেরিয়ে গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, চলমান বন্যা পরিস্থিতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ক্রমান্বয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

দেশের নদ-নদীগুলোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০১টি পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৪৪টি পয়েন্ট রোববারও পানি বাড়ছে; কমছে ৫৪টি পয়েন্টে। ১৮টি নদীর ২৮টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার উপরে বয়ে যাচ্ছে।

অধ্যাপক সাইফুল বলেন, ১৯৯৮ সালে দুই মাসের বন্যা দেখেছি। তারপরে এবার এত লম্বা সময়ের বন্যা...। ব্যাপ্তিটা অত বড় না, কিন্তু ডিউরেশনের দিক থেকে এটাও বড় বন্যা।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














A PHP Error was encountered

Severity: Core Warning

Message: PHP Startup: Unable to load dynamic library '/opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so' - /opt/cpanel/ea-php56/root/usr/lib64/php/modules/redis.so: cannot open shared object file: No such file or directory

Filename: Unknown

Line Number: 0

Backtrace: