নোবিপ্রবি প্রশাসনের ৫৭ ধারা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

প্রকাশিত: ২৬ জুলাই, ২০২০ ০৩:২৬:১৩

নোবিপ্রবি প্রশাসনের ৫৭ ধারা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করে গত ১৬ জুলাই একটি নোটিশ দেয়       নোবিপ্রবি প্রশাসন। নোটিশে শিক্ষক,কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন স্বাক্ষরিত এ অফিস আদেশে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশক্রমে জানানো যাচ্ছে যে, সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি) এর কতিপয় শিক্ষক,কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফেসবুক,টুইটার সহ অসত্য তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়া,কমেন্টস করা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও চাকুরী বিধিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন যা শাস্তিমূলক কর্মকাণ্ড বলে পরিগনিত হয়।

ফেসবুক ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নির্দেশিকা -২০১৯ এর ১০ এবং ২০১৮ সালের ৪৬ নং আইন এ ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং ডিজিটাল মাধ্যমে সংগঠিত অপরাধ শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ, দমন, বিচার ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়নপ্রকল্পে প্রণীত আইন এ স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক,কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদেরকে সচেতন হতে হবে অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে বিধি বিধান ও দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ জানানো হয়।

এ আদেশ জারির পর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে এভাবে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা  হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, এখানে কেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী দের জন্য জন্য নির্দেশিত আইন প্রয়োগ করা হবে।

নোবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গণতন্ত্র, গণমাধ্যম, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বাস্তবায়ন করা একজন গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে এটা আমাদেরকে খুবই হতাশ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মূলত আমরা ‘মানুষকে ভয় দেখানো আর ভয়ে রাখার আইন’ বলতে পারি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহি কোন কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সেখানে আবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটা কালো আইন কেন নতুন করে যোগ করতে হবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলার অধিকার রয়েছে। সেখানে এই ধরণের আইন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে প্রয়োগ করা এটা আমাদের প্রতিবাদ করার জায়গা সংকুচিত করা হয়েছে বলে আমি মনে করি। অতি শিগগিরই এই ধরণের আইন বাতিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহবান জানাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাসুদ কাইয়ুম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একটি মুক্তচিন্তা চর্চা করার জায়গা। এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা অনুচিত। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রচার করা, কারো বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে অযাচিত মন্তব্য করা এগুলো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। এক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, এটি একটি রাষ্ট্রীয় আইন। আমি মনে করি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই আদেশের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এমন কোন তথ্য দেয়া উচিৎ না, যা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অথবা সংশ্লিষ্ট কারো সম্মান ক্ষুন্ন করে।

বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার ড. আবুল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হলেও এটা সরকারি আইনকানুন এর বাইরে না। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী সহ রাষ্ট্রের সকল নাগরিক এই আইনের আওতাধীন। এই আইনে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা খুব একটা অবগত নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো মন্তব্য কিংবা কোনো কারণে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা যাতে সমস্যার সম্মুখীন না হয় সে বিষয়ে এই নোটিশের মাধ্যমে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কোনো অসত্য তথ্য যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে প্রচার করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এই আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান/ফাহাদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ