করোনার জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে ঋণখেলাপিতে বড় ছাড়


করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের ঋণখেলাপিদের বড় ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এখন থেকে চলমান বা বিতরণ করা ঋণখেলাপি হিসেবে শ্রেণিবিন্যাসিত করার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে এসব ঋণখেলাপি হওয়ার পর বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে বিভক্ত হওয়ার মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। অর্ধেকেরও বেশি কমিয়ে দেয়া হয়েছে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখার হার।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। আলোচ্য খাতে খেলাপি ঋণ ও প্রভিশনিংয়ের নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়েছে।

আগের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণ এক বছর পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকলে তা মন্দ বা কুঋণে পরিণত হতো, নতুন নীতিমালা অনুযায়ী এখন হবে আড়াই বছর পর। অর্থাৎ দেড় বছর বাড়ানো হয়েছে। এভাবে খেলাপি ঋণের সব ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিতে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করতে নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এর ফলে ব্যাংকগুলোর এ খাতে খেলাপি ঋণ কমে যাবে। খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন খাতে যে অর্থ আটকে রয়েছে সেগুলোও বাজারে চলে আসবে। এছাড়া নতুন করে এ খাতে ঋণখেলাপি হতে বেশি সময় লাগবে। একই সঙ্গে খেলাপির বিভিন্ন শ্রেণিতে যেতেও বেশি সময় লাগবে। এসব শ্রেণিতে প্রভিশন রাখার হারও কমানো হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর তহবিল প্রভিশন খাতে আটকে থাকার পরিমাণ কমে যাবে। নিজস্ব তহবিলের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণের সক্ষমতা বাড়বে। কোনো ঋণখেলাপি হলে সময় অনুযায়ী তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- নিম্নমান, সন্দেহজনক ও মন্দ ঋণ। নতুন নীতিমালাটি শুধু কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্রযোজ্য হবে। এর বাইরে অন্যান্য খাতে প্রচলিত নীতিমালা বহাল থাকবে।

করোনার প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কম সুদে ঋণ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০ হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করেছে। এ তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে না। এ খাতে ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালায় ওই ছাড় দিয়েছে। আগের নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণের কিস্তি বা ঋণ পরিশোধের শেষ দিনের পর থেকে তিন মাস অতিক্রম হলেই তা বিশেষ অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর হতো। এটি খেলাপি ঋণের আগের ধাপ। নতুন নীতিমালায় এ সীমা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ফলে এখনও কোনো ঋণ বা এর কিস্তি অপরিশোধিত থাকা অবস্থায় ৩ মাস অতিক্রম হলে তা বিশেষ অ্যাকাউন্টে চলে যাবে। আগে এ ধরনের নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হতো ১ শতাংশ হারে। এখন তা কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ ছাড় দেয়া হয়েছে।

প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি পরিশোধের শেষ দিন থেকে ৬ মাস অতিক্রম হলেই তা নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হতো। নয় মাসের কম সময় পর্যন্ত নিম্নমান হিসেবে বিবেচিত হতো। নতুন নিয়মে কিস্তি পরিশোধের ৬ মাস থেকে ১৮ মাসের কম বা দেড় বছরের কম সময় পর্যন্ত নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। এ খাতে সময় সীমা বাড়ল ৯ মাস। নিম্নমান ঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল ২০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

এ খাতে প্রভিশনের হার কমল ১৫ শতাংশ। আগের নিয়মে কোনো চলমান ঋণ বা এর কোনো কিস্তি পরিশোধের ৯ মাস থেকে ১২ মাসের কম সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসাবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হতো। এখন ১৮ মাসের বেশি থেকে ৩০ মাসের কম বা আড়াই বছরের কম সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হবে। সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল ৫০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে। ছাড় দেয়া হয়েছে ৩০ শতাংশ।

আগের নীতিমালায় কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি এক বছর থেকে দেড় বছর পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকলে তা মন্দ হিসেবে শ্রেণিবিন্যাসিত হতো। এখন কোনো ঋণ বা ঋণের কিস্তি ৩০ মাসের বেশি বা আড়াই বছরের বেশি খেলাপি হিসেবে থাকলে তা মন্দ বা কুঋণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। কুঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল শতভাগ। নতুন নিয়মেও তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
প্রজন্মনিউজ২৪/জহুরুল