যখন কমতে শুরু করবে বিশ্বের জনসংখ্যা

প্রকাশিত: ১৮ জুলাই, ২০২০ ১০:৩০:১৫

যখন কমতে শুরু করবে বিশ্বের জনসংখ্যা

 

বর্তমানে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭৯ কোটি ৮১ লাখ। ২০৬৪ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছবে। এরপর বর্তমান শতাব্দীর শেষে কমতে কমতে  গিয়ে দাঁড়াবে ৮৮০ কোটিতে। এমনটাই উঠে এসেছে নতুন এক গবেষণায়। কিন্তু কীসের ভিত্তিতে গবেষকরা এমন পূর্বাভাস দিলেন? তাদের গবেষণায় বলা হয়েছে, নারীদের আরো অধিকতরহারে শিক্ষা অর্জন এবং গর্ভনিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করার ফলেই জনসংখ্যা কমে আসবে।

জনসংখ্যা বাড়তে বর্তমান হারে (প্রতি নারীর সক্ষমতা ২ দশমিক ১) যে জন্মহার লাগে ২১০০ সাল শুরুর সময় বিশ্বের ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৮৩টিরই সেই সক্ষমতা থাকবে না। ওয়াশিংটন স্কুল অব মেডিসিনের ইনস্টিটিউব ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভালুয়েশন-এর গবেষকরা একথা বলেছেন।

গবেষকরা বলছেন, জাপান, থাইল্যান্ড, ইতালি ও স্পেনের মতো অন্তত প্রায় ২৩টি দেশের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ কমে যাবে। যদিও সাব-সাহারা অঞ্চলে জনসংখ্যা তিনগুণ হয়ে যাবে এবং বর্তমান শতাব্দী শেষে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকই হবে আফ্রিকা মহাদেশের।

মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) বিখ্যাত সাময়িকী ল্যানসেট-এ প্রকাশিত স্টাডি আরো বলছে, ভারত ও চীনসহ কিছু দেশে নাটকীয়ভাবে কর্মজীবী জনসংখ্যা কমে যাবে, ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এছাড়া শ্রমশক্তি ও সামাজিক সহযোগিতার পদ্ধতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মৃত্যুহার কমলেও গড় আয়ু বাড়বে। ফলে ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ হবে ২৩৭ কোটি। একই সময় ২০ বছরের কম বয়সী মানুষ থাকবে ১৭০ কোটি। ৮০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ ছয়গুণ বেড়ে ১৪১ মিলিয়ন থেকে ৮৬৬ মিলিয়নে পৌঁছবে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ৪০ শতাংশ কমে হবে ৪০১ মিলিয়ন।

গবেষকরা বলছেন, জন্মহার কমে গেলেও জনসংখ্যা সংকোচনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিয়ে আসবে অভিবাসন। বিশেষ করে, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশ।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেয়া ড. ক্রিস্টোফার মারে বলেন, ‘১৯৬০ সাল থেকেই বিশ্বে তথাকথিত জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঘটে চলেছে। কিন্তু সহসাই আমরা একটি সন্ধিক্ষণের দেখা যাব, যখন বিশাল রূপান্তরের মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা খুব বেশি থেকে খুব কম হওয়া শুরু করবে।’

‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিস স্টাডি ২০১৭’ থেকে থেকে তথ্য নিয়ে গবেষকরা বলছে, জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি সংকুচিত হবে এশিয়া এবং পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে।

গবেষণাপত্রের লেখক বলছেন, ২০১৭ সালে জাপানের জনসংখ্যা ছিল ১২৮ মিলিয়ন, যা ২১০০ সালে নেমে যাবে ৬০ মিলিয়নে। থাইল্যান্ডে ৭১ মিলিয়ন থেকে কমে ৩৫ মিলিয়নে, স্পেনে ৪৬ মিলিয়ন থেকে কমে ২৩ মিলিয়নে ইতালিতে ৬১ মিলিয়ন থেকে কমে ৩১ মিলিয়নে, পর্তুগালে ১১ মিলিয়ন থেকে কমে ৫ মিলিয়নে এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৫৩ মিলিয়ন থেকে কমে ২৭ মিলিয়নে নামবে। চীনসহ মোট ৩৪টি দেশের জনসংখ্যা কমে অর্ধেক হয়ে যাবে।

মারে বলেন, জনসংখ্যাই শুধু কমবেই না, সমাজও সাধারণভাবে বয়োজ্যেষ্ঠ হয়ে পড়বে। যা স্বভাবতই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এর অর্থ দাঁড়ায়, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য বীমার সংখ্যাও বাড়বে। যদিও কর দেয়ার মানুষ কমে যাবে।’

সাব-সাহারান অঞ্চলে ২০১৭ সালে ১০৩ কোটি মানুষ ছিল। ২১০০ সাল নাগাদ তা বেড়ে হবে ৩০৭ কোটিতে! উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের জনসংখ্যা ৬০০ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ৯৭৮ মিলিয়ন হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে বিশ্বের ৭৭৯ কোটি ৮১ লাখ জনসংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ১৪৩ কোটি চীনে, আর ভারতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩৮ কোটি। ১৬ কোটি ৪৭ লাখ জনসংখ্যা নিয়ে অষ্টম স্থানে বাংলাদেশ। সিএনএন অবলম্বনে।

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ