অনলাইন ক্লাস কতটুকু মানসম্মত হবে উচ্চ শিক্ষার জন্য!


শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি জাতির শিল্প, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য উচ্চ শিক্ষার কোন  বিকল্প নেই। উচ্চ শিক্ষাব্যবস্হার বাতিঘর হয়ে দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। একবুক আশা  ও স্বপ্ন নিয়ে  দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় বিভিন্ন শ্রেণির পরিবার থেকে উঠে  আসা শিক্ষার্থীরা। লক্ষ্য একটাই,  নিজেদের একাডেমিক পড়াশোনা শেষ করে দেশ ও পরিবারের জন্য কিছু করার উদ্যম সংকল্প।

করোনা পরিস্থিতি পাল্টে দিয়েছে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক ক্যালেন্ডার। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারিভাবে বন্ধ  ঘোষণা করা হয়েছে  ১৭ ই মার্চ থেকে। তিনমাস ধরে বন্ধ রয়েছে সকল ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম।

এ প্রেক্ষাপটে, বিভিন্ন  বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন  অনলাইনে ক্লাস সম্পূর্ণ করে অসম্পূর্ণ সেমিস্টার কোর্স সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রশাসনের  মতে, অসম্পূর্ণ একাডেমিক  কোর্স সম্পূর্ণ না করতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়বে সেশনজটে। নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারবে না নিজেদের একাডেমিক কোর্স।

বাংলাদেশের অনলাইন শিক্ষা মাধ্যম বা অনলাইন ক্লাস ধারণাটি মোটামুটি বেশ পুরোনো। একবিংশ শতাব্দীর প্রথমে "উদ্ভাস" কোচিং সেন্টার বাংলাদেশে প্রথম ভিডিও মাধ্যম শিক্ষাব্যবস্হা প্রচলন করে। হাঁটাহাঁটি পা পা করে গত ২০ বছরে অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ভিডিও তৈরি ও লাইভ অনলাইন ক্লাস নিতে শুরু করেছে।

এসকল অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষামাধ্যমের অতিসাধারণ মিল হচ্ছে হাতে লিখে শিখন ও শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো আলোকে নিজেদের পাঠদান করা। পাশাপাশি, এদের অধিকাংশ ভিডিও ও অনলাইন ক্লাস প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে  অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে সেমিস্টার শেষ করা সিদ্ধান্তের পক্ষে -বিপক্ষে মত । করোনা মহামারী মধ্যে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা  বিবেচনা না এনে দ্রুত ক্লাস শেষ করার এ সিদ্ধান্তকে তারা বিবেচনা করছে মনস্তাত্ত্বিক চাপ হিসেবে। কাগজে কলমে বাংলাদেশে 4G ইন্টারনেট ব্যবস্হা চালু থাকলেও গ্রামীণ এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন 3G ইন্টারনেট সেবা দিতেই ব্যর্থ মোবাইল অপারেটরা।

তার উপর গলার কাঁটা হিসেবে অতিরিক্ত ইন্টারনেট সেবামূল্য।গতিহীন ও উচ্চমূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিয়ে অনলাইনে ক্লাস করাকে তারা নিছক বিলাসিতা হিসেবে ভাবছে। অন্যদিকে,  বাসায় বসে দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস করার উপযুক্ত পরিবেশ নেই বলে দাবী তাদের। আবার, কিছু শিক্ষার্থীর মতে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত তাদেরকে সেশনজটবিহীন শিক্ষা জীবন উপহার দিবে। পাশাপাশি, করোনাকালীন সময়ে একাডেমিক  পড়াশোনা মধ্যে থেকে নিজেদের মনমানসিকতা সুস্থ থাকবে বলে ধারণা তাদের। 

বাংলাদেশ তথ্য ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন করেছে বিগত ১২ বছরে। কিন্তু কখনো কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস ও শিক্ষামাধ্যমের রূপরেখা  নিয়ে গবেষণা করেছে? বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষকরাও কি আসলেই প্রস্তুত অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য? অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে  একাডেমিক  কোর্স হইতো আপনি শেষ করাতে পারবেন কিন্তু তাতে কি মানসম্মত উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব?  শিক্ষিত বেকারত্বের ভারে নুয়ে পড়ছে আমার দেশের চাকরি বাজার। হঠাৎ মনে পড়ল একটি প্রচলিত বাংলা প্রবাদ " দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো "।

লেখক

মোঃ ফাহাদ  হোসেন  হৃদয়

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ