নিজেকে অমিতাভ বচ্চন ভাবছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ কাইফ


ইংল্যান্ডের করা ৩২৫ রানের জবাবে ইনিংসের ২৪তম ওভারে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরে যান শচিন টেন্ডুলকার। তার আগেই ড্রেসিংরুমে ফিরেছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, ভিরেন্দর শেবাগ, দীনেশ মঙ্গিয়া এবং রাহুল দ্রাবিড়। ফলে বাকি থাকা ২৬ ওভারে ১৮০ রানের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই ছিল ভারতের জন্য।

উইকেটে তখন শেষ স্বীকৃত জুটি যুবরাজ সিং ও মোহাম্মদ কাইফ। একজনের বয়স ২১ আর অন্যজনের ২২। খেলা হচ্ছে বিখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়ামে, ম্যাচটি ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনাল। এমন পরিস্থিতি দুই তরুণের জন্য ছিল আরও বেশি কঠিন। ওপরের ব্যাটসম্যানরা যা করতে পারেননি, তাই করতে হতো কাইফ-যুবরাজকে।

আজ থেকে ঠিক ১৮ বছর আগে সেই কাজটাই করেছিলেন কাইফ ও যুবরাজ। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই ন্যাটওয়েস্ট ট্রফির ফাইনালে ষষ্ঠ উইকেটে দুজন মিলে গড়েন ১২১ রানের জুটি, তাও মাত্র ১৭.৪ ওভারে। ইনিংসের ৪২তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন ৬৯ রান করা যুবরাজ।

তখনও জয়ের জন্য বাকি ছিল ৫০ বলে ৫৯ রান। ব্যাটসম্যান হিসেবে ছিলেন শুধু কাইফ একাই। তবু সাহস হারাননি তিনি। হরভজন সিং, জহির খানদের নিয়ে ঠিকই শিরোপা জিতিয়ে দেন ভারতকে। ম্যাচের তিন বল বাকি থাকতে জয়লাভ করে ভারত। কাইফ অপরাজিত থাকেন ৭৫ বলে ৮৭ রান করে।

সেই ফাইনাল জেতানোর পর দেশে ফিরে অভূতপূর্ব সম্মান ও সংবর্ধনা পেয়েছিলেন কাইফ। যা দেখে নিজেকে বলিউড কিংবদন্তি অমিতাভ বচ্চন মনে হচ্ছিল ২২ বছর বয়সী কাইফের। সেই ম্যাচ ও ঘটনার ১৮ বছর পর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এ কথা জানিয়েছেন কাইফ।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে নিজের কলামে কাইফ লিখেছেন, ‘আমি দেশে ফেরার পর এলাহবাদে যে উৎসব ছিল, তা সামালই দেয়া যাচ্ছিল না। আমি সবসময়ই একটু লাজুক গোছের কিন্তু মানুষ আমার বাড়িতে আসতেই থাকত। মা সারাক্ষণ সবাইকে চা-নাশতা দিতে ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি মিডিয়ার আগ্রহও ছিল অন্যরকম।’

‘তারা সবখানে আমাকে অনুসরণ করতো। যমুনা নদীর তীরে ঘুড়ি ওড়াতে পছন্দ করি আমি। তো তারা সেখানেও আমার পিছু নিতো এবং বলতো, দেখুন, কাইফ আজ ঘুড়ি ওড়াচ্ছে। আরেহ ভাই, আমি তো সেই ছোটবেলা থেকেই ঘুড়ি ওড়াই! তাদের এমন প্রতিক্রিয়ার বিষয়টা ধরতে আমার বেশ সময় লেগেছিল।’

‘আমার আরেকটা বিশেষ ঘটনা মনে আছে। যেদিন বাড়িতে ফিরলাম, আমাকে একটা ছাদখোলা জিপে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। মাত্র ৬-৭ কিমি পথ যেতে প্রায় ৪ ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। কারণ রাস্তার দুই ধাঁরে মানুষের ভিড় ছিল। সবাই হাসিমুখে, ফুলের মালা হাতে দাঁড়িয়ে ছিল। যখন ছোট ছিলাম, তখন দেখতাম অমিতাভ বচ্চনকে এমনভাবে সংবর্ধনা দেয়া হয়। সেদিন আমারও নিজেকে অমিতাভ বচ্চন মনে হচ্ছিল।’

‘ক্রিকেটের কথা বললে, সেই জয়টা ভারতীয় ক্রিকেটকে একটা নতুন পর্যায়ে নিয়ে গেছে। প্রমাণ হয়েছিল যে আমরাও বড় সংগ্রহ তাড়া করতে পারি। লর্ডসে ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল জেতার পর সেটা (২০০২ সালের ন্যাটওয়েস্ট) ছিল আরেক বড় জয়। তাই মানুষ এটাকে সবসময় মনে রাখে।’

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ