পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাইয়ের কথা বলে অনেককে পথে বসান সাহেদ

প্রকাশিত: ১২ জুলাই, ২০২০ ০৫:১৮:৪৮ || পরিবর্তিত: ১২ জুলাই, ২০২০ ০৫:১৮:৪৮

পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাইয়ের কথা বলে অনেককে পথে বসান সাহেদ

কোভিড-১৯ পরীক্ষা নিয়ে মহাজালিয়াতির অন্যতম হোতা রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. সাহেদ আসলেই কোথায়। করোনা জালিয়াতিসহ নানা দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচিত হলেও পাঁচ দিনেও তার হদিস পায়নি র‌্যাব-পুলিশসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।

জল, স্থল এবং দেশের সবকটি বিমানবন্দরে সাহেদের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাঠানোর পর তিনি গ্রেফতার না হওয়ায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কেউ কেউ। অনেকেরই ধারণা, সাহেদ হয়তো এরই মধ্যে সীমান্ত পার হয়ে গেছেন। অন্যদিকে কেবল এমএলএম কিংবা করোনা জালিয়াতি নয়, প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে পাথর সাপ্লাই দেওয়ার কথা বলে অনেককে পথে বসিয়েছেন সাহেদ। তার বিরুদ্ধে চলতি বছরের জানুয়ারিতে হওয়া তিনটি মামলার সন্ধান পেয়েছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র বলছে, উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের দিনই সটকে পড়েন সাহেদ। দেশের অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার সম্পর্কের কারণে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান নিয়েও ভাবনায় পড়ে যান আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। এ সুযোগে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর আগেই সংবাদ সম্মেলন করেন সাহেদ।

তবে সর্বশেষ রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর রাতেই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। এর মধ্যে তিনি বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। অতীতে অপকর্মের সুযোগ দিয়ে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিলেও সেই রাতে সবাই মুখ ফিরিয়ে নেন। সব শেষ সাহেদ চলে যান নরসিংদীতে তার এক ঘনিষ্ঠজনের কাছে।

তবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সেখানে যাওয়ার আগে স্থান ত্যাগ করে পুনরায় রাজধানীর গুলশানে এক আত্মীয়ের বাসায় চলে আসেন সাহেদ। ওই আত্মীয় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে তাকে বেশি সময় অবস্থান করতে দেননি। ধূর্ত সাহেদ তখন চলে যান কুমিল্লায় এক পরিচিতজনের কাছে। বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করে সেখান থেকেও অন্যত্র চলে যান তিনি। যেসব জায়গায় সাহেদ অবস্থান করেছিলেন তাদের প্রত্যেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা।

সূত্র আরও বলেছে, সাহেদের ঘনিষ্ঠজনদের অন্যতম তারেক শিবলীর কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গতকাল উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে গিয়ে দ্বিতীয় তলার কিচেন রুম থেকে কম্পিউটারের হার্ডডিস্কের বিভিন্ন ভাঙা অংশ ও অনেকগুলো পাসপোর্ট উদ্ধার করে র‌্যাব।

অন্য একটি কক্ষ থেকে সাহেদ ও তার প্রয়াত বাবা সিরাজুল করিমের পাসপোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়। অভিযানের আগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের তৎপরতার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এসব হার্ডডিস্ক নষ্ট করার চেষ্টা করে সাহেদ গং। এ বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে এখানে এসেছি। পরে এ বিষয়ে জানানো হবে।’

পাথর জালিয়াতিতেও সাহেদ : গত বছর থেকে সাহেদ পদ্মা সেতুতে পাথর সরবরাহ করার কথা বলে বড় ধরনের টার্গেটে নামেন। প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিয়ে ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে প্রথমে বাজার দরের চেয়ে বেশি মূল্যে পাথর কিনে ধুন্ধুমার কান্ডে বিমোহিত করে ফেলেন পাথর ব্যবসায়ীদের। ভুক্তভোগীরা রিজেন্ট হাসপাতালের অফিসে এসে বিভিন্ন প্রভাবশালীর সঙ্গে সাহেদের ছবি দেখে বিশ্বাস খুঁজে পেতেন।

পাথর ব্যবসায়ীরা একের পর এক পাথর পাঠাতে থাকেন সাহেদের ঠিকানায়। ওই পাথরই বাজার মূল্যের চেয়ে কমে বিক্রি করে দিতেন সাহেদ। তবে কিছু দিন পার হওয়ার পরই তাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। একের পর এক চেক বাউন্স হতে থাকে। ভুক্তভোগীদেরই একজন সিলেটের জৈন্তা এলাকার মাওলা স্টোন ক্রাশারের মালিক হাজী শামসুল মাওলা।

তিনি বলেন, ‘ভাই, আমাদের সে (সাহেদ) পরিচয় দিছে প্রধানমন্ত্রীর পিএস। তার অফিসেও আমি দেখছি প্রধানমন্ত্রীসহ অনেক মন্ত্রীর সঙ্গে তার ছবি। তার কথা বিশ্বাস না কইরা উপায় আছে? ৩০ লাখ টাকার পাথর আমি পাঠায়া দেই। তবে তার (সাহেদ) প্রতিটা চেক বাউন্স হয়। পরে উত্তরা থানায় জিডি এবং সিলেট আদালতে আমি মামলা করি। আমার মতো সিলেটের আমিন এবং আকদ্দসও সাহেদের প্রতারণার শিকার। সাহেদের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে পারভেজ ও নাসির যোগাযোগ করত।’

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, সাহেদকে গ্রেফতার করতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ