করোনা শেষে আমাদের দায়িত্ব ও করণীয়


মিরাজ: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) এর প্রকোপে সারা পৃথিবীতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। পরিবার, সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক, বিনোদন, শিক্ষা সহ সবকিছুতে বিপর্যয়ের বিপরীতে খাদ্য ও চিকিৎসার অধিকার নিশ্চিতকরণের লড়াই ব্যতীত দৃশ্যমান কোন বৃহৎ কার্যক্রম নেই পৃথিবীতে। তবে রয়েই গেছে অমানবিক কার্যক্রম।

থেমে নেই পৃথিবীজুড়ে খুন, ধর্ষণ, ক্ষমতার লড়াই, বর্ণবাদ সহ বিভিন্ন ধরনের অমানবিক কাজ। করোনা মানুষকে আশানুরূপ ফল দেখাতে পারেনি।শেখাতে পারেনি মানবিকতা। বন্ধ হয়নি নোংরা রাজনীতির খেলা।

আমরা করোনাকালীন সময়ে ধর্মের সর্বোত্তম আদর্শ মানবিকতাকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারিনি। করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীর লাশ দাফনে বাধা দেয়া, মসজিদের খাটিয়া না দেয়া, কোন ইমাম জানাযা পড়ালে তাকে মসজিদ থেকে বহিষ্কার করার মতো ঘটনাও ঘটছে। স্বয়ং মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও  প্রাণভয়ে অমানবিক কান্ড করছেন।

কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকে ঘৃণার চোখে দেখা, পরিবার, সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া, গজব মনে করা, আক্রান্ত বৃদ্ধ পিতা মাতাকে বনে-ডাস্টবিনের কাছে ফেলে যাওয়া, খুন, ধর্ষণ, বাড়ীর মালিক হলে করোনা আক্রান্ত, করোনায় রাস্তায় থেকে মানবিক কাজ করা ও ভাড়া দিতে না পারা ভাড়াটিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ।

করোনার এই ক্লান্তিকাল মুহূর্তে কিছু পজেটিভ দিক হলো; করোনাকে কর্মফল মনে করে বহু মানুষ নিজেদের যাপিত জীবনের পরিবর্তন আনছে, স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় ধর্মকর্ম ও দৃশ্যমান মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। যে পুলিশকে আমরা  ভালো চোখে দেখতে পারিনা, করোনার এই ক্রান্তিকালে সেই পুলিশই মানবতার বন্ধু হয়ে সামনে দাঁড়িয়েছে।

ডাক্তারদের প্রতি আমাদের ক্ষোভ থাকলেও তারাই এখন সৃষ্টিকর্তার পর আমাদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টায় নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়ছেন। ইতিমধ্যে পুলিশ, ডাক্তার, নার্সসহ করোনায় মানবসেবায় লিপ্ত থাকা বহু ব্যক্তি জীবন দিয়েছেন। আমরা যাদের খারাপ মনে করতাম সারা বছর, তারাই এখন জীবন বাজি রেখে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের কাছে সত্যিকারের হিরোতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু আমরা আমজনতারাই পারিনি দায়িত্বশীল আচরণ করতে, পারিনি সচেতন হতে, পারিনি মানবিক হতে।

করোনাকালে সকলের কাছ থেকে সর্বোচ্চ মানবিক কর্মকাণ্ডের প্রত্যাশা থাকলেও প্রাণভয় ও জাগতিক লোভ লালসায় আমরা পশুর মতো কাজ করছি। ধর্ষণ ও খুনের মতো জঘণ্য কর্মকাণ্ড থেকেও দূরে থাকতে পারেনি অনেকে।

চীন থেকে পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া ক্ষূদ্রাকৃতির ভাইরাসটির কাছে অসহায় সকলে। এই সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সাধারণ মানুষরা সীমাহীন দুর্ভোগে দিনযাপন করছে, কর্মহীন হয়েছে বহু মানুষ। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও বেশ বিপাকে পড়েছে। অর্থনীতিতে বড় ধাক্কা এসেছে। করোনা কখন নির্মূল হবে তার নিশ্চয়তা নেই, কারণ দিন দিন পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।

ফলে করোনার প্রকোপ একসময় কমে গেলেও প্রতিটি মাধ্যমে স্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হতে অনেক সময় লাগবে। দেশব্যাপী সকল মানুষ একত্রে কর্মে যোগদান বা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে মরিয়া হয়ে উঠবে বিধায় করোনার চেয়েও বড় সমস্যা সৃষ্টি হবে তখন অর্থনীতি ও মানুষের জীবন যাপনে।

সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার আগে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে সকলকে। তখন দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা সহ সকলেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্কতা, ধৈর্য্য ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে কাজ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে দেশজুড়ে।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সীমাহীন দূর্ভোগ ও আর্থিক কষ্টে দিনযাপন করছে মানুষজন।  অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পড়েছে রাষ্ট্র। সবকিছু সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সকলে। সুযোগ সন্ধানীরা স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত। মানুষরূপী পশুগুলো তাদের ভয়াল থাবা বজায় রেখেছে।

এই অবস্থায় করোনা শেষে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগ পর্যন্ত যে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হবে সর্বত্র তা মোকাবিলা করতে গিয়ে সরকার ও সকল নাগরিকদের  নিজ নিজ জায়গা থেকে ধৈর্য্য ও বুদ্ধিভিত্তিক কার্যক্রম এবং মানবিক পদক্ষেপের মাধ্যমে এগুতে হবে।

মানুষের প্রতি মানুষের যে ঘৃণা, বিদ্বেষ, প্রতিশোধপরায়ণ মনোভাব, প্রকৃতির উপর অত্যাচারী কর্মকান্ড সব পরিহার করে করোনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মানবিক সমাজ ও দেশ গঠনে সকলেই এককাতারে এসে কাজ করতে হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ওসমান