প্রবাসীর বিয়ের নেশা, সপ্তমবারে রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করতে গিয়ে দুদকের জালে ধরা

প্রকাশিত: ০৭ জুলাই, ২০২০ ০৪:৪৬:০৩

প্রবাসীর বিয়ের নেশা, সপ্তমবারে রোহিঙ্গা নারী বিয়ে করতে গিয়ে দুদকের জালে ধরা

বয়স তার ষাটের কোটায়। থাকেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে। ছুটিতে একেকবার দেশে আসলে থাকেন ৬ মাস থেকে বছরখানেকও। সংসারে একাধিক স্ত্রী থাকলেও এ সময় তার মন করে উড়ু উড়ু। নানা ছলে নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। আবার পেশাদার লোকও আছে, যারা নিত্যনতুন রমণীর খবর নিয়ে আসেন তার কাছে। এভাবে যখনই দেশে আসেন, তখন একবার হলেও নিজের স্টাইলে ‘বিয়ে’র পিঁড়িতে বসে যান। এ ধরনের সব বিয়েই টেকে, তা নয়। বেশিরভাগ সময়েই বাসর ঘরের ফুলসজ্জার ঘ্রাণ শেষ হতে না হতেই বেজে যায় তালাকের ঘণ্টা।

চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল গ্রামের দারোগার বাড়ির বিয়েপাগল দিদারুল ইলামের গল্প এরকমই। তার কথিত ‘বিয়ে’র কোনোটি টেকে ১০ দিন, কোনোটি তার একটু বেশি! দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়া একটি অভিযোগ থেকে জানা গেছে দিদারুলের এমন সব পিলে চমকানো তথ্য। এবার তিনি আলোচনায় এসেছেন এক রোহিঙ্গা নারীকে পর পর দুবার বিয়ে করে। বিয়ে করার আগে তিনি এনআইডি থেকে শুরু করে অন্য কাগজপত্রও জালিয়াতি করেছেন। এসব অভিযোগ পেয়ে দিদারুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২।

জানা গেছে, অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এক রোহিঙ্গা নারীকে চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে আসেন দিদারুল। এরপর বিয়ে ছাড়াই ওই নারীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন তিনি। পরে ২০১৮ সালের ২১ জুন ওই নারীকে ২০০ টাকা স্ট্যাম্পের হলফনামায় স্বাক্ষর করে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় হঠাৎ তাকে দেন তালাকও। তালাকের কিছুদিন পর আবারও ওই নারীর সঙ্গে ‘সংসার’ শুরু করেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে পরে আবারও তিনি বিয়ে করতে বাধ্য হন ওই রোহিঙ্গা নারীকে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ থানার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তাদের ঘরে জন্ম নেয় একটি পুত্রসন্তান।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রচলিত আইনকানুন না মেনেই রোহিঙ্গা নারীকে বিয়ে করেন প্রবাসী দিদারুল ইসলাম। সেখানে ভুয়া ঠিকানা ও সনদ জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র বানিয়ে করা হয়েছে পাসপোর্টও। কমিশনের প্রতিবেদনের পর শিগগিরই মামলা করা হবে তার বিরুদ্ধে। গত ২৩ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর বরাবরে একটি অভিযোগ যায় এই কাতার প্রবাসীর বিরুদ্ধে।

বর্তমানে নগরীর কোতোয়ালী থানার জামালখান রোড এলাকায় থাকেন দিদারুল। জানা গেছে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর এলাকার বাসিন্দা এক নারী দিদারুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী। তার ওই সংসারে রয়েছে এক ছেলে ও তিন মেয়ে। অন্যদিকে নগরীর জামালখান রোডের সানমার স্প্রিং গার্ডেনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন দিদারুলের দ্বিতীয় স্ত্রী। ওই সংসারে রয়েছেন তিন ছেলে ও এক মেয়ে। আবার চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট ব্রিজ এলাকায় থাকেন তার তৃতীয় স্ত্রী। ওই ঘরে রয়েছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে।

এদিকে পটিয়া উপজেলার আমজুরহাট এলাকার বাসিন্দা এক নারী হলেন তার চতুর্থ স্ত্রী। তিনি জামালখান এলাকায় নিজস্ব ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। বোয়ালখালী এলাকার ২৮ বছর বয়সী এক নারী দিদারুলের পঞ্চম স্ত্রী। ওই নারীর কোনো সন্তান ছিল না। বিয়ের এক বছরের মাথায় ওই নারীকে তালাক দেন দিদারুল। মোহরানা বাবদ শুধু ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে বিদায় করেন ওই নারীকে।

অভিযোগে জানা গেছে, বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদণ্ডী এলাকার এক নারীর সঙ্গে অবৈধভাবে মেলামেশা করেন দিদারুল ইসলাম। একপর্যায়ে ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যান। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলেও পরে তাকেও বিয়ে করতে বাধ্য হন দিদার। তবে বিয়ের পরপরই ওই নারীর গর্ভের সন্তানটি নষ্ট করা হয়। তালিকার ছয় নম্বরে থাকা এই স্ত্রীর সঙ্গে প্রায় চার বছর সংসার করার পর তাকে তালাক দেন দিদারুল। তবে বিয়ের নামতায় সাত নম্বরে থাকা এক রোহিঙ্গা নারীকে পর পর দুবার বিয়ে করে তিনি ধরা পড়েন দুদকের জালে। দিদারুল ইসলামের মোবাইলে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার শ্যালক পরিচয়ে একজন বলেন, আপনার যা মন চায়, তাই লিখে দেন।

দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‌দিদারুলের বিয়ের কাবিননামায় তার স্ত্রীর ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে কক্সবাজার সদর থানার ১২ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ কলাতলী এলাকা। ওই নারীর বাবার নাম হিসেবে যার উল্লেখ রয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে ওই নামের ব্যক্তির সঙ্গে রোহিঙ্গা নারীটির কোনো সম্পর্কই নেই। অর্থের বিনিময়ে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করতে এই সম্পর্ক বানিয়েছেন দিদার। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসার পর তদন্ত করে কমিশন বরাবরে রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। কমিশনের সিদ্ধান্তের পর তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রজন্মনিউজ২৪/ফরিদ

পাঠকের মন্তব্য (০)

লগইন করুন



A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined index: category

Filename: blog/details.php

Line Number: 417

Backtrace:

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/blog/details.php
Line: 417
Function: _error_handler

File: /home/projonmonews24/public_html/application/views/template.php
Line: 199
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/application/controllers/Article.php
Line: 87
Function: view

File: /home/projonmonews24/public_html/index.php
Line: 315
Function: require_once

বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আরো সংবাদ














ব্রেকিং নিউজ